অসামান্য বক্তৃতায় হৃদয় জিতে নিলেন সেরা মহিলা ফুটবলার

সোমবার মিলানের লা স্কালা অপেরা হাউসের জমকাল অনুষ্ঠানকে কার্যত অন্য মাত্রায় নিয়ে গেলেন বিশ্বকাপ জয়ী যুক্তরাষ্ট্র দলের এই তারকা ফুটবলার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৫৪
Share:

ফিফা বর্ষসেরার ট্রফি হাতে মেয়েদের সেরা মেগান রাপিনো। এএফপি

ফিফার বর্ষসেরা মহিলা ফুটবলারের পুরস্কার হাতে নিয়ে মেগান রাপিনো এই বিশ্বকে সুন্দরতম করে তোলার ডাক দিলেন।

Advertisement

সোমবার মিলানের লা স্কালা অপেরা হাউসের জমকাল অনুষ্ঠানকে কার্যত অন্য মাত্রায় নিয়ে গেলেন বিশ্বকাপ জয়ী যুক্তরাষ্ট্র দলের এই তারকা ফুটবলার। তাঁর প্রতিবাদের ভাষায় কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেল বিশ্বসেরাদের তারার হাট। সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি বলে গেলেন, ম্যাঞ্চেস্টার সিটির ফরোয়ার্ড রাহিম স্টার্লিং, নাপোলির সেনেগালিজ ডিফেন্ডার কালিদৌ কৌলিবাসে এবং ইরানের সাহার খোদায়ারি তাঁকে কেন, কী ভাবে অনুপ্রাণিত করেন। রাপিনোর আবেদন, ফিফার এ হেন অনুষ্ঠানের মতো মঞ্চকেই যেন বিশ্বসেরারা বর্ণবিদ্বেষ ও নারী নির্যাতনের মতো অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন।

রাহিম আর কালিদৌ— হালফিলে দু’জনই ইউরোপের বিভিন্ন স্টেডিয়ামে বারবার বর্ণবিদ্বেষী বিদ্রুপের সামনে পড়ছেন। কিন্তু দু’জনের কেউই দমে যাননি। রাহিম সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ক্রমাগত বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। বারবার একই ভূমিকায় দেখা গিয়েছে কালিদৌকেও। এই সেনেগালিজ ডিফেন্ডার পরিষ্কার জানিয়েছেন, তিনি তাঁর ত্বকের রঙের জন্য গর্বিত।

Advertisement

ইরানের ২৯ বছরের তরুণী সাহার, পুরুষের বেশে ফুটবল ম্যাচ দেখতে এসে ধরা পড়ে যান। তেহরানে হিজাব না পরে প্রকাশ্যে হাজির হন। ইরানের বিচার ব্যবস্থা দোষী সাব্যস্ত করে এই মেয়েকে। প্রতিবাদে তিনি গায়ে গ্যাসোলিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যা করেন।

ফিফার অনুষ্ঠানের হাল্কা পরিবেশ রাপিনোর ভাষণে রীতিমতো ভাবগম্ভীর হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘‘এ’বছর আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে এমন কিছু কাহিনি যা আপনাদের মনে করাতে চাই। মাঠে নেমে ফুটবলটা অসাধারণ ভাবে খেলে যাচ্ছে রাহিম আর কালিদৌ। তবে সে জন্য নয়। যে ভাবে এ’বছর ওরা ন্যক্কারজনক বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, হয়তো বাকি জীবনেও সেটাই করবে, তা আমাকে মানসিক ভাবে আরও শক্তিশালী করেছে।’’ ইরানের তরুণী সাহার প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ইরানের ওই মেয়েটা ফুটবল ম্যাচ দেখতে পায়নি বলে শেষ পর্যন্ত আগুনে পুড়ে নিজেকে শেষ করে দিল! ওর লড়াইও আমার অনুপ্রেরণা। একই সঙ্গে বলব কলিন মার্টিন ও অসংখ্য সমকামী ফুটবলারদের কথা। যারা এই খেলাটার জন্য প্রত্যেক দিন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এই সব সত্যি ঘটনাই আমাকে উদ্বুদ্ধ করে প্রতিটি মুহূর্তে।’’ রাপিনোর আরও কথা, ‘‘একই সঙ্গে অবশ্য ওদের কথা ভাবতে বসলে মনটাও খারাপ হয়ে যায়। কখনও কখনও ভীষণ হতাশ লাগে।’’

এখানেই থামেননি রাপিনো। আরও বলেছেন, ‘‘কিন্তু এই লড়াই কেন রাহিম, কালিদৌরা একা লড়বে? আমি চাই এই বিশ্বে অনেক অর্থপূর্ণ পরিবর্তন ঘটুক। সব চেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত হব যদি সবাই মিলে এ সবের প্রতিবাদ করেন। শুধু রাহিমরা নয়। মনে রাখবেন, আমরা জনপ্রিয়তম খেলা ফুটবলটা খেলি। তাই এই পৃথিবীকে বদলে ফেলার সব চেয়ে বড় সুযোগ রয়েছে আমাদের কাছেই। হৃদয় থেকে সবার কাছে আমার আবেদন, আসুন সবাই মিলে কিছু অন্তত করি। আমাদের হাতে কিন্তু অসীম ক্ষমতা রয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement