ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে ইয়ো ইয়ো টেস্টের কড়াকড়ি থাকলে হয়তো শুক্রবার আউট হতেই হত না পুজারাকে। শরীর যে বাধা হতে পারে না তা প্রমাণ করে দিলেন ক্যারিবিয়ান দলের নবাগত অলরাউন্ডার রাহকিম কর্নওয়াল। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি।
২৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হল রাহকিম কর্নওয়ালের। ডান হাতি এই অফ স্পিনার ব্যাট হাতেও স্বচ্ছন্দ। উচ্চতা ছয় ফুট ৪ ইঞ্চি। ওজন ১৪০ কেজি! বিশাল চেহারা জন্য এই ক্রিকেটারকে ডাকা হয় ‘মাউন্টেন ম্যান’ নামে। বিপুল ওজন নিয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর আত্মপ্রকাশ চমকে দিয়েছে ক্রিকেট বিশ্বকে।
যদিও তিনি প্রথম নন, এর আগে দেখা গিয়েছিল বারমুডার ৩৬ বছরের স্পিনার ডাওয়েন লেভেরককে। তাঁর ওজন ছিল ১২২ কেজি। ২০০৭ এর বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া বারমুডা দলের সদস্য ছিলেন তিনি। সে বার ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে একটি ক্যাচ ও একটি উইকেট নেন তিনি। যদিও দশ ওভারে দিয়েছিলেন ৯৬ রান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩২ ম্যাচে ৩৪ উইকেট আছে তাঁর।
রাহকিম কর্নওয়ালের জন্ম অ্যান্টিগায়। এটি লিওয়ার্ড দ্বীপে অবস্থিত। এই দ্বীপ থেকেই কর্নওয়ালের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে খেলেছিলেন ভিভিয়ান রিচার্ডস, কার্টলি অ্যামব্রোজ, অ্যান্ডি রবার্টস, রিচি রিচার্ডসনের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা। যদিও ২০১২ সালে কিয়েরন পাওয়েলের পর এই দ্বীপ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে প্রথম খেললেন কর্নওয়াল।
২০১১ সালে ১৮ বছর বয়সে লিওয়ার্ড দ্বীপের হয়ে ত্রিনিদাদ টোব্যাগোর বিরুদ্ধে ক্রিকেটে প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে কর্নওয়ালের। সেই ম্যাচে উইকেট না পেলেও চার ওভারে দিয়েছিলেন মাত্র ২১ রান। ব্যাট হাতে অবশ্য রান পাননি। হেরেও যায় তাঁর দল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের হয়ে ২০১৫ সালে প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামেন তিনি। আর সেই আন্তর্জাতিক দল হচ্ছে ভারত। পূজারা, কোহালি, রাহানে-সহ পাঁচ উইকেট নিয়ে নজর কাড়েন তিনি।
রাহকিমের ঘরোয়া ক্রিকেটে নজর কাড়া পারফরমান্স তাঁকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫৫ ম্যাচে ২৬০ উইকেট রয়েছে তাঁর। এক ম্যাচে দশের বেশি উইকেট নিয়েছেন দু’বার। ব্যাট হাতে রয়েছে একটি শতরানও। লিস্ট এ-তে তিনি ৪৮ ম্যাচে করেছেন চারটি শতরান। নিয়েছেন ৫৬টি উইকেট।
বড় শরীর নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই রানিং বিট-উইন দ্য উইকেটসে খুব স্বচ্ছন্দ নন তিনি। তাই জোর দেন বড় শট খেলার। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে তাঁর মারা লম্বা ছয়গুলো মনে করিয়ে দেয় আরেক ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার কায়রন পোলার্ডকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘরোয়া ক্রিকেটে এক বিখ্যাত টুর্নামেন্ট সুপার৫০। এ বারের সেই টুর্নামেন্টেতাঁর গড় ৫০-এর ওপর, স্ট্রাইক রেট ১১৭। সাত ম্যাচে নিয়েছেন দশ উইকেট। রান করেছেন ২৫২। যা নজর কেড়ে নিয়েছে ক্যারিবিয়ান নির্বাচকদের।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক ইনিংসে তাঁর সেরা বোলিং ১০৮ রান দিয়ে আট উইকেট। এক ইনিংসে ১৭ বার নিয়েছেন পাঁচ বা তার বেশিউইকেট। লিস্ট এ-তে সেরা বোলিং ২১ রানে ৪ উইকেট।
শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় টেস্টে ইতিমধ্যেই তিনি তুলে নিয়েছেন পূজারার উইকেট। স্লিপে দাঁড়িয়ে নিয়েছেন দুই ওপেনার রাহুল ও মায়াঙ্কের ক্যাচ। ম্যাচ যত গড়াবে তত ভাঙবে পিচ। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরও ভয়ঙ্কর হতে পারেন কিনা কর্নওয়াল, সেই দিকেই নজর ক্রিকেট বিশ্বের।