বিশ্ব ক্রিকেটে এই মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রে বেন স্টোকস। অনেকেই মনে করছেন, তিনি বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। নয়ের দশকের শুরুর দিকে বিশ্ব ক্রিকেট মাতিয়ে রেখেছিলেন আরেক অলরাউন্ডার, তিনি ক্রিস কেয়ার্নস। কেমন ছিল তাঁর জীবন, কী করছেন এখন তিনি? দেখে নেওয়া যাক।
ক্রিস কেয়ার্নস নামটা শুনলেই ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের মনে পড়ে যায় ২০০০ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফাইনাল। যে ম্যাচের শুরুতে সৌরভের সেঞ্চুরি আশা জাগিয়েছিল জয়ের। মনে হয়েছিল সৌরভের হাতেই উঠতে চলেছে ট্রফিটা। কিন্তু সৌরভ ২২০ রানের মাথায় ফিরে যেতেই নেমে এল বিপর্যয়। যুবরাজ, কাম্বলিরা যোগ করলেন মাত্র ৪৪ রান।কেয়ার্নসের কৃপণ বোলিং তার অন্যতম কারণ।
এরপর ব্যাট হাতে দেখা গেল কেয়ার্নসের দাপট। ১১৩ বলে ১০২ রানের ইনিংস খেলে তিনি ম্লান করে দিলেন সৌরভ-সচিনের ১৪১ রানের পার্টনারশিপ। কিউয়ি অলরাউন্ডারের দাপটে নিউজিল্যান্ড পেল তাঁদের প্রথম এবং একমাত্র আইসিসি ট্রফি। তিনি বুঝিয়ে দিলেন, কেন তাঁকে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার বলা হত।
ক্রিকেট বিশ্বে এক বর্ণময় চরিত্র ছিলেন এই কিউয়ি অলরাউন্ডার। তাঁর কোঁকরা চুল, শক্তিশালী চেহারা ঝড় তুলেছিল মহিলা ফ্যানেদের মনে। ঝড় তুলেছিলেন তিনি ক্রিকেট মাঠেও।
তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারের সায়াহ্নে ২০০৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একটি টেস্টে দেখা যায় কেয়ার্নস ঝড়। প্রথম ইনিংসে ২৯৬ সালে কালিসরা শেষ হয়ে যান। এরপর স্কট স্টাইরিস এবং ক্রিস কেয়ার্নসের ব্যাটিং কিউয়িদের রানের পাহাড়ে তুলে দেয়। ১৭১ বলে ১৫৮ রান করেন কেয়ার্নস। টেস্ট ক্রিকেটে সেটাই তাঁর সর্বোচ্চ রান। বল হাতে সেই ম্যাচে চারটি উইকেটও নেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে জীবনের শেষ টেস্ট খেলেন ২০০৪ সালেই। সেই ম্যাচে নয় উইকেট নেন কেয়ার্নস। যদিও দলকে জেতাতে ব্যর্থ হন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষ বার কেয়ার্নসকে দেখা যায় ২০০৬ সালে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি২০ খেলতে নামেন তিনি। যদিও সাফল্য পাননি। দু’রান করেই আউট হয়ে যান, বল হাতেও উইকেট পাননি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৮২৭৩ রান রয়েছে ক্রিস কেয়ার্নসের। রয়েছে ৪২০টি উইকেটও। ১৭ বছরের ক্রিকেট কেরিয়ারে কুড়িয়েছেন সাফল্যের বহু মনি মানিক্য। তবে রয়েছে কিছু কালির দাগও।
২০১০ সালে প্রাক্তন আইপিএল কর্তা ললিত মোদী টুইট করে দাবি করেন যে, ২০০৮ সালে ক্রিস কেয়ার্নস ম্যাচ গড়াপেটা করেছেন। কেয়ার্নস ললিত মোদীর বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে জিতে নেন বিশাল অঙ্কের টাকা।
প্রাক্তন কিউই ক্রিকেটার লুই ভিনসেন্ট এবং ব্রেন্ডন ম্যাকালাম জানান, তাঁদেরওগড়াপেটার প্রস্তাব দেন ক্রিস। পরবর্তী সময় ভিনসেন্টের নাম জড়িয়ে পরে ম্যাচ ফিক্সিং কাণ্ডে। তাঁকে সারা জীবনের মতো ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত করা হয়।
২০১৩ সালে ক্রিসের নাম আবার জড়ায় ম্যাচ ফিক্সিং-এ। ভারতে আইসিএলে চণ্ডীগড় লায়ন্সের হয়ে খেলার সময় ম্যাচ ফিক্সিং-এর অভিযোগ ওঠে তাঁর নামে। সেই মামলা এখনও চলছে।
এই মামলার জন্যই ধীরে ধীরে সব হারাতে থাকেন কিউয়ি অলরাউন্ডার। নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। সংসার চালাতে এখন তিনি নিউজিল্যান্ডে বাসস্ট্যান্ড পরিষ্কার করার কাজ করেন। তাঁর আয় ঘণ্টায় ১৭ ডলার।