প্রিয়া পুনিয়া। ছোট্ট একটা নাম। এই নামই আজ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্ব। ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটে ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই নামটা।
এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ বিশ্বকাপ খেলছেন তিনি। উচ্চারণে নামটা ছোট শোনালেও, এর কয়েকশো গুণ বড় তাঁর মনের জোর। সেই মনের জোরেই রাজস্থানের মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে প্রিয়া আজ ক্রিকেটের বিশ্ব মঞ্চে।
১৯৯৬ সালের ৬ অগস্ট রাজস্থানের নিতান্ত মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম প্রিয়ার। বাবা সুরেন্দ্র পুনিয়া ভারতীয় সার্ভে ডিপার্টমেন্টে হেড ক্লার্ক ছিলেন। মা ব্যস্ত থাকতেন ছেলে-মেয়ে, সংসার নিয়ে।
২৪ বছরের প্রিয়া দিল্লির জেসাস অ্যান্ড মেরি কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। ছোট থেকেই কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি আসক্তি ছিল না প্রিয়ার। বরং ব্যাডমিন্টন খেলতে ভালবাসতেন তিনি।
পরে মাত্র ন’বছর বয়সে রাজস্থানের সুরানা অ্যাকাডেমিতে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য যোগ দেন। কিন্তু বিষয়টা এতটাও সহজ ছিল না।
প্রিয়ার বাবা তখন সবে বদলি হয়ে জয়পুর এসেছেন। ক্রিকেটের প্রতি মেয়ের তীব্র ভালবাসা দেখে মেয়েকে খেলাটা শেখানোর কথা স্থির করে ফেলেন। কিন্তু জয়পুরের একটা ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে চরম হেনস্থার মুখে পড়তে হয় তাঁদের।
প্রিয়াকে দেখে কোচের ব্যঙ্গাত্মক প্রশ্ন ছিল, মেয়ে হয়ে ক্রিকেটের স্বপ্ন! এই কথাটাই প্রচণ্ড চেপে বসেছিল প্রিয়ার মনে। আরও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ করে তুলেছিল তাঁর বাবাকেও।
সুরেন্দ্রও একসময় ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলেন। মেয়েকে তিনি নিজেই প্রশিক্ষণ দেবেন স্থির করে ফেলেন। জমি বেচে, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ করে জয়পুরেই ২২ লাখ টাকা দিয়ে একটি দেড় বিঘা জমি কিনে ফেলেন তিনি।
সেই জমিতে মেয়ের জন্য ক্রিকেট পিচ বানান সুরেন্দ্র। ১৫ হাজার টাকা খরচ করে ওই পিচ বানিয়েছিলেন তিনি। প্রথমে সেখানে নিজেই মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। পরে প্রিয়া রাজস্থান ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন।
পরে দিল্লিতে রাজকুমার শর্মার অধীনে সাত বছর প্রশিক্ষণ নেন। বিরাট কোহালিরও প্রশিক্ষক ছিলেন রাজকুমার শর্মা। ২০১৬ সালে বেঙ্গালুরুতে প্রথম ঘরোয়া ক্রিকেটে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে দিল্লি মহিলা দলে সুযোগ পান প্রিয়া।
অনেকেই হয়তো জানেন না, অনেক আগেই প্রিয়া জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর খেলা দেখে বিসিসিআইয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্তা তাঁকে জাতীয় দলে খেলতে সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
কিন্তু প্রিয়া নির্দ্বিধায় সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। তাঁর সাফ কথা ছিল, কারও সুপারিশ নিয়ে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার মধ্যে কোনও আনন্দ নেই।
যোগ্যতার ভিত্তিতেই ২০১৮ সালে ভারতীয় মহিলা দলে নাম লেখান প্রিয়া। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলেন তিনি। ২০১৯ সালে ওম্যান’স ওয়ান ডে ইন্টারন্যাশনাল স্কোয়াডেও ছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলেন তিনি।
আর এই মুহূর্তে মহিলা বিশ্বকাপ জেতার দৌড়ে দলকে প্রতিনিধিত্ব করছেন প্রিয়া পুনিয়া। প্রথম বার টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা ভারতীয় দল তাঁর কাছ থেকে একটা দারুন পারফরম্যান্স চাইছে।