মুম্বই ক্রিকেটের এক উল্লেখযোগ্য নাম ছিল অমল মুজুমদার। সদ্য দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ব্যাটিং কোচ নিযুক্ত হলেন তিনি। সেই নিয়ে বিস্তর আলোচনা এবং চাঞ্চল্য।
অমল মুজুমদারের জন্ম মুম্বইতে ১৯৭৪ সালে। সারদাশ্রম বিদ্যামন্দিরের ছাত্র ছিলেন তিনি। সেই স্কুল যেখানে ক্রিকেট কোচ ছিলেন রমাকান্ত আচরেকর। অমলের দুই সহপাঠী ছিলেন ঝাঁকড়া চুলের সচিন তেন্ডুলকর এবং তাঁর প্রিয়বন্ধু বিনোদ কাম্বলি।
ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমী মাত্রেই জানেন, ১৯৮৮ সালে এই বিদ্যামন্দিরের হয়ে সচিন ও কাম্বলির ৬৬৪ রানের সেই ঐতিহাসিক পার্টনারশিপ। কিন্তু অনেকেই জানেন না, সচিনের পরেই পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নামার কথা ছিল অমল মুজুমদারের। সারাদিন প্যাড পরে বসে থাকলেও মাঠে নামার সুযোগ আসেনি।
এই সুযোগ না পাওয়ার কাহিনি সারা জীবন ধরেই চলেছে অমলের সঙ্গে। মুম্বই, অসম এবং অন্ধ্রপ্রদেশের হয়ে রঞ্জিতে বিপুল রান করেও সুযোগ মেলেনি জাতীয় দলে খেলার। রঞ্জির ইতিহাসে তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। ১৭১টি ম্যাচে ১১ হাজার ১৬৭ রান করেছিলেন, গড় ছিল ৪৮.১৩।
সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচেই। রঞ্জির প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে হরিয়ানার বিরুদ্ধে খেলতে নেমে করেছিলেন ২৬০ রান। সুযোগ পেয়েছিলেন ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও।
প্রতিভাবান এই ক্রিকেটারের নাম ভারতীয় দলে দেখতে না পাওয়ার জন্য সময়টাকেই দায়ী করেন অনেকে। সচিন, কাম্বলির সঙ্গে এক স্কুলে পড়ার পর অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ড্রেসিংরুম ভাগ করে নেন সৌরভ, দ্রাবিড় ও লক্ষ্মণের সঙ্গে।
সেই দলে টেস্টে ইংল্যান্ড ‘এ’-র হয়ে দারুণ খেলেন দ্রাবিড় আর একদিনের সিরিজে নজর কাড়েন সৌরভ। আবার ঢাকা পড়ে যান অমল মুজুমদার। রবি শাস্ত্রী ও সিধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলে মিডল অর্ডারে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। কিন্তু দলীপ ট্রফিতে লক্ষ্মণ, দ্রাবিড় আর ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে সৌরভ নিজেদের জায়গা পাকা করে নেন।
নিয়মিত রঞ্জিতে রান করে যাওয়া অমল মুজুমদার, ২০ বছর ধরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটই খেলে যান। তাঁর ৩০টি শতরান, আটটি রঞ্জি ট্রফি জয় প্রধান নির্বাচকদের দরজায় কড়া নাড়লেও তা খুলতে পারেনি। ভারতীয় ক্রিকেটের উপেক্ষিত নায়ক হয়েই থাকতে হয়েছে তাঁকে।
সচিন, কাম্বলি, সৌরভ, দ্রাবিড়, লক্ষ্মণদের ভিড়ে হারিয়ে যেতে থাকেন অমল। ২০০৯ সালে বাদ পড়েন মুম্বই দল থেকে। চলে যান অসমে, তারপর অন্ধ্র। সারা জীবন যেন প্যাড-গ্লাভস পরে বসে রইলেন কখন ডাক আসবে। কিন্তু সচিনদের ব্যাট থামেনি, ডাকও আসেনি অমলের।
ভারতের ব্যাটিং কোচ হওয়ার জন্য আবেদন করলেও রয়ে গিয়েছেন উপেক্ষিতই। ক্রিকেটার হিসেবে না হলেও ৪৪ বছরের অমলকে প্রথম আন্তর্জাতিক মঞ্চে সুযোগ করে দিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাঁদের ব্যাটিং কোচ হিসেবে ডেকে নিল অমলকে। বুমরাদের সামলাতে ফ্যাফদের সাহায্য করবেন তিনি।
ভারতীয় ক্রিকেটকে হাতের তালুর মতো চেনা অমল কিন্তু চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারেন বিরাটদের জন্য। এর আগে নেদারল্যান্ডসের হয়ে ব্যাটিং পরামর্শদাতার কাজ করলেও বড় মঞ্চে এই প্রথম আবির্ভাব অমলের। ক্রিকেট জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসে নিজেকে মেলে ধরতে চাইবেন তিনি।