সন্তুষ্ট: মায়াঙ্কের মানসিকতা দেখে মুগ্ধ বেঙ্গসরকর। ফাইল চিত্র
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবন শুরু হয়েছিল মায়াঙ্ক আগরওয়ালের। এমসিজি-তে হনুমা বিহারীর সঙ্গে ওপেন করতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সেই ইনিংসে ৭৬ রান করে দলের ওপেনার-সমস্যা মিটিয়েছিলেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যদিও প্রত্যাশা অনুযায়ী রান করতে দেখা যায়নি মায়াঙ্ককে। কিন্তু ঘরের মাঠে ফিরতেই এক নতুন মায়াঙ্ককে চিনল ক্রিকেটবিশ্ব। প্রথম টেস্টেই দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাডা, ভার্নন ফিল্যান্ডারের বিরুদ্ধে ২১৫ রান করে দলে স্থায়ী জায়গা করে নেন তিনি। তার এক মাসের মধ্যেই শুক্রবার ইনদওরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৩৩০ বলে ২৪৩ রানের ধৈর্যশীল ইনিংস উপহার দিয়ে গেলেন। মায়াঙ্কের এই পরিণত ইনিংস দেখে মুগ্ধ প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। দিলীপ বেঙ্গসরকর তো জানিয়েই দিলেন, এই আগ্রাসী মনোভাবই ভারতের অন্যতম সফল ওপেনার করে তুলতে পারে মায়াঙ্ককে।
শুক্রবার আনন্দবাজারকে ফোনে বেঙ্গসরকর বলছিলেন, ‘‘মায়াঙ্কের মধ্যে রানের খিদে লক্ষ্য করেছি। উইকেট ছুড়ে আসার প্রবণতা নেই। অবশ্যই ও খুব আগ্রাসী। কিন্তু শট বাছাইয়ে কোনও গাফিলতি নেই।’’ যোগ করেন, ‘‘এক জন ওপেনারই দলের ভিত তৈরি করে। মায়াঙ্ক সেই কাজ সহজেই করছে। দলের ওপেনার যখন নতুন বলের পালিশ নষ্ট করার সঙ্গেই রান বাড়ানোর কাজ করে, তখন দলও উপকৃত হয়।’’
আরও পড়ুন: শেষ পাঁচ ইনিংসে দুটো ডাবল সেঞ্চুরি! স্বপ্নের ফর্মে ময়াঙ্ক
ভারতের মাটিতে ওপেনারদের সে রকম হয়তো পরীক্ষা দিতে হয় না। কিন্তু বিদেশে সেই কাজটা সহজে করা যায় না। বেঙ্গসরকর মনে করেন, মায়াঙ্ক যদি এই ছন্দে এগোতে থাকেন, তা হলে বিদেশেও ব্যর্থতার আশঙ্কা থেকে বেরিয়ে আসবে ভারত। বললেন, ‘‘ওর টেকনিক আঁটসাঁট। নতুন বলের বিরুদ্ধে শরীরের অনেক কাছে ডিফেন্ড করে। যতই শরীরের বাইরের বল খেলতে যাবে, তত আউট হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।’’
ভারতীয় ওপেনারকে ছয় মেরে ডাবল সেঞ্চুরি করতে দেখে তৃপ্ত নির্বাচক কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান। বলছিলেন, ‘‘এই মনোভাবই বুঝিয়ে দিয়েছে ও কতটা ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে ভালবাসে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কিন্তু রান করা সহজ নয়। কারণ, তুলনামূলক সহজ বিপক্ষের বিরুদ্ধে বড় শট খেলার প্রবণতায় আউট হওয়ার সুযোগও বেশি তৈরি হয়। মায়াঙ্ক কিন্তু সেই ভুল করেনি।’’
প্রাক্তন ওপেনার ওয়াসিম জাফরও মায়াঙ্কের সাফল্যে মোহিত। তাঁর কথায়, ‘‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবন অসাধারণ শুরু করেছে। অস্ট্রেলিয়ায় কঠিন পরিস্থিতিতে ওর ৭৬ রানের ইনিংসেই দৃঢ় চরিত্রের পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল।’’ আরও বলছিলেন, ‘‘প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দীর্ঘ দিন ভাল খেলার পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পেয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার একটা দাম নিশ্চয়ই রয়েছে।’’ জাফরও দীর্ঘ দিন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। দেশের হয়ে ৩১টি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি বলছিলেন, ‘‘কর্নাটকের ঘরোয়া ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়ার আগে অনেক ব্যর্থতার খেসারত দিতে হয়েছিল ওকে। তখনই হয়তো ও বুঝে গিয়েছে, সুযোগ হাতছাড়ার ফল কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। টেকনিকেও অনেক পরিবর্তন করেছে মায়াঙ্ক।’’
এ দিন ম্যাচের শেষে রোহিত শর্মা এবং চেতেশ্বর পুজারা প্রস্তুতি নিলেন গোলাপি বলে খেলার।