দুরন্ত ইনিংস কোহালির। ছবি— এপি।
কোহালির ‘বিরাট’ ইনিংস। অধিনায়কের দুরন্ত ইনিংসের জন্য প্রথম টি টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে নিল ভারত। শেষ পর্যন্ত কোহালি অপরাজিত থেকে যান (৫০ বলে, ৬টি চার ও ৬টি ছক্কা) ৯৪ রানে। তাঁর ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের জন্যই আট বল বাকি থাকতে পাহাড় ডিঙিয়ে ফেলল ‘টিম ইন্ডিয়া’। কোহালির জন্যই শুক্রবার নজির গড়ল ভারত। এর আগে টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২০৭ রান তাড়া করে ভারত জেতেনি কখনও। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২০৬ রান তাড়া করে জিতেছিল ভারত। এ দিন অতীতের রেকর্ড ভাঙল ‘টিম ইন্ডিয়া’।
টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২০৭ পাহাড়প্রমাণ রান। পরে ব্যাট করতে নেমে কোনও ওভারে রান কম হলেই বেড়ে যায় আস্কিং রেট। তবুও ভারত বিচলিত হয়নি। কারণ তাঁদের দলে রয়েছেন ‘চেজমাস্টার’ কোহালি। শুরুর দিকে ঠিকঠাক টাইমিং হচ্ছিল না। নিজের উপরেই রেগে যাচ্ছিলেন ভারত অধিনায়ক। ম্যাচ যত গড়াল কোহালি ফিরে পেলেন তাঁর ছন্দ। অবিশ্বাস্য কিছু শট খেললেন। কব্জির মোচড়ে বল ফেললেন গ্যালারিতে।
ক্যারিবিয়ানরা তাঁর মনঃসংযোগ নষ্ট করারও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, ভারত অধিনায়ক যে অন্য ধাতুতে গড়া। পোলার্ড-উইলিয়ামসদের ফাঁদে পা দেননি। উল্টে তাঁদের গ্যালারিতে ছুড়ে ফেলেন। খেলার শেষে ব্যাট তুলে দৃপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকলেন কোহালি। বুঝিয়ে দিলেন তিনিই ‘রাজা’। পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম ২০ বলে ২০ রান করেন কোহালি। পরের ৩০ বলে তিনি করেন ৭৪ রান।
আরও পড়ুন: ঋষভকে চাপ দেবেন না, বলছেন বিরাট, একেবারে বিপরীত মত সৌরভের
শুক্রবার টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন কোহালি। রান তাড়া করতে দক্ষ ভারত। সেই কারণেই টস জিতে ক্যারিবিয়ানদের ব্যাট করতে পাঠানো হয়েছিল। শুরুতেই ধাক্কা দিয়েছিলেন দীপক চহার। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্বপ্নের স্পেল করেছিলেন তিনি। সাত রানে ছ’টি উইকেট নিয়ে হারা ম্যাচ জিতিয়েছিলেন ভারতকে। সেই চহার এদিন শুরুটা দারুণ করেছিলেন। দ্বিতীয় বলেই লেন্ডল সিমন্সকে (২) ফেরান চহার।
শুরুতেই উইকেট চলে যাওয়ার পরেও চাপ অনুভব করেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা। পাল্টা আক্রমণের রাস্তা নেন তাঁরা। শুরুটা করেন লিউইস। ৪০ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে ফেরেন তিনি। রবীন্দ্র জাডেজার বলে স্টাম্পড হন কিং (৩১)। এর পরে হেটমায়ার ও পোলার্ড ক্যারিবিয়ান ইনিংসকে টেনে নিয়ে যান। দু’ জনেই ভারতীয় বোলারদের যথেচ্ছ মারেন। হেটমায়ার ৪১ বলে ৫৬ রান করেন। তাঁর ইনিংসে সাজানো ছিল ২টি বাউন্ডারি ও ৪টি ওভার বাউন্ডারি। অন্যদিকে পোলার্ড ১৯ বলে দ্রুতলয়ে ৩৭ রান করেন। একটি চার ও বিশাল চারটি ছক্কা হাঁকান পোলার্ড। শেষের দিকে হোল্ডার (৯ বলে ২৪ রান) ও রামদিন (৭ বলে ১১ রান) জ্বলে ওঠায় ২০ ওভারের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে ৫ উইকেটে ২০৭ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে রোহিত শর্মা (৮) দ্রুত ফিরে যান। ভারতের ইনিংস গোছানোর কাজ করেন কোহালি ও লোকেশ রাহুল। ভারতের ভিত গড়ে দেন রাহুলই (৬২)। তখন কোহালি ঠিকঠাক টাইমিং করতে পারছিলেন না। রাহুলকেই স্ট্রাইক দিচ্ছিলেন তিনি। রাহুল ফিরতেই ‘গিয়ার’ পরিবর্তন করলেন কোহালি।
আরও পড়ুন: নিজে ফর্মে নেই, দলে ডিন্ডা বিতর্ক, রঞ্জিতে সফল হবে বাংলা? অধিনায়ক অভিমন্যু বলছেন...
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বল গড়ানোর আগে ঋষভ পন্থের উদ্দেশে ভারত অধিনায়কের পরামর্শ ছিল, ‘‘বল দেখে মারো।’’ পোলার্ডদের বিরুদ্ধে প্রথম বলটাই ছক্কা হাঁকান পন্থ। কিন্তু, যে সময়ে তাঁকে দরকার ছিল, সেই সময়ে ভুল শট খেলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন পন্থ। পোলার্ড শরীর ছুড়ে দুরন্ত ক্যাচ ধরলেন শ্রেয়াস আয়ারের। তবুও কোহালিকে থামানো সম্ভব হয়নি। শেষ ২ ওভারে জেতার জন্য ভারতের দরকার ছিল ১৫ রান। উইলিয়ামসের চার বলেই কোহালি তুলে নেন ১৬ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০৭-৫(২০ ওভার), ভারত ২০৯-৪(১৮.৪ ওভারে)