আক্রমণাত্মক মুশফিকুর। রবিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
প্রথমে ব্যাট করে নিজেদেরকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে চেয়েছিল ভারত। টস হারায় বাংলাদেশ সেই চ্যালেঞ্জই দিল। যা নিতে পারল না টিম ইন্ডিয়া। রবিবার নয়াদিল্লিতে ছয় উইকেট হারিয়ে ভারত তুলেছিল ১৪৮ রান। ১৪৯ রানের জয়ের লক্ষ্যে তিন বল বাকি থাকতে পৌঁছে গেল বাংলাদেশ। জয় এল সাত উইকেটে। একইসঙ্গে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ এগিয়ে গেল মাহমুদুল্লাহর দল। বৃহস্পতিবার ও রবিবার সিরিজের শেষ দুই টি-টোয়েন্টিতে এখন জিততেই হবে রোহিত শর্মার দলকে।
কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে ভারতকে এই প্রথমবার হারাল বাংলাদেশ। শাকিব আল হাসান-তামিম ইকবালদের অনুপস্থিতিতে সেই জয়ের নায়ক হলেন মুশফিকুর রহিম। মাহমুদুল্লাহ ছয় মেরে ম্যাচ শেষ করলেও মুশফিকুরের অপরাজিত ৬০ রানই তফাত গড়ে দিল। যা এল ৪৩ বলে, আটটি চার ও একটি ছয়ের সাহায্যে।
রান তাড়ার শুরুতেই ওপেনার লিটন দাসকে (৭) হারিয়েছিল বাংলাদেশ। দীপক চাহার প্রথম ওভারেই ফিরিয়েছিলেন তাঁকে। তারপর দ্বিতীয় উইকেটে ৪৬ রান যোগ করেন অভিষেককারী মহম্মদ নঈম ও তিনে নামা সৌম্য সরকার। নঈমকে (২৮ বলে ২৬) ফেরান লেগস্পিনার যুজভেন্দ্র চহাল। আরও উইকেট প্রাপ্য ছিল তাঁর। কিন্তু রিভিউ নেওয়ার ক্ষেত্রে মুন্সীয়ানা দেখাতে পারেনি ভারত। চহালের বলে দশম ওভারে রিভিউ না নেওয়ায় এলবিডব্লিউ হওয়ার থেকে বেঁচে যান মুশফিকুর রহিম। তখন তিনি ব্যাট করছিলেন ৬ রানে।
আরও পড়ুন: শিবমের অভিষেক, দেখে নিন ভারতের প্রথম এগারো
আরও পড়ুন: পরবর্তী যুবরাজ! শিবম দুবের এই প্র্যাকটিসের ভিডিয়োয় উচ্ছ্বসিত ক্রিকেটপ্রেমীরা
আর এটাই ভোগাল। তৃতীয় উইকেটে সৌম্য সরকারের (৩৫ বলে ৩৯) সঙ্গে নয় ওভারে ৫৭ রান যোগ করলেন মুশফিকুর। শেষ পাঁচ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৫০ রান। শেষ তিন ওভারে দরকার ছিল ৩৫ রান। কিন্তু মুশফিকুর ফের পেলেন জীবন। চহালের বলে তাঁর সহজ ক্যাচ ফেললেন ক্রুণাল পান্ড্য। তখন মুশফিকুর খেলছেন ৩৮ রানে। শেষ দুই ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ২২ রান। ওই ওভারেই খলিল আহমেদকে টানা চার বার বাউন্ডারিতে পাঠালেন মুশফিকুর। ৪১ বলে পৌঁছেও গেলেন হাফ-সেঞ্চুরিতে। শেষ ছয় বলে বাংলাদেশের দরকার ছিল চার রান। মাহমুদুল্লাহ (সাত বলে অপরাজিত ১৫) অনায়াসে জিতিয়ে ফিরলেন মুশফিকুরের সঙ্গে।
উইকেটে বল থমকে আসছিল। ঘুরছিলও। নিশানায় অভ্রান্ত ছিলেন বাংলাদেশের বোলাররাও। ফলে স্ট্রোক নেওয়া খুব একটা সহজ ছিল না। আর তাই টিম ইন্ডিয়ার ইনিংস এগোল থমকে থমকেই। ৫০ এল ৭.৪ ওভারে। ১০০ এল ১৫.৪ ওভারে। ফলে ইনিংস কখনই গতি পেল না।। সর্বাধিক ৪১ করলেন বাঁ-হাতি ওপেনার শিখর ধবন। কিন্তু তা এল ৪২ বলে। এই ফরম্যাটে ওপেনারের এত বল খেলে একশোরও কম স্ট্রাইকরেট কিন্তু উদ্বেগেরই।
প্রথম ওভারেই অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে (পাঁচ বলে ৯) হারিয়েছিল ভারত। তার পর লোকেশ লাহুল (১৭ বলে ১৫) ও শ্রেয়স আয়ার (১৩ বলে ২২)— দু’জনকেই ফেরালেন লেগস্পিনার আনিমুল ইসলাম। কেরিয়ারের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেই নজর কাড়লেন বাংলাদেশের এই রিস্টস্পিনার। ধবন রান আউট হওয়ার পরই ফিরলেন অভিষেককারী শিবম দুবে (চার বলে ১)। উইকেটের মন্থরতায় অফস্পিনার আফিফ হোসেনকে ফিরতি ক্যাচ দিলেন তিনি। ১৯তম ওভারে ফিরলেন ঋষভ পন্থ (২৬ বলে ২৭)। ক্রুণাল পান্ড্য (আট বলে ১৫) ও ওয়াশিংটন সুন্দরের (পাঁচ বলে ১৪) জন্য ১৪৮ রানে পৌঁছল ভারত। শেষ ওভারেই ১৬ রান তুললেন দু’জনে। ঋষভের আউটের পর ১০ বলে উঠল ২৬। সৌজন্যে ক্রুণাল-সুন্দর।
সব জল্পনা আর চর্চা থামিয়ে রবিবার ঠিক সময়েই শুরু হয়েছিল নয়াদিল্লিতে ভারত-বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি। বায়ুদূষণ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে প্রচুর আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু এদিন অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বাইশ গজেই ফোকাস থাকল সব মহলের। দৃশ্যমানতা বেশ ভালই থাকল।
এদিন মুম্বইয়ের অলরাউন্ডার শিবম দুবে অভিষেক করলেন ভারতের হয়ে। তাঁর হাতে টুপি তুলে দিলেন প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রী। বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক করলেন মহম্মদ নঈম। বিরাট কোহালির অনুপস্থিতিতে অধিনায়ক রোহিত শর্মা কিন্তু টস জিততে পারলেন না। তবে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ম্যাচের প্রথম বলেই শাফিউল ইসলামকে বাউন্ডারি মারলেন তিনি। পঞ্চম বলেও কভারে মারলেন বাউন্ডারি। কিন্তু প্রথম ওভারের ষষ্ঠ বলেই এলবিডব্লিউ হলেন তিনি। রিভিউ নিয়েও বাঁচলেন না রোহিত। আম্পায়ার্স কলের জন্য ফিরতেই হল তাঁকে।
সঞ্জু স্যামসনকে দেখে নেওয়ার পথে এদিন হাঁটেনি ভারত। বরং তিন নম্বরে কোহালির জায়গায় লোকেশ রাহুলকে খেলানো হল। হার্দিক পান্ড্যর অনুপস্থিতিতে অলরাউন্ডার হিসেবে অভিষেক ঘটল শিবমের। টস জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ বলেছিলেন, শাকিব-তামিমের অনুপস্থিতিতে নিজেদের চেনানোর এটা দারুণ সুযোগ বাকিদের সামনে। শিশিরের কথা ভেবেই যে রান তাড়ার সিদ্ধান্ত, সেটাও জানিয়ে দিলেন তিনি। যদিও শিশির কোনও সমস্যা তৈরি করেনি ভারতীয় স্পিনারদের সামনে।