দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে ৭২ রান যোগ করেছেন পূজারা-মায়াঙ্ক। ছবি: এপি।
ইনদওরে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে দাপট দেখাল বিরাট কোহালির দল। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়েছিল মাত্র ১৫০ রানে। জবাবে দিনের শেষে এক উইকেটে ৮৬ তুলল ভারত। রোহিত শর্মা (৬) দ্রুত আউট হলেও অবিচ্ছিন্ন দ্বিতীয় উইকেটে ৭২ রান যোগ করেছে ভারত। ক্রিজে আছেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল (৩৭) ও চেতেশ্বর পূজারা (৪৩)। এখনও ৬৪ রানে পিছিয়ে রয়েছে টিম ইন্ডিয়া। যে ভাবে ব্যাট করছেন পূজারা-মায়াঙ্ক, তাতে বড় রানের দিকেই এগোচ্ছে ভারত।
এদিন ৫৮.৩ ওভার টিকল বাংলাদেশের ইনিংস। বৃহস্পতিবার সকালে সাত ওভারের মধ্যেই আউট হয়েছিলেন দুই ওপেনার। প্রথমে ইমরুল কায়েসকে (৬) ফেরান উমেশ যাদব। তাঁর ক্যাচ নেন অজিঙ্ক রাহানে। এর পর শাদমান ইসলামকে (৬) ফেরান ইশান্ত শর্মা। ক্যাচ ধরেন উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহা। ১২ রানে দুই উইকেট পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। তৃতীয় উইকেট পড়ে ৩১ রানে। মহম্মদ মিঠুনকে (১৩) এলবিডব্লিউ করেন মহম্মদ শামি।
এর পর বেশ কয়েকবার সুইংয়ে পরাস্ত হয়েও বেঁচে যান ব্যাটসম্যানরা। ভারতের তিন পেসারই দুরন্ত ছন্দে বল করেন এদিন সকালে। তিনজনই নেন উইকেট। এরপর অধিনায়ক মোমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম শুরুর ধাক্কা সামলে ভদ্রস্থ স্কোরের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন ইনিংসকে। আর তখনই আঘাত হানলেন অশ্বিন। ফেরালেন মোমিনুলকে। এর আগে তিন রানে তাঁর বলেই বেঁচে গিয়েছিলেন মোমিনুল। কাট করতে গিয়ে প্রথম স্লিপে থাকা রাহানের দিকে গিয়েছিল বল। কঠিন সুযোগ, হাতে রাখতে পারেননি ভারতের সহ-অধিনায়ক। মুশফিকুর এর মধ্যে দু’বার জীবন পেয়েছিলেন। একবার তিন রানে আর অন্যবার ১৪ রানে। প্রথমবার উমেশ যাদবের বলে তৃতীয় স্লিপে তাঁর ক্যাচ ফেলেন বিরাট কোহালি। পরেরবার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে স্লিপে তাঁর ক্যাচ ফেলেন অজিঙ্ক রাহানে।
আরও পড়ুন: অধিনায়ক বিরাট কতটা আলাদা অধিনায়ক রোহিতের থেকে, ব্যাখ্যা করলেন ধওয়ন
আরও পড়ুন: পুরনো অভ্যাস! নেটে বোলিংয়ের ছবি পোস্ট করে ট্রোলড শাস্ত্রী
মোমিনুল হক-মুশফিকুর রহিমের জুটি চতুর্থ উইকেটে ৬৮ রান যোগ করে এই চাপ খানিকটা কাটিয়ে দিলেও দ্বিতীয় সেশনে ফের আঘাত হানল ভারত। লাঞ্চের পর রবিচন্দ্রন অশ্বিন বোল্ড করেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুলকে (৩৭)। বল ছেড়ে দিয়ে তিনি দেখলেন অফস্টাম্পে তা লাগছে। ৯৯ রানে পড়েছিল চতুর্থ উইকেট। এর পর মাহমুদুল্লাহকেও (১০) বোল্ড করেছিলেন অশ্বিন। ১১৫ রানে পড়েছিল পাঁচ উইকেট। তার পর ৫৪ ওভারে পর পর দুই বলে দুই উইকেট নিলেন শামি। প্রথমে মুশফিকুর রহিমকে (৪৩) দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড করেছিলেন। পরের বলে এলবিডব্লিউ করেছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ (০)। এই সেশনে পড়েছিল চার উইকেট। যার মধ্যে দুটো নিয়েছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, দুটো নিয়েছিলেন মহম্মদ শামি।
চায়ের বিরতিতে সাত উইকেটে ১৪০ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে মাত্র ১০ রান তুলতেই বাকি তিন উইকেট হারাল তারা। কার্যত, বাংলাদেশের শেষ পাঁচ উইকেট পড়ল ১০ রানে! শেষ সেশনে প্রথমে লিটন দাসকে (২১) ফেরালেন ইশান্ত শর্মা। প্রথম স্লিপে ক্যাচ নিলেন কোহালি। এর পর তাইজুল ইসলাম রান আউট হলেন রবীন্দ্র জাডেজা-ঋদ্ধিমান সাহার যুগলবন্দিতে। আর ইবাদত হোসেনকে বোল্ড করলেন উমেশ যাদব। তবে ইশান্ত (২-২০), উমেশ (২-৪৭), অশ্বিন (২-৪৩) নন, তিন উইকেট নিয়ে শামিই সফলতম বোলার। তাঁর বোলিং গড় ১৩-৫-২৭-৩।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কিছুদিন আগেই ঘরের মাঠে তিন টেস্টেই টস জিতেছিল ভারত। আর বিরাট কোহালি প্রতিবারই ব্যাটিং নিয়েছিলেন শুরুতে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে টস-ভাগ্য কিন্তু ভারতের পক্ষে ছিল না। টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল হক। ভারতীয় দলে এদিন একটি পরিবর্তন হয়েছিল। রাঁচীতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শেষ টেস্টে খেলেছিলেন বাঁ-হাতি স্পিনার শাহবাজ নাদিম। অভিষেক হয়েছিল তাঁর। কিন্তু তাঁকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুই টেস্টের স্কোয়াডেই রাখা হয়নি। কারণ, চায়নাম্যান কুলদীপ যাদব সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে এই টেস্টে ভারত তিন পেসারে খেলছে। আর নাদিমের পরিবর্তে প্রথম এগারোয় এসেছিলেন জোরেবোলার ইশান্ত শর্মা।
টস জিতে মোমিনুল বলেছিলেন, “হার্ড পিচ। তাই প্রথমে ব্যাটিং করছি। চতুর্থ ইনিংসে ভাঙতে পারে উইকেট। আমরা সাত ব্যাটসম্যান ও চার বোলারে খেলছি।” আর কোহালি বলেছিলেন, “উইকেটে ঘাস রয়েছে। ঐতিহাসিক ভাবে ইনদওরের উইকেটে প্রথম দিন বোলারদের জন্য সাহায্য থাকে। আমরা তাই বোলিং করতাম। তিনজন পেসারে খেলছি। তাদের জন্য এটা আদর্শ। ওরা সেরা ফর্মেও রয়েছে।”