মারমুখী লেন্ডল সিমন্স। ছবি: এপি।
শিবম দুবের ঝড়ের সুবাদে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে প্রথমে ব্যাট করে সাত উইকেটে ১৭০ তুলেছিল ভারত। সিরিজে সমতা ফেরানোর জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজকে করতে হত ১৭১ রান। জয়ের লক্ষ্যে শেষ পর্যন্ত অনায়াসেই পৌঁছে গেল ক্যারিবিয়ানরা। নয় বল বাকি থাকতে আট উইকেটে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজে সমতা (১-১) ফেরাল তারা (১৮.৩ ওভারে ১৭৩-২)। বুধবার মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সিরিজের নির্ণায়ক টি-টোয়েন্টি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের নায়ক লেন্ডল সিমন্স। ছয় রানে ভুবনেশ্বর কুমারের বলে তাঁর লোপ্পা ক্যাচ ফেলেছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। সেটাই তফাত গড়ে দিল। ৩৮ বলে পৌঁছলেন হাফ সেঞ্চুরিতে। সেটাও এল ছক্কায়। শেষ পর্যন্ত ৪৫ বলে ৬৭ রানে অপরাজিত থাকলেন। মারলেন চারটি চার ও চারটি ছয়। ১৮ বলে ৩৮ রানে অপরাজিত থাকলেন পুরানও। তাঁর ইনিংসে থাকল চারটি চার ও দুটো ছয়।
তার আগে ইভিন লুইসের (৩৫ বলে ৪০) সঙ্গে ওপেনিংয়ে ৭৩ রান যোগ করেছিলেন সিমন্স। দ্বিতীয় উইকেটে হেটমায়ারের সঙ্গে সঙ্গে যোগ করলেন ৩৯ রান। আর অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেটে সিমন্স-পুরান ২৯ বলে যোগ করলেন ৬১ রান। তার আগে ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে স্টাম্পড হয়েছিলেন লুইস। আর শিমরন হেটমায়ারকে (১৪ বলে ২৩) রবীন্দ্র জাডেজার বলে অবিশ্বাস্য ক্যাচে ফিরিয়েছিলেন বিরাট কোহালি। লং অফে দাঁড়িয়ে দৌড়তে দৌড়তে শরীর ছুড়ে ক্যাচ ধরলেন তিনি। কিন্তু কোনও লাভ হল না।
ভারতের বোলারদের সমস্যায় ফেলল শিশির। তার সঙ্গে পড়ল ক্যাচ। ফিল্ডিংয়ে গলল বল। কোহালি দারুণ ক্যাচ নিলেও সতীর্থরা হতাশ করলেন। তার উপর ক্যারিবিয়ানরা বড় শটের দিকে জোর দিয়েছিলেন। শিশিরের দরুন যার জবাব ছিল না যুজবেন্দ্র চহাল, দীপক চাহারদের কাছে।
আরও পড়ুন: লা লিগায় ৩৫ নম্বর হ্যাটট্রিক! রোনাল্ডোকে টপকে গেলেন মেসি
আরও পড়ুন: ‘এ ভাবে ম্যাচ জেতালে এমন পাম্প-আপ সেলিব্রেশন তো করতেই পারে’
ম্যাচের প্রথমার্ধে অবশ্য মন্থর উইকেটে শট নেওয়া খুব একটা সহজ ছিল না। অন্য ব্যাটসম্যানরা সমস্যায় পড়লেও তিন নম্বরে নামা শিবম মারমার কাটকাট ভঙ্গিতে ব্যাট করেছিলেন। ২৭ বলে পঞ্চাশে পৌঁঁছেছিলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এটা তাঁর প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি। তবে তার পর বেশিক্ষণ স্থায়ী হলেন না তিনি। ৩০ বলে ৫৪ করে লেগস্পিনার হেডেন ওয়ালশের বলে ফিরেছিলেন তিনি। তাঁর ইনিংসে ছিল তিনটি চার ও চারটি ছয়।
আক্রমণাত্মক শিবম দুবে। রবিবার তিরুঅনন্তপুরমে। ছবি: এপি।
ভারতীয় ইনিংসের শুরুতে ১১ বলে ১১ রান করে বাঁ-হাতি স্পিনার খারি পিয়েরের বলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন লোকেশ রাহুল। রোহিত শর্মাও ফিরেছিলেন দ্রুত। ১৮ বলে ১৫ রান করে জেসন হোল্ডারের বলে বোল্ড হয়েছিলেন তিনি। অধিনায়ক বিরাট কোহালি আউট হয়েছিলেন ১৭ বলে ১৯ রানে সেই কেসরিক উইলিয়ামসের ডেলিহারিতে। শ্রেয়স আইয়ার ১১ বলে করলেন ১০। রবীন্দ্র জাডেজা ১১ বলে করলেন ৯। ওয়াশিংটন সুন্দর ফিরলেন ০ রানে। ঋষভ পন্থ অপরাজিত থাকলেন ২২ বলে ৩৩ রানে। শেষ তিন ওভারে উঠল মাত্র ২০ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সফল দুই বোলার হলেন হেডেন ওয়ালশ (২-২৮) ও কেসরিক উইলিয়ামস (২-৩০)।
টস জিতে রান তাড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে রবিবার সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে প্রথমে ব্যাট করতে হল ভারতকে। হায়দরাবাদে টস জিতেছিল ভারত। এবং রান তাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিরাট কোহালি। ওয়েস্ট ইন্ডিজও রবিবার সিরিজে সমতা ফেরাতে রান তাড়ার পথে হেঁটেছিল।
শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম টি-টোয়েন্টি আট বল বাকি থাকতে ছয় উইকেটে জিতেছিল ভারত। রবিবার তিরুঅনন্তপুরমে তাই সিরিজ জয়ের হাতছানি ছিল বিরাট কোহালির দলের সামনে। পিচ রিপোর্টে সুনীল গাওস্কর বলেছিলেন যে ব্যাটিংয়ের পক্ষে তা সহায়ক। তবে হায়দরাবাদের মতো সাহায্য পাবেন না ব্যাটসম্যানরা। কারণ, স্পিনাররাও এই পিচ সহায়তা পাবেন। তবে পরের দিকে শিশির প্রভাব ফেলবে।
দেখার ছিল টিম ইন্ডিয়ার প্রথম এগারোয় কোনও পরিবর্তন হয় কি না। কারণ, কেরলে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বলে ঘরের ছেলে সঞ্জু স্যামসনকে দলে দেখতে চাইছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। তাঁকে দেখে মাঠে উচ্ছ্বাসও নজরে পড়ল। তা ছাড়া ভারতীয় দলে চায়নাম্যান কুলদীপ যাদবকে দেখা যাবে কি না তা নিয়েও চলছিল জল্পনা। কিন্তু ভারতীয় দলে কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে এসেছেন পুরান, বাদ পড়েছেন দীনেশ রামদিন।
হায়দরাবাদে প্রথমে ব্যাট করে ২০৭ রান তুলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে চার উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত। অধিনায়ক বিরাট কোহালির ৫০ বলে অপরাজিত ৯৪ রানের ইনিংসই তফাত গড়ে দেয়। রবিবার কোহালি টস হেরে জানিয়েছিলেন যে জিতলে তিনিও রান তাড়া করতেন। কারণ, পরের দিকে শিশিরের জন্য বল ধরতে সমস্যায় পড়বেন বোলাররা। বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে উন্নতি করতে হবে, বলেছিলেন তিনি। অন্যদিকে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক কিয়েরন পোলার্ডও বোলিংয়ে শৃঙ্খলা আনার কথা বলেছিলেন।