উচ্ছ্বসিত আকাশদীপ। সোমবার রাজকোটে সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রঞ্জি ফাইনালের প্রথম দিনে। ছবি: পিটিআই।
দুরন্ত আকাশদীপ। সোমবার রাজকোটে রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে তাঁর তিন উইকেটই লড়াইয়ে ফেরাল বাংলাকে। প্রথম দিনের শেষে পাঁচ উইকেটে ২০৬ রান তুলেছে সৌরাষ্ট্র। ৮০.৫ ওভার খেলেছে তারা। দ্বিতীয় নতুন বল এখনও নেওয়া হয়নি। ফলে, মঙ্গলবার সকালে দ্রুত সৌরাষ্ট্র ইনিংস শেষ করে দেওয়াই লক্ষ্য বাংলার।
সৌরাষ্ট্র নির্ভরশীল ছিল চেতেশ্বর পূজারার উপরে। কিন্তু ছয় নম্বরে নেমেছিলেন তিনি। পড়ন্ত বেলায় ডিহাইড্রেশনের শিকার হয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়েও গেলেন। জলশূন্যতার কারণে সৌরাষ্ট্র ইনিংসের ৭৭ ওভারের পর যখন বেরিয়ে গেলেন, তখন তাঁর রান মাত্র ৫ রান। তার আগেই অবশ্য শেষ সেশনে সৌরাষ্ট্রের দুই উইকেট ফেলে দিয়ে লড়াইয়ে ফিরেছিল বাংলা। পূজারা বেরিয়ে যাওয়ার পর আরও এক উইকেট হারাল সৌরাষ্ট্র।
টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে অবশ্য বড় রানের পথেই এগোচ্ছিল সৌরাষ্ট্র। জয়দেব উনাদকটের ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তকে সঠিক করে তুলেছিলেন সৌরাষ্ট্রের দুই ওপেনার। অভি বারোত ও হার্ভিক দেশাই প্রথম উইকেটে তুলেছিলেন ৮২ রান। প্রথম দিন লাঞ্চের সময় ৩৫ ওভারে হোম টিম বিনা উইকেটে তুলেছিল ৭৭। আড়াই ঘন্টার প্রথম সেশনে উইকেট না পড়লেও স্লিপে দুটো কঠিন ক্যাচ পড়েছিল। ক্যাচ ধরতে গিয়ে আঙুলে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন অনুষ্টুপ মজুমদার। তৃতীয় সেশনে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বাংলার আর এক ক্রিকেটার, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়।
লাঞ্চের পর জোড়া ধাক্কা দিয়ে ফেরার চেষ্টা করেছিল বাংলা। শাহবাজ আহমেদের স্পিনে হার্ভিক দেশাই-এর (৩৮) ক্যাচ দিয়েছিলেন ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে। এর পর ফেরেন অভি বারোত (৫৪)। আকাশদীপের বলে উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহাকে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। তবে তার আগে হাফসেঞ্চুরি করেন বারোত। ১১৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়েছিল সৌরাষ্ট্র। চায়ের বিরতির সময় ৬১ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ১৫৫ তুলেছিল হোম টিম। দ্বিতীয় সেশনে উঠেছিল ৮০ রান। পড়েছিল দুই উইকেট।
তৃতীয় সেশনের শুরুতেই হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করে ফেলেছিলেন বিশ্বরাজ জাডেজা। যা এসেছিল ৭৫ বলে। কিন্তু এর পরই আকাশদীপের দুরন্ত ইনসুইংয়ে বোল্ড হলেন বিশ্বরাজ (৫৪)। ১৬৩ রানে পড়ল তৃতীয় উইকেট। চতুর্থ উইকেট পড়ল ১৮২ রানে। শেলডন জ্যাকসন (১৪) এলবিডব্লিউ হলেন ঈশান পোড়েলের বলে। চেতেশ্বর পূজারার জায়গায় নামা চেতন সাকারিয়া (৪) ফিরলেন আকাশদীপের বলে খোঁচা দিয়ে। রিভিউ নিয়ে এল উইকেট। চেতনের আউটই হয়ে উঠল দিনের শেষ বল। ক্রিজে রয়েছেন অর্পিত ভাসাভাদা (২৯)।
সকালে অবশ্য পাটা উইকেটে বাংলার পেসাররা প্রভাব ফেলতে পারেননি। ঈশান পোড়েল, মুকেশ কুমার, আকাশদীপের বোলিংয়ে সেমিফাইনালের ঝাঁঝ অনুপস্থিত ছিল। সকালে দিনের অষ্টম ওভারেই তাই স্পিনার শাহবাজ আহমেদকে আক্রমণে নিয়ে আসতে হয়। তবে খেলা যত গড়াল, বাউন্স তত কমতে থাকল। দুই ড্রপে বল যেতে লাগল কিপারের কাছে।
বাংলা দলে এদিন দুটো পরিবর্তন হয়। ওপেনার অভিষেক রামনের জায়গায় এগারোয় আসেন সুদীপ ঘরামি। ফাইনালে অভিষেক হল তাঁর। এর আগে ১৯৯০ সালের রঞ্জি ফাইনালে অভিষেক ঘটানোর কাহিনিও রয়েছে বাংলা ক্রিকেটে। সে বার অভিষেক ঘটিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এ বার সুদীপ। উইকেটকিপার হিসেবে দলে এসেছেন ঋদ্ধিমান সাহা। বাদ পড়েছেন শ্রীবৎস গোস্বামী। অন্যদিকে, সৌরাষ্ট্র দলে একটিই পরিবর্তন হয়েছে। প্রথম এগারোয় এসেছেন চেতেশ্বর পূজারা।
আরও পড়ুন: সচিনের সঙ্গে ইরফানের ছেলের ‘বক্সিং’! ভাইরাল ভিডিয়ো
আরও পড়ুন: পূজারাকে থামানোর ছক তৈরি ঈশানদের
রঞ্জিতে শততম ম্যাচ। মনোজ তিওয়ারিকে শুভেচ্ছা বাংলার কোচ অরুণলালের। —নিজস্ব চিত্র।
কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে প্রথমে ব্যাট করতে হয়েছিল অভিমন্যু ঈশ্বরনের বাংলাকে। ওড়িশা ও কর্নাটকের বিরুদ্ধে সেই দুই ম্যাচে বাংলার পরিত্রাতা হয়ে উঠেছিল অনুষ্টুপ মজুমদারের ব্যাট। কিন্তু টপ অর্ডার ব্যর্থ হয়েছিল। এ বার ফাইনালে তাই ব্যাটসম্যানদের থেকে বড় রান চাইছে দল। একই সঙ্গে বোলারদের কাছেও প্রথম সেশনে থাকছে উইকেটের প্রত্যাশা। কিন্তু ঈশানরা নতুন বল হাতে আঘাত হানতে পারলেন না। কোনও উইকেটই নিতে পারলেন না মধ্যাহ্নভোজ পর্যন্ত পয়লা সেশনে।