জয়ের পর উল্লসিত বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে অষ্টমীর রাতে প্রথম ম্যাচে হারের মধুর প্রতিশোধ নিল বাংলার বাঘেরা। ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে মাত্র ২৩৮ রান করে থেমে গেলেও জয়ের স্বপ্ন নিয়ে বল হাতে নেমেছিল টাইগাররা। সঙ্গে গ্যালারি কাঁপানো হাজার হাজার দর্শকের সমর্থন। সিরিজ বাঁচাতে এ ম্যাচে টাইগারদের জয়ের বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের। শেষমেশ তা-ই করে সিরিজে আশা জিইয়ে রাখল বাংলাদেশ।
রবিবার ইংল্যান্ডের সঙ্গে দ্বিতীয় ওয়ানডে শুরুর ঠিক আগের দিন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বলেছিলেন, “খেলায় ফিরতে জয়ের কোন বিকল্প নেই, মাটি কামড়ে খেলবে বাংলাদেশ।” আর সেটাই করে দেখাল মাশরাফির টাইগাররা। ব্যাট হাতে মাহমুদুল্লাহ আর মাশরাফি এবং বল হাতে সেই মাশরাফির সাথে তাসকিন আহমেদ প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডকে ক্ষতবিক্ষত করল। ফলে ৩৪ রানে জয় পেল বাংলাদেশের টাইগাররা।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৭৫ এবং শেষ দিকে মাশরাফি বিন মোর্তাজার ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ২৯ বলে ৪৪ রান। শেষ পর্যন্ত আট উইকেটে ২৩৮ রানের পুঁজি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খুব বেশি রান নয়। সেই হিসাবে এই ম্যাচে জয় সফরকারীদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। বল হাতে চতুর্থ ওভারে ইংল্যান্ড দলে প্রথম আঘাত হানেন মাশরাফি বিন মোর্তাজা। মাত্র ৫ রানে মোসাদ্দেক হোসেনের তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন জেমস ভিঞ্চি। পরের ওভারেই সাকিব আল হাসানের স্পিন ঘূর্ণিতে ক্লিন বোল্ড হন আগের ম্যাচে অভিষেকেই অর্ধশতরান হাঁকানো বেন ডাকেট (০)। অষ্টম ওভারে ওপেনার জেসন রয়কে (১৩) নিজের দ্বিতীয় শিকারে বানান মাশরাফি। দুই ওভার না যেতেই ফের ‘ম্যাশ অ্যাটাক’। এ বার আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান বেন স্টোকসের (০) স্ট্যাম্প ভাঙেন মাশরাফি। কিন্তু পঞ্চম উইকেট জুটিতে দলের প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন জস বাটলার ও জনি বেয়ারস্টো। ২৪তম ওভারে এসে দু’জনের ৭৯ রানের পার্টনারশিপ ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। ব্যক্তিগত ৩৫ রানে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন বেয়ারস্টো। এর পর অধিনায়ক জস বাটলারের বিদায়ে হারের শঙ্কার দেখা দেয় সফরকারীদের। ইংলিশ অধিনায়ক করেন ৫৭ বলে ৫৭ রান। ইনিংসের ২৮তম ওভারে বাটলারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তাসকিন।
আরও পড়ুন
আনন্দমুখর মহাষ্টমীতে ঢাকায় কুমারী পুজো
এই পুজো আমার সেই মাকে মনে পড়িয়ে দিল
রবিবার দুপুর আড়াইটায় শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ১৫৮ ওয়ানডে খেলা তামিম ইকবালের সঙ্গে জুটি গড়তে নামেন ৬১ ওয়ানডে খেলা ইমরুল কায়েস। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সতর্ক থেকেই শুরু করে এই জুটি। তবে, ইনিংসের সপ্তম ওভারে ক্রিস ওকসের করা পঞ্চম বলে টপ এজ হয়ে উইলির হাতে ধরা পড়েন ইমরুল। ফিরে যাবার আগে দু’টি চারের সাহায্যে ১৮ বলে ১১ রান করেন তিনি।
দলীয় ২৫ রানের মাথায় ওপেনার ইমরুল ফিরে গেলে তামিমের সঙ্গে জুটি গড়তে নামেন ২৮ ওয়ানডে খেলা সাব্বির রহমান। ইনিংসের নবম ওভারে ক্রিস ওকসের দ্বিতীয় শিকারে সাজঘরে ফেরেন তামিম। শর্ট বল মারতে গিয়ে মিড উইকেটে মইন আলির হাতে ধরা পড়েন ৩১ বলে ১৪ রান করা তামিম।
দুই ওপেনার তামিম-ইমরুল ফিরে যাবার পর উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন সাব্বির রহমান এবং ১৩০ ওয়ানডে ম্যাচ খেলা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তবে সুবিচার করতে পারেননি সাব্বির। ইনিংসের ১৪তম ওভারে ইংলিশদের প্রথম ম্যাচের নায়ক জ্যাক বলের শিকারে বোল্ড হন ২১ বলে ৩ রান করা সাব্বির। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন মুশফিকুর রহিম। জ্যাক বলের করা ২২তম ওভারের শেষ বলে ব্যক্তিগত ২১ রানে মইন আলির হাতে ধরা পড়েন। তার আগে মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চাশ রানের জুটি গড়েন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
মুশফিকুর রহিমের পর সাকিব আল হাসানের বিদায়ে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। বেন স্টোকসের বলে জস বাটলারের গ্লাভসবন্দি হন সাকিব (৩)। দলীয় ১১৩ রানের মাথায় টাইগারদের পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটে। উইকেট আগলে রেখে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখানো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ব্যক্তিগত ৭৫ রানে বিদায় নেন। এর পর ফিরে নেন মোসাদ্দেক হোসেন (২৯)। তবে বাংলাদেশের হয়ে ব্যাট হাতে ঝড় তোলের টাইগার দলপতি মাশরাফি। ম্যাশের ব্যাট থেকে আসে ৪৪ রান। শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে তার ২৯ বলের ইনিংসে দু’টি চার আর তিনটি ছক্কার মার ছিল তাঁর। নাসির হোসেন ২৭ বলে ২৭ রান করে অপরাজিত থাকেন। মোট সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৩৮ রান।
তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে প্রথম ম্যাচে নাটকীয় ভাবে হেরে যাওয়ার পর টাইগারদের সামনে এ বার সিরিজ জয়ের স্বপ্ন হাতছানি দিতে শুরু করেছে। মাশরাফি বাহিনীর বোলিং ঘূর্ণিপাকে পড়ে ৩৪ রান বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ।