অবিশ্বাস্য কিপিং বোধহয় বাঁচিয়ে দিল দুই কোচকে

ম্যাচটা দেখতে বসার আগে কৌতুহল ছিল একটাই, দুই ডাচ মাস্টারের যুদ্ধে কে কাকে টপকান। এক জনের কাছে হয়তো এটাই শেষ সুযোগ চাকরি বাঁচানোর। মানে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাই়টেডের লুইস ফান গল। অন্য জনের এটাই আসল শুরুর চ্যালেঞ্জ। মানে চেলসির নতুন কোচ খুস হিডিঙ্ক।

Advertisement

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:০৫
Share:

ম্যাঞ্চেস্টার ইউ- : চেলসি-

Advertisement

ম্যাচটা দেখতে বসার আগে কৌতুহল ছিল একটাই, দুই ডাচ মাস্টারের যুদ্ধে কে কাকে টপকান। এক জনের কাছে হয়তো এটাই শেষ সুযোগ চাকরি বাঁচানোর। মানে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাই়টেডের লুইস ফান গল। অন্য জনের এটাই আসল শুরুর চ্যালেঞ্জ। মানে চেলসির নতুন কোচ খুস হিডিঙ্ক।

কিন্তু আদতে দেখলাম, দুই গোলকিপারের লড়াই। ম্যান ইউয়ের দাভিদ দ্য হিয়া। চেলসির কুর্তোয়া। যে ম্যাচের ফল ৩-৩ হলেও অবাক হওয়ার ছিল না, সেটাই নব্বই মিনিট শেষেও গোলশূন্য রইল। দু’দলের অসাধারণ গোলকিপিংয়ের দাপটে। হিয়া আর কুর্তোয়া দু’জনই যেমন পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গোল বাঁচাল, তেমনই দূরপাল্লার গোলাও সামলাল দুর্দান্ত ভাবে।

Advertisement

নিজের একটু-আধটু কোচিং করানোর অভি়জ্ঞতা আছে বলে জানি এ রকম চাপে মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের দলের ড্রেসিংরুম থেকে মাঠে সব নিয়ন্ত্রণ রাখাটা কতটা জরুরি। আর ঠিক তেমনই কত কঠিন। শুধু স্ট্র্যাটেজি নয়, ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করা, দলের ফর্মেশন সব কিছু বরফের মতো ঠান্ডা মাথায় করতে হয়। উত্তেজনার বশে সামান্য ভুল সিদ্ধান্তও তুলকালাম ঘটাতে পারে।

ঠিক সেটাই দেখলাম প্রিমিয়ার লিগের এই মেগা ম্যাচের শুরুতে ম্যান ইউয়ের খেলায়।

দু’জনেই ডাচ হলেও স্টাইলে ফান গল আর হিডিঙ্ক আমার চোখে বিপরীত মেরুর। ফুটবল বিশ্বে ফান গলের স্ট্র্যাটেজি সাজানো নিয়ে দারুণ সুনাম। নতুন স্ট্র্যাটেজির উদ্ভাবন নিয়েও। আর ঠিক উল্টো প্রকৃতির বলা হয় হিডিঙ্ককে। মূলত একটা চেনা ছকে খেলতে তিনি ভালবাসেন। বরং প্লেয়ারদের ভীষণ ভাবে উদ্বুদ্ধ করেন। সে দিনই ইন্টারনেটে দেখছিলাম ডাচ জাতীয় দলের এক ফুটবলার বলেছে, হিডিঙ্কের কাছ থেকে একটা জিনিসই শিখেছে— কোচের জন্য জান লড়িয়ে দেওয়া।

সোমবার রাতে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ঠিক সেই নিজের-নিজের কাজটাই করলেন দুই তারকা ডাচ কোচ। ফিল জোন্স, ক্যারিক আর ফেলাইনির জায়গায় স্নেইডারলিন, সোয়াইনস্টাইগার আর রুনিকে নামিয়ে ঘরের মাঠে গোড়া থেকেই অল অ্যাটকে চলে যান ফান গল। প্রথম পনেরো মিনিটে তো চেলসি এক বারের বেশি আক্রমণে ওঠার সুযোগই পেল না। তার মধ্যেই ম্যান ইউর মাতা আর মার্শালের শট বারে লেগে ফিরে এল। যত ম্যাচ গড়িয়েছে ততই ম্যান ইউর আক্রমণের ধার বেড়েছে।

এ মরসুমে চেলসি ডিফেন্সের গড় বয়স ৩২-৩৩। ইভানোভিচ, টেরিরা থাকায় যে সুযোগটা কাজে লাগানোর মরিয়া চেষ্টা ছিল ফান গলের। তাই রুনি, মার্শাল, হেরেরাদের সারাক্ষণ একটাই মন্ত্র ছিল— অ্যাটাক। হিডিঙ্ক এর পাল্টা স্ট্র্যাটেজি হিসেবে ভরসা রেখেছিলেন কাউন্টার অ্যাটাকে। নিজের ঘর গুছিয়ে পরের ঘরে আক্রমণ। দল পয়েন্ট টেবলে ১৫ নম্বরে নেমে যাওয়ায় হারা কোনও মতেই যাবে না। এটা মাথায় রেখেই ট্যাকটিক্স সাজিয়েছিলেন চেলসিতে মোরিনহোর জায়গায় মাঝ মরসুমে আসা হিডিঙ্ক। চেলসির খেলায় ম্যান ইউর মতো ধারাবাহিক আক্রমণ ছিল না। ছিল মাঝেমধ্যে ডিফেন্স চেরা মুভ।

বছর দশেক আগে ময়দানে প্রথম বড় দলের কোচ হয়েছিলাম যখন মোহনবাগানে, আমারও ঠিক এ রকম পরিস্থিতি ছিল। হারা চলবে না। অবনমন বাঁচাতে হবে। সেই অবস্থায় ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে প্রথম লড়াইয়ে ২-১ হারলেও অবনমন থেকে কিন্তু নিজের দলকে বাঁচাতে পেরেছিলাম। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ম্যাচটা দেখে মনে হচ্ছে, চেলসির অবনমন বাঁচিয়ে দেবেন হিডিঙ্ক। আর ফান দলের চাকরিও হয়তো শেষমেশ বেঁচে যাবে। তাঁর গোলকিপারের সৌজন্যে।

দুই গোলকিপারের দিন। দ্য হিয়া (উপরে) এবং কুর্তোয়া। ছবি: রয়টার্স

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement