আপ্লুত: ভক্তদের ভালবাসায় অভিভূত মজিদ। ফাইল চিত্র
বর্ষাস্নাত কলকাতায় বিষণ্ণ মজিদ বেশকর (বাসকর নয়)। তিন দশক আগে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ময়দানের বাদশা একরাশ অভিমান বুকে নিয়ে নিঃশব্দে এই শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। কখনও ভাবেননি ফেরার কথা। শতবর্ষ উপলক্ষে ইস্টবেঙ্গল আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও কলকাতায় আসা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন। কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই বদলে গিয়েছে ছবিটা। কলকাতা ছেড়ে চলে যাওয়ার যন্ত্রণায় কাতর মজিদ!
চব্বিশ ঘণ্টা আগেই গোয়া থেকে কলকাতায় ফিরেছেন বাদশা। শনিবার সকালে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই হোটেলের কাছে শপিংমলে গিয়েছিলেন তিনি। মধ্যাহ্নভোজে প্রিয় বিরিয়ানি খেয়ে মজিদ বললেন, ‘‘বদলে যাওয়া কলকাতা আমাকে উজাড় করে দিয়েছে। এই শহর ছাড়ার পরে বাংলায় কথা বলার সুযোগ পাইনি। সব চেয়ে বড় কথা, আমি যে বাংলা বলতে পারি, সেটাই তো ভুলে গিয়েছিলাম।’’ তিনি যোগ করলেন, ‘‘এত দিন পরে এখানে ফিরে যে ভালবাসা পেয়েছি, তা ব্যাখ্যা করার ভাষা আমার নেই। ইস্টবেঙ্গল আমাকে পুনর্জন্ম দিল। কলকাতা ফিরিয়ে দিল সোনালি অতীত। তাই এই শহর ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন, নিজের বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। কিন্তু কিছু করার নেই। যেতে তো হবেই। আবার আমি কলকাতায় ফিরব।’’ কবে? মজিদ বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে তা বলা কঠিন। তবে এই শহরে আমাকে ফিরতেই হবে।’’
গত রবিবার ভোররাতে কলকাতা বিমানবন্দরে পা দিয়েই বাদশা উপলব্ধি করছিলেন, তাঁর প্রতি ফুটবলপ্রেমীদের ভালবাসা এখনও অটূট। পুলিশের গাড়িতে করে তাঁকে হোটেলে যেতে হয়েছিল। অথচ গোয়ায় মজিদকে কেউ চিনতেই পারেননি। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘কলকাতায় পা দেওয়ার পর থেকেই সবাই ভালবাসা উজাড় করে দিয়েছেন। গোয়ায় কিন্তু কেউ আমাকে চিনতে পারেনি। তাতে অবশ্য ভালই হয়েছে। শান্তিতে কয়েক দিন বিশ্রাম নিতে পেরেছি।’’ গোয়ায় পানাজির একটি অ্যাপার্টমেন্টে ছিলেন মজিদ। বৃষ্টির জন্য বাইরে বেশি বেরোতে পারেননি। বলছিলেন, ‘‘কাছাকাছি একটি সমুদ্রসৈকতে ঘণ্টাখানেকের জন্য এক দিন বেড়াতে গিয়েছিলাম। আর এক দিন পরিবারের সদস্যদের জন্য উপহার কিনতে গিয়েছিলাম পানাজির শপিংমলে। কলকাতায় কয়েক দিন যা ধকল গিয়েছে, তাতে বিশ্রামটা খুব দরকার ছিল।’’ তবে গোয়ায় ভারতীয় দলের প্রাক্তন তারকা ব্রহ্মানন্দ সাঙ্কওয়াকরের সঙ্গে দেখা হয়েছিল মজিদের। বললেন, ‘‘কত বছর পরে যে ব্রহ্মানন্দের সঙ্গে দেখা হল, মনে করতে পারছি না। ওর সঙ্গে পুরনো দিনের অনেক গল্প করলাম।’’
গোয়ার এই অভিজ্ঞতা থেকেই মজিদ ঠিক করে নিয়েছেন, পরের বার কলকাতায় এলে কী করবেন। বাদশা বললেন, ‘‘এ বার ব্যস্ততার কারণে কলকাতা ঘুরে দেখাই হল না। সারাক্ষণ ফুটবল নিয়ে কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। পরের বার প্রথম কাজ হবে, শহরটাকে ভাল করে ঘুরে দেখা।’’ এর পরেই হাসতে হাসতে যোগ করলেন, ‘‘পরের বার কিন্তু ফুটবল নিয়ে কোন আলোচনা করব না। অন্য কোনও কাজও করব না।’’
এত বছর পরে কলকাতায় ফিরলেন। প্রিয় শহর থেকে পরিবারের সদস্যদের জন্য কী উপহার নিয়ে যাচ্ছেন? মজিদ বললেন, ‘‘গোয়া থেকে জামা-কাপড় ছাড়াও অন্যান্য অনেক জিনিস কিনেছি। আজ, সকালে কলকাতার একটি শপিংমলেও গিয়েছিলাম। এখান থেকে অবশ্য শীতবস্ত্রই কিনেছি।’’
ব্যস্ততার মধ্যেও ইস্টবেঙ্গলের সব খবর রয়েছে মজিদের কাছে। বললেন, ‘‘ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে উঠেছে ইস্টবেঙ্গল। প্রার্থনা করব, যেন চ্যাম্পিয়ন হয়। আই লিগও জিতবে আমার প্রিয় দল।’’