কমনওয়েলথ গেমসের মতো অলিম্পিক্সেও পদক চান শ্রীশঙ্কর। ফাইল ছবি।
বাবা চেয়েছিলেন ছেলেকে দেশের সেরা লংজাম্পার তৈরি করতে। বাবার সেই স্বপ্নপূরণ করেছেন মুরলি শ্রীশঙ্কর। কমনওয়েলথ গেমসে রুপো জিতেছেন শ্রীশঙ্কর। তাঁর এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে পরিশ্রম, অনুশাসন এবং ত্যাগ। রয়েছে এক কঠোর প্রতিজ্ঞাও।
বাবা মুরলি বিজিমলই শ্রীশঙ্করের কোচ। ছেলেকে সবসময় কড়া নজরে রাখেন তিনি। পড়াশোনা হোক বা অ্যাথলেটিক্স— সামান্যতম গাফিলতিও পছন্দ নয় তাঁর। নিজে অ্যাথলেটিক্স জীবনে তেমন সাফল্য পাননি। তাই ছেলেকে দেশের সেরা তৈরি করতে চেয়েছিলেন তিনি। বাবার স্বপ্নপূরণ করতে দু’বছর নিজের প্রিয় খাবার ছুঁয়েও দেখেননি শ্রীশঙ্কর। খাবেনও না অলিম্পিক্স পদক না জেতা পর্যন্ত।
২৩ বছরের অ্যাথলিট কেরলের বিশেষ ধরনের পরোটা খেতে ভীষণ ভালবাসেন। কিন্তু ২০১৯ সালের পর সেই পরোটা আর খাননি তিনি। শ্রীশঙ্কর বলেছেন, ‘‘বছর তিনেক আগে একদিন কেরল পরোটা খাচ্ছিলাম। কেরলের সকলেই জানেন এই পরোটা আমাদের একটা বিশেষ খাবার। বাবা আমাকে খেতে দেখে বলেছিলেন, ‘তুমি এখানে বসে বসে পরোটা খাচ্ছ। অন্য অ্যাথলিটরা ৮.১৫ মিটার বা তার থেকেও বেশি লাফাচ্ছে।’ তখনই আমি বাবাকে বলি, টোকিয়ো অলিম্পিক্স পর্যন্ত আর কেরল পরোটা খাব না। টোকিয়োয় পদক জিততে পারিনি। তখনই ফোন করে মা-বাবাকে বলেছিলাম, অলিম্পিক্স পদক না জেতা পর্যন্ত কেরল পরোটা মুখে তুলব না। কমনওয়েলথ গেমসে পদক জেতার পরও কেরল পরোটা খাইনি। অলিম্পিক্স পদক জেতার পরই কেরল পরোটা খেয়ে উৎসব করব।’’
টোকিয়োয় ৭.৬৯ মিটার লাফিয়ে ২৪ নম্বরে শেষ করেন। নিজের ফলে নিজেই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। ঘুরে দাঁড়িয়ে কমনওয়েলথ গেমসে সাফল্য পেয়েছেন। শ্রীশঙ্কর বলেছেন, ‘‘অলিম্পিক্সে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। যোগ্যতা অর্জন পর্বে ভাল ফল করেছিলাম। পদক জিতব আশা করিনি। তবে ফাইনালের আট জনের মধ্যে থাকতে পারব ভেবেছিলাম। অলিম্পিক্সের আগে কয়েকটা মাস খুব কঠিন ছিল। কোভিড হওয়ায় দুর্বল ছিলাম। মানসিক এবং শারীরিক ভাবে পারছিলাম না। আমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির সকলের হতাশা বাড়ছিল। তিন মাস ঠিক মতো অনুশীলনই করতে পারিনি।’’
কমনওয়েলথ গেমসের সাফল্যে খুশি শ্রীশঙ্কর। তিনি বলেছেন, ‘‘কমনওয়েলথ গেমসে লং জাম্পের মান খারাপ নয়। বার্মিংহামে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, বাহামার প্রতিযোগীরা ছিল। পদক জেতা সহজ ছিল না। এশিয়ান গেমসেও ল়ড়াই বেশ কঠিন। অনেক দেশই অ্যাথলেটিক্সে শক্তিশালী। আসলে জুনিয়র পর্যায়ের সাফল্য সিনিয়র পর্যায়েও প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু জুনিয়র থেকে সিনিয়র পর্যায়ের অনেক পার্থক্য। শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন হয়। সব অ্যাথলিটকেই এই পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগে।’’
বার্মিংহাম থেকে দেশে ফিরে ছুটি বা বিশ্রাম নেননি। দেশে ফেরার পরের দিন থেকেই বাবার কাছে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছেন। প্যারিসে কি পদক জিততে পারবেন? শ্রীশঙ্কর বলেছেন, ‘‘অবশ্যই চেষ্টা করব। এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছি পরের অলিম্পিক্সের জন্য। প্যারিসেও না পারলে আরও চার বছর অপেক্ষা করব পরোটা খাওয়ার জন্য।’’ প্রতিজ্ঞা ভাঙতে নারাজ শ্রীশঙ্কর।