পাঁচশোতম টেস্ট জয়ের আনন্দের রেশ বেশিক্ষণ রইল না ভারতীয় বোর্ড মহলে। বিচারপতি লোঢা ও তাঁর কমিটির সিদ্ধান্তেই বোর্ড বনাম লোঢা যুদ্ধ এক নতুন মোড়ে এসে দাঁড়াল।
আদালতের কাছে ফিরে যাচ্ছে লোঢা কমিটি। সুপ্রিম কোর্টকে তারা এ বার জানাবে, তাদের সুপারিশ মানতে বোর্ডের কী কী অসুবিধা হচ্ছে। এ পর্যন্ত যে ভাবে লোঢা-সুপারিশনামা অগ্রাহ্য করে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড, তাও সর্বোচ্চ আদালতের কাছে তুলে ধরবে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত এই প্যানেল। যা শুনে বোর্ডের একাংশ মনে করছে আদালতের খাঁড়া এ বার নেমে আসতেও পারে বোর্ড ও তার অনুমোদিত সংস্থাগুলোর উপর। যদিও বিসিসিআইয়ের শীর্ষমহলে কেউ কেউ মনে করছেন, এর ফলে তাঁরা ফের আদালতে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে গেলেন।
রাজধানীতে নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসে লোঢা কমিটি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিন আবার মুম্বই ক্রিকেট সংস্থা বম্বে হাইকোর্টে দাবি জানাল যে, বিসিসিআই তাদের লোঢা সুপারিশ মানতে বাধ্য করতে পারে না। কারণ, এমসিএ বম্বে পাবলিক ট্রাস্ট আইন দ্বারা পরিচালিত। এই আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা ৩০ সেপ্টেম্বর। যে দিন আবার বোর্ডের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন করার সময়সীমা শেষ হচ্ছে। ওই দিনই বোর্ড মুম্বইয়ে বিশেষ সাধারণ সভাও ডেকেছে গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন নিয়ে আলোচনার জন্য।
সোমবার বৈঠকের পর বিচারপতি আর এম লোঢা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘গত ২১ সেপ্টেম্বর বোর্ডের বার্ষিক সভায় যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছিল, মূলত সেগুলো নিয়ে আলোচনার জন্যই আমরা আজ বৈঠকে বসেছিলাম। আদালতের কাছে এই সংক্রান্ত স্ট্যাটাস রিপোর্ট দেব আমরা। বেশ কিছু সুপারিশ কার্যকর করতে অসুবিধা হচ্ছে বলে বোর্ড জানিয়েছে। সেই জন্যই এই স্ট্যাটাস রিপোর্ট দেওয়া হবে।’’
ও দিকে মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার পদক্ষেপের পর অন্যান্য রাজ্যসংস্থাও একই ভাবে লোঢা সুপারিশের বিরোধিতা করার জন্য তৈরি হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এমসিএ-র মতো তারাও বিভিন্ন সোসাইটি আইনের অধীনে নথিবদ্ধ। বোর্ডের কার্যকলাপের সঙ্গে ওয়াকিবহাল এক কর্তা এ দিন এই ব্যাপারে বলেন, ‘‘বোর্ড বোধহয় এই জটিলতাটাই সৃষ্টি করতে চাইছে। সেই জন্যই এমসিএ আবার কোর্টে গেল।’’
এর মধ্যেই আবার লোঢা কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টে ‘কিউরেটিভ পিটিশন’ দিয়েছে বোর্ড। বোর্ড নিযুক্ত আইনি উপদেষ্টা বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজু এই কমিশন গঠনের সময়ই তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বোর্ড সূত্রের খবর, এ বার নাকি সেই একই যুক্তি দিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এই ‘কিউরেটিভ পিটিশন’-এ। পুরো বিষয়টি নিয়ে যে বোর্ড নানা ভাবে আইনি জটিলতা তৈরি করার চেষ্টা করছে, তার ইঙ্গিত এই পদক্ষেপেই পাওয়া যাচ্ছে বলে আইনজ্ঞ মহলের ধারণা। বোর্ডের এক প্রাক্তন আইনজীবী তো বলেই দিলেন, ‘‘বিচারপতি কাটজুকে আনার উদ্দেশ্য বোধহয় এটাই। আইনের জট তৈরি করা। যাতে তা ছাড়াতে অনেকটা সময় লেগে যায় আর এই সময়টাই বোর্ড কাজে লাগাতে পারে।’’
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, লোঢা কমিটি সুপ্রিম কোর্টের কাছে স্ট্যাটাস রিপোর্ট পেশ করার পর কী হতে পারে?
সম্ভাবনা এক, আদালতে ফের শুনানি হতে পারে। যেখানে বোর্ডকে ফের তলব করা হতে পারে, তাদের যুক্তি পেশ করার জন্য।
সম্ভাবনা দুই, ফের লোঢা কমিশনকে তাদের সুপারিশ পর্যালোচনা করে নতুন করে সুপারিশ তৈরি করতে বলতে পারে আদালত।
এবং সম্ভাবনা তিন, লোঢা কমিশনকেই তাদের সুপারিশ কার্যকর করে বোর্ড চালানোর দায়িত্ব দিয়ে দিতে পারে সুপ্রিম কোর্ট।
যদিও আদালত এই মামলায় বহু অভাবনীয় এবং কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এই পরিস্থিতিতে প্রথম ও দ্বিতীয় সম্ভাবনাই প্রাধান্য পেতে পারে বলে মনে করছেন ক্রিকেট কর্তারা। যা হলে বোর্ড ফের আদালতকে তাদের সমস্যার কথা বোঝানোর সুযোগ পেয়ে যাবে। সময়ও পেয়ে যাবে অনেকটা। তার মধ্যে হয়তো সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের অবসরের সময়ও চলে আসবে।
আপাতত এই আশাতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চাইছেন অনুরাগ ঠাকুররা। কিন্তু শেষ সম্ভাবনাটা সত্যি হলে বোর্ডের লড়াই কার্যত শেষ হয়ে যাবে। যেটা কেউ দুঃস্বপ্নেও দেখতে চাইছেন না।