উৎসব: গোলের পরে গ্রিজ়ম্যানের সঙ্গে আনসু ফাতি। রবিবার। এপি
চোটের জন্য তিনি ভ্যালেন্সিয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নামতে পারেননি। শনিবার রাতে ক্যাম্প ন্যু-র গ্যালারিতে বসেই লিয়োনেল মেসি দেখলেন উত্তরসূরির নাটকীয় উত্থান। তিনি— আনসুমানে (আনসু) ফাতি।
বয়স: ১৬ বছর ৩১৮দিন
জন্ম: পশ্চিম আফ্রিকার গিনেয়া বিসাও-এ।
২০০৮ সালে স্পেনের সেভিয়ায় চলে গিয়েছিল ফাতির পরিবার। বয়স তখন মাত্র ছয়। কিন্তু নতুন দেশে চাকরি কে দেবে আনসুর বাবা ফরি ফাতিকে? বাধ্য হয়ে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে সন্তানদের জন্য খাবার ভিক্ষে করতেন। পরিস্থিতি কিছুটা বদলায় শহরের মেয়র যখন তাঁকে গাড়ি চালক হিসেবে নিয়োগ করেন। চরম আর্থিক সঙ্কটেও ছেলেদের ফুটবল খেলতে বাধা দেননি। তিনি নিজেও যে ফুটবলার ছিলেন।
দুই ছেলে বারিমা ও মিগুয়েলকে ফরি ভর্তি করে দেন স্থানীয় ক্লাব এরেরা এফসি-তে। আনসুর ফুটবল জীবনও শুরু একই ক্লাব থেকেই। সেখান থেকেই যোগ দেন লা মাসিয়ায়।
মেসি লা মাসিয়ায় যোগ দিয়েছিলেন ১৩ বছর বয়সে। আনসু যোগ দিলেন দশ বছর বয়সে। আর্জেন্টিনা অধিনায়কের মতোই ঢুকে পড়লেন সিনিয়র দলে। ২০১৯-’২০ মরসুমে আনসুকে তিন বছরের জন্য সিনিয়র দলে সই করান ক্লাব কর্তারা। লা লিগায় বার্সার হয়ে অভিষেক রিয়াল বেতিসের বিরুদ্ধে। ক্যাম্প ন্যু-তে সে দিন বলে পা ছোঁয়ানোর আগেই রেকর্ড বুকে নাম উঠে গিয়েছিল বিস্ময় বালকের।
ঘরের মাঠে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে ভেঙে ফেলেন ২০০৯ সালে গড়া মার্ক মুনিয়াসার রেকর্ড। আনসুর সামনে এখন শুধু ভিসেন্স মার্তিনেজ। ১৯৪১ সালে ১৬ বছর ২৮০ দিনে বার্সার হয়ে যিনি রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে খেলেছিলেন।
মেসি-হীন বার্সা ঘরের মাঠে ভ্যালেন্সিয়ার বিরুদ্ধে কী করবে তা নিয়ে আশঙ্কা ছিল সমর্থকদের মধ্যে। কিন্তু ম্যাচের দু’মিনিটের মধ্যেই ছবিটা বদলে দেন আনসু। তাঁর পায়ের প্রথম স্পর্শেই বল জালে জড়িয়ে যায়। গ্যালারিতে বসে থাকা মেসিও উচ্ছ্বাসে লাফিয়ে উঠেছিলেন। গত সপ্তাহেই আর্জেন্টিনা অধিনায়ক সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। তা দেখা গিয়েছে, উত্তরসূরিকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন মেসি। সাত মিনিটে বার্সার হয়ে দ্বিতীয় গোল করেন দে জং। ২৭ মিনিটে ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে ব্যবধান কমান কেভিন গেমেহো। ৫১ মিনিটে বার্সার হয়ে তৃতীয় গোল করেন জেরার পিকে। দশ মিনিট পরে চতুর্থ গোল করেন লুইস সুয়ারেস। উরুগুয়ে তারকা নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ৮৩ মিনিটে। সংযুক্ত সময়ে ভ্যালেন্সিয়ার ম্যাক্সিমিলিয়ানো গোমেজ় গঞ্জালেস ব্যবধান কমান।
ভ্যালেন্সিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচ গোলে দুরন্ত জয়। জোড়া গোল সুয়ারেসের। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে শিরোনামে বিস্ময় বালক আনসু। কার্যত একাই ঢেকে দিলেন মেসির অভাব।
উচ্ছ্বসিত স্পেন জাতীয় দলের কোচ রবার্ট মোরেনো বলেছেন, ‘‘ফেডারেশনের কর্তারা ইতিমধ্যেই আনসুকে স্পেনের হয়ে খেলানোর ব্যাপারে আসরে নেমে পড়েছেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্য আনসুকেই নিতে হবে।’’ বার্সেলোনার প্রশংসা করে মোরেনো বলেছেন, ‘‘এই সাফল্য বার্সেলোনার। ওরাই লা মাসিয়া থেকে আনসুকে তুলে এনেছে।’’
বার্সা ম্যানেজার আর্নেস্তো ভালভার্দে অবশ্য সতর্ক নতুন তারকাকে নিয়ে। ভ্যালেন্সিয়া ম্যাচের পরে তিনি বলেছেন, ‘‘প্রথম টাচেই গোল করা কিন্তু সহজ নয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় গোলের নেপথ্যেও ছিল আনসু। ও যাতে এই মানটা ধরে রাখতে পারে, তা দেখা আমাদের কর্তব্য। আনসুর থেকে আরও অনেক কিছু পাওয়ার আছে আমাদের।’’