পাশে: বার্সেলোনার রাস্তাতেও মেসির জন্য সমর্থন। ফাইল চিত্র
লিয়োনেল মেসির সঙ্গে বার্সেলোনার সম্পর্ক এখন যেন দাবার বোর্ডে লড়াইয়ের মতো। রীতিমতো অঙ্ক কষে চাল দিচ্ছে দু’পক্ষ। আইনি জটিলতা এড়াতে ৩১ অগস্ট, সোমবার ক্লাবের অনুশীলনে যোগ দেওয়ার কথা জানালেও প্রেসিডেন্ট জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউয়ের সঙ্গে কথা না বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ক্ষুব্ধ আর্জেন্টিনা অধিনায়ক।
এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নাটকীয় ভাবে বদলে গেল পরিস্থিতি। স্পেনীয় সংবাদ মাধ্যমের দাবি, বার্তোমেউ জানিয়েছেন, মেসি যদি প্রকাশ্যে বার্সায় থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন, তা হলে তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিতে তৈরি।
গত বুধবার বুরোফ্যাক্স (আইনি মহলে বেশি প্রসিদ্ধ এবং স্বাক্ষর-সহ গ্রহণ করতে হয়) পাঠিয়ে ক্লাবকে তিনি জানান, ‘ফ্রি প্লেয়ার’ হিসেবে অবিলম্বে যেন তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। যা নিয়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে বিশ্বে। ক্যাম্প ন্যু-র সামনে বিক্ষোভে সামিল হয়ে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছেন বার্সা সমর্থকেরা। বার্সেলোনা শহরের মেয়র পর্যন্ত মেসিকে রেখে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ যে বার্তোমেউ সংবাদ মাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন। তাই ক্লাবের নবনিযুক্ত স্পোর্টিং ডিরেক্টর রামন প্লেনসকেই বলতে হয়েছে, মেসিকে মধ্যমণি করেই তাঁরা দল গড়তে চাইছেন। তবে স্পেনীয় সংবাদ মাধ্যমের দাবি, বার্তোমেউ নিজেই নাকি মেসির সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। এর পরেই জল্পনা শুরু হয়, ছ’বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী ক্ষুব্ধ তারকা কি রাজি হবেন এই বৈঠকে? বুধবার লুইস সুয়ারেসের সঙ্গে নৈশভোজ করতে বেরোনো মেসির ক্লাব ছাড়ার অন্যতম কারণ তো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সঙ্ঘাত।
বৃহস্পতিবার স্পেনীয় সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছে, কোনও অবস্থাতেই বার্তেমেউয়ের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন মেসি। রাতের দিকে বার্তোমেউ পদত্যাগ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করায় পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ক্লাব প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত আসলে মেসিকে চাপে ফেলার কৌশল। আর্জেন্টিনা অধিনায়কের বিরুদ্ধে ক্লাবকে নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ উঠেছিল। যদিও মেসি বার বারই তা খারিজ করে দিয়েছেন।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও রবিবার বার্সার ট্রেনিং কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য পরীক্ষা (পিসিআর টেস্ট) করাতে যাবেন মেসি। শুধু তাই নয়। পরের দিন অর্থাৎ, সোমবার রোনাল্ড কোমানের প্রথম দিনের অনুশীলনেও যোগ দেবেন তিনি।
প্রশ্ন উঠছে, ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া মেসি কেন অনুশীলনে যোগ দেবেন? কারণ, বার্সার সঙ্গে আর্জেন্টিনীয় কিংবদন্তির চুক্তি শেষ হচ্ছে ২০২১ সালে। অনুশীলনে যোগ না দিলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে মেসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
মেসির বার্সা ছাড়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন আর্জেন্টিনার মানুষও। তাঁরা চান ম্যাঞ্চেস্টার সিটিতে ফের পেপ গুয়ার্দিওলার অধীনে খেলুন অধিনায়ক। বুয়েনস আইরেসের এক মেসি-ভক্ত গুস্তাভো লোপেসের কথায়, ‘‘আমার মতে ম্যান সিটিতেই যাওয়া উচিত মেসির। ওখানে পেপ ও আগুয়েরো রয়েছেন।’’
মেসিকে নেওয়ার দৌড়ে এই মুহূর্তে প্যারিস সাঁ জারমাঁ ও ইন্টার মিলানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ম্যান সিটি-ই। ইংল্যান্ডের সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বুধবারই মেসির বাবা আলোচনায় বসেছিলেন সিটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। ম্যান সিটিতে শুধু পেপ নন, নেমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র)-কেও দেখা যেতে পারে মেসির সঙ্গে! স্পেনের সংবাদ মাধ্যমের দাবি, ইতিমধ্যেই নাকি প্রাক্তন সতীর্থকে ফোন করে ক্যাম্প ন্যু ছেড়ে ম্যান সিটিতে খেলার কথা জানিয়েছেন তিনি। এবং নেমারকেও তিনি পাশে চাইছেন। ব্রাজিলীয় তারকা কি পিএসজি ছাড়বেন? কারণ, ক্লাবের সঙ্গে এখন দারুণ সম্পর্ক নেমারের। শেষ পর্যন্ত যদি পিএসজি ছাড়তে রাজি হন তিনি, তা হলে পুনর্মিলন হবে মেসি-নেমারের। বৃহস্পতিবার রাতের দিকে ফরাসি সংবাদমাধ্যমের দাবি, পিএসজি আধিকারিকরাও মেসির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা শুরু করেছেন।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে যে বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে ২-৮ লজ্জার হারের পরে মাঠ ছেড়েছিলেন মেসি, তিনি কি সেখানে যেতে পারেন? এই প্রসঙ্গে থোমাস মুলার মজা করে বলেছেন, ‘‘ক্লাবের ফিনান্সিয়াল ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, মেসিকে নেওয়ার আর্থিক ক্ষমতা আমাদের নেই।’’ বায়ার্নের সব চেয়ে দামি ফুটবলার হলেন রবার্ট লেয়নডস্কি, ম্যানুয়েল নয়্যার ও মুলার। এই মুহূর্তে মেসির বার্ষিক বেতন ৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৩৬ কোটি)। যা বায়ার্নের এই তিন তারকার আয়ের তিন গুণ বেশি!