অতিথি: প্রাক্তন আর্জেন্টিনীয় তারকা ক্রেসপো। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
দু’বছর আগে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের সময়ে ফিফার আমন্ত্রণে কলকাতায় আসতে পারেননি। ২০০৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে লিভারপুলের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করেও কাপ জয় হয়নি তাঁর। এসি মিলানের জার্সি গায়ে আর্জেন্টিনীয় সেই এর্নান ক্রেসপো সে বার দেখেছিলেন টাইব্রেকারে জিতে ট্রফি নিয়ে গেল লিভারপুল।
আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে তিনটি বিশ্বকাপে (১৯৯৮, ২০০২ ও ২০০৬) খেলা ক্রেসপোর তাতে কোনও হেলদোল নেই। শুক্রবার দুপুরে মধ্য কলকাতার হোটেলে বসে দার্শনিকের মতো বললেন, ‘‘এই নিয়ে তিন বার এলাম ভারতে। কলকাতাতেও চলে এলাম। শুনলাম এই শহরে নাকি আর্জেন্টিনার অনেক সমর্থক রয়েছেন? আমাদের জয়-পরাজয় নিয়ে কলকাতাও যে সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়, তা জেনে ভাল লাগছে।’’
বর্তমানে ফুটবল প্রশিক্ষণে ব্যস্ত থাকা এই আর্জেন্টিনীয় তুলনা করতে চান না মারাদোনা বনাম লিয়োনেল মেসির মধ্যে। রোনাল্ডোর সঙ্গে দ্বৈরথে এগিয়ে রাখেন মেসিকেই। তবে সঙ্গে বলেন, ‘‘মারাদোনা ভিন্ গ্রহ থেকে আসা ফুটবলার।’’ আর সেই চোখের জলে ভেসে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল? এ বার ভ্রু-কুঁচকে ক্রেসপো বলেন, ‘‘আমার মনে পড়ছে না! আপনার মনে পড়ছে নাকি?’’ যোগ করেন, ‘‘ওটা ভুলে যেতে চাই। অলিম্পিক্সের (আটলান্টা) ফাইনাল থেকে কোপা লিবারতাদোরেস, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপা লিগের ফাইনাল সর্বত্র গোল করেছি। কেবল বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলা হয়নি। এটাও কম নয়।’’
শুক্রবার সকাল পাঁচটায় কলকাতা নেমেছেন। ক্রেসপোর এই সফরের উদ্দেশ্য, রবিবার টিএসকে ২৫কে দৌড় প্রতিযোগিতার প্রধান অতিথি হওয়া। বলেন, ‘‘ম্যারাথন বা দূরপাল্লার দৌড়ে নামিনি কখনও। কিন্তু টিএসকে ২৫কে-র মতো এ রকম দৌড়ে আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত হয়।’’
রেড রোডের ধারে তাঁর বড় কাট আউটের তলায় লেখা— জীবনে লাল কার্ড দেখেননি। সে কথা তুললে এই আর্জেন্টিনীয় বিশ্বকাপার অকপটে বলে দেন, ‘‘ওটা ঠিক তথ্য নয়। ছোটবেলায় একবার রেফারির ভুলে লাল কার্ড দেখেছি।’’
১৯৯৩ সালে কোপা আমেরিকার পরে আর্জেন্টিনার ঘরে কোনও ট্রফি নেই। সে প্রসঙ্গেও উত্তেজিত হন না ‘ভালদানিতো’ (১৯৮৬ বিশ্বকাপ ফাইনালের অন্যতম গোলদাতা জর্জ ভালদানোর উত্তরসূরি মনে করা হত ক্রেসপোকে। তাই এই ডাক নাম দেন তাঁর একদা কোচ দানিয়েল পাসারেলা)। বলেন, ‘‘ব্রাজিলে আমরা বিশ্বকাপ জেতার কাছে গিয়েও ফিরেছি। ভাগ্য সঙ্গে নেই। লিয়োনেল স্কালোনির তত্ত্বাবধানে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। স্কালোনির উপরে আস্থা রয়েছে। আগামী বছর আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া যৌথ ভাবে কোপা আমেরিকা আয়োজন করবে। সেখানে ভাল ফল করব আশা করি।’’ যোগ করেন, ‘‘দোহায় তিন বছর পরে মেসি যুগের শেষ বিশ্বকাপ। সেখানে বিশেষ ফলের স্বপ্ন দেখছি। তবে বিশ্বকাপ না জিতলেও মেসিকে মুছে ফেলা যাবে না। ফুটবলে পাঁচজন কিংবদন্তি। আলফ্রেদো দি স্তেফানো, পেলে, ইয়োহান ক্রুয়েফ, দিয়েগো মারাদোনা আর মেসি।’’ আরও বলেন, ‘‘স্কালোনি ৪-৪-২ ছকে খেলান। কোপা ও বিশ্বকাপে মেসির পাশে লতারো মার্তিনেজ়কেই দেখতে চাই। আর ৪-৩-৩ ছকে এর সঙ্গে আগুয়েরো জুড়বে। এই আক্রমণ ভাগ কিন্তু অন্যতম সেরা।’’
ক্লাব ফুটবলে কার্লো অ্যাঞ্চেলোত্তি ও জোসে মোরিনহো— দু’জনের প্রশিক্ষণেই খেলেছেন। এঁদের সম্পর্কে সেরি আ ও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা ক্রেসপো বলেন, ‘‘দু’জন দুই জায়গায় বিশ্বের সেরা। কার্লো বন্ধুর মতো ফুটবলারদের সঙ্গে মিশে সেরাটা বার করে আনেন। আর মোরিনহো দুর্দান্ত উদ্বুদ্ধ করেন। আশা করছি টটেনহ্যামে নতুন চ্যালেঞ্জ দারুণ সামলাবে জোসে।’’ সঙ্গে বলে দেন, ‘‘এখন য়ুর্গেন ক্লপের প্রতি-আক্রমণভিত্তিক ফুটবল আর পেপ গুয়ার্দিওলার বলের দখল রেখে খেলার ঘরানাটাও দারুণ লাগে।’’
ভারতীয় ফুটবলে আইএসএল ও আই লিগ যে সমান্তরাল ভাবে চলে সেটাও জানেন ক্রেসপো। বলেন, ‘‘আইএসএলে মার্কো মাতেরাজ্জি, রবার্তো কার্লোস, আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরোর মতো বন্ধুরা খেলে গিয়েছে বা কোচিং করে গিয়েছে। আমাকে ডাকা হলে অবশ্যই আসব।’’
খেলোয়াড় জীবনে বাতিস্তুতার আড়ালেই দীর্ঘ সময় থাকতে হয়েছে। কিন্তু তাঁর দেখা আর্জেন্টিনার সেরা স্ট্রাইকার কে জানতে চাইলে প্রথমে হেসে বলেন নিজের নাম। তার পরে বলেন, ‘‘মজা করছিলাম। সেরা স্ট্রাইকার বাতিস্তুতা ও মারিয়ো কেম্পেস।’’ আর বিপক্ষ ডিফেন্ডার? ক্রেসপোর উত্তর, ‘‘২১ বছর বয়সে সেরি আ ম্যাচে ফ্রাঙ্কো বারেসির বিরুদ্ধে খেলেছিলাম। সেটা ওর শেষ মরসুম। কিন্তু ওই বুড়ো বারেসিকে টপকানোই ছিল পাহাড় টপকানোর মতো কাজ।’’