যুগলবন্দি: সেমিফাইনালের প্রস্তুতি চলছে ব্রাজিলের জোড়া ফলা পাওলিনহো ও লিঙ্কনের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
তিন বছর আগে অনূর্ধ্ব-১৫ ব্রাজিল জাতীয় দলের ট্রায়ালে ডাক পাওয়ার আনন্দ মুহূর্তের মধ্যে উবে গিয়েছিল লিঙ্কন ডস স্যান্টোসের!
ফেউ রোজা-য় জন্ম লিঙ্কনের। জাতীয় দলের ট্রায়াল দিতে যেতে হবে রিও দে জেনেইরোয়। কিন্তু নতুন শহরে থাকবে কোথায়? তখন লিঙ্কনের পাশে দাঁড়ায় ভিনিসিয়াস জুনিয়র। নিয়ে গেল নিজের বাড়িতে।
অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলের ট্রায়ালে ভিনিসিয়াস-ই ছিল লিঙ্কনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু মাঠের বাইরে দু’জনের মধ্যে দারুণ বন্ধুত্ব। ভিনিসিয়াস ও লিঙ্কনের মধ্যে যে কোনও এক জনকে নেওয়ার ভাবনা ছিল জাতীয় নির্বাচকদের। শেষ পর্যন্ত দু’জনকেই নেন তাঁরা। অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দল থেকেই একসঙ্গে বিখ্যাত ফ্ল্যামেঙ্গো ক্লাবের অ্যাকাডেমিতে। এ বার হয়তো রিয়াল মাদ্রিদেও দেখা যাবে তাদের। ইতিমধ্যেই ভিনিসিয়াসের চুক্তি সেরে ফেলেছে রিয়াল। এ বার তাদের নজরে লিঙ্কন। যদিও প্রতিশ্রুতিমান এই স্ট্রাইকারকে আটকাতে মরিয়া ফ্ল্যামেঙ্গো কর্তারা।
ব্রাজিল শিবিরে খোঁজ নিয়ে আশ্চর্য কাহিনি শোনা গেল লিঙ্কন সম্পর্কে। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ব্রাজিল দল থেকে চোটের জন্য ভিনিসিয়াস ছিটকে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন কোচ। তাঁকে আশ্বস্ত করে লিঙ্কন বলেছিল, ভিনিসিয়াস না থাকুক, আমি তো আছি। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে স্পেনের বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়া ব্রাজিল ঘুরে দাঁড়িয়েছিল লিঙ্কনের গোলেই। পাঁচ ম্যাচে তিন গোল করে হয়ে গিয়েছে ব্রাজিলের নতুন রোনাল্ডোর। আজ, বুধবার যুবভারতীতে ইংল্যান্ড-বধ করতে পাওলিনহো আর লিঙ্কনই ভরসা কার্লোসের।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যুবভারতী সংলগ্ন মাঠে অনুশীলন শুরু আগে ব্রাজিল কোচকে দেখা গেল, পাওলিনহো ও লিঙ্কনের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে। ভাস্কো দ্য গামা ক্লাবের ফুটবলার পাওলিনহো। লিঙ্কন খেলে ফ্ল্যামেঙ্গোয়। ব্রাজিল লিগে দুই ক্লাবের মধ্যে প্রবল রেষারেষি। কিন্তু জাতীয় দলে দুই স্ট্রাইকারের মধ্যে দারুণ বন্ধুত্ব। সেই বোঝাপড়া মাঠেও অটুট থাকে। তিন ফরোয়ার্ডে দল সাজালেও লিঙ্কন ও ব্রেনের সৌজা দ্য সিলভা থাকে সামনে। একটু পিছনে পাওলিনহো। কিন্তু ম্যাচ শুরু হওয়ার পর ক্রমাগত পাওলিনহো-র সঙ্গে জায়গা পরিবর্তন করে বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের বিভ্রান্ত করে দেয় লিঙ্কন। আই এম বিজয়ন বলছিলেন, ‘‘পাওলিনহোকে নিয়ে মাতামাতি হয়তো একটু বেশি হচ্ছে। কিন্তু আমার মতে ব্রাজিল দলে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর লিঙ্কন। বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের মধ্যে নিজেকে লুকিয়ে রাখে। গোলের সম্ভাবনা তৈরি হলেই বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে।’’ এমনকী, ব্রাজিলের নতুন রোনাল্ডোও বলা হচ্ছে লিঙ্কনকে।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপেও দুরন্ত ফর্মে ব্রাজিলের নতুন রোনাল্ডো। পাঁচ ম্যাচে তিন গোল হয়ে গিয়েছে। সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার দৌড়ে প্রবল ভাবেই রয়েছে লিঙ্কন। যদিও তা নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নয় সে। টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্যের কথায়, ‘‘সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া নিয়ে লিঙ্কন ভাবছেই না। ও খুশি দল জিতলেই। লিঙ্কন শুধু দারুণ ফুটবলার নয়, দুর্দান্ত টিমম্যানও।’’
ব্রাজিল শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, টিম হোটেলে সতীর্থদের ফাঙ্ক ড্যান্স শেখানোর দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে লিঙ্কন। কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে স্পেনের বিরুদ্ধে গোলের পর তার ফাঙ্ক ড্যান্স মাতিয়ে দিয়েছিল। বাকিদেরও তার ক্লাস চলছে। আজ যুবভারতীতে কি দেখা যাবে ব্রাজিলের নতুন নাচ?