শিখর ধওয়ন সাম্প্রতিক কালে টি-টোয়েন্টিতে বড় রান করতে পারছে না।
এক বছর পরে এই সময়েই অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবে ভারত। তার আগে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারতের পারফরম্যান্স আমাকে কিন্তু মোটেও সন্তুষ্ট করতে পারছে না। আমার মতে, দলটাই ঠিক বাছা হচ্ছে না।
তার মানে এই নয় যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সাত উইকেটে ফিরোজ শাহ কোটলায় হারের পরেই রে রে করে আমি সমালোচনায় নেমে পড়েছি। একটু খতিয়ে পর্যালোচনা করা হলে দেখবেন, ওয়ান ডে বা টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের ছেলেরা যে রকম দাপটের সঙ্গে খেলে চলেছে, সেই ছন্দে কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে খেলতে পারছে না ভারতীয় দল। পাঠক নিশ্চয়ই এ ক্ষেত্রে বিশ্বকাপের পরে হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের কথা উল্লেখ করবেন। যেখানে ৩-০ জিতে ফিরেছে ভারতীয় দল। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজে কিন্তু হারতে হয়েছিল ভারতকে। এ বার বাংলাদেশও ভারতের বিরুদ্ধে প্রথমবার কোনও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে নিল গত রবিবার।
প্রশ্ন উঠছে, সাম্প্রতিক কালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারতের এই সাফল্য না পাওয়ার কারণটা কী? আমার মতে এর কারণ হল একটাই। তা হল দল নিয়ে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথে হাঁটা। নিজে জাতীয় নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেছি। তাই জানি, যে কোনও বিশ্বকাপের আগেই সেরা দলটাকে এক বছর আগেই বেছে ফেলা জরুরি। তার পরে সেই দলটাকে কয়েকটি সিরিজে খেলিয়ে নিয়ে বিশ্বকাপে নামলে দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, পারস্পরিক বোঝাপড়া দু’টোই থাকে। যা দলকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
এগারো মাস পরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তা হলে তার প্রস্তুতি তো এখন থেকে নিতে হবে। যার ছাপ থাকবে দল গঠনে। কিন্তু সেটা হচ্ছে কোথায়? অধিনায়ক বিরাট কোহালি টানা ক্রিকেট খেলার পরে ক্লান্ত। বিশ্রামে গিয়েছে। এই অবস্থায় শাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবাল-হীন বাংলাদেশকে কি দুর্বল ভেবেছিল ভারতীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক? তাই কি খলিল আহমেদ, দীপক চাহার, ওয়াশিংটন সুন্দর, শিবম দুবেদের নিয়ে এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা? কেন রবীন্দ্র জাডেজা, কুলদীপ যাদব, আর অশ্বিনরা দলের বাইরে বসে রয়েছে? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটা তো সকলেই জানেন যে, ফর্ম্যাট যত ছোট হয়ে আসে, তত ছোট দলগুলোর দাপট বেড়ে যায়। সেখানে ভারত শক্তিশালী দল নিয়ে কেন নামছে না, সেটাই বড় প্রশ্ন আমার কাছে। কারণ, আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে খুব বেশি হলে পনেরোটির মতো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে খেলতে পারে ভারত। তা হলে সেরা দল কেন খেলবে না?
ব্যাটিংয়ে রোহিত শর্মাকে নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু শিখর ধওয়ন সাম্প্রতিক কালে টি-টোয়েন্টিতে বড় রান করতে পারছে না। টিম ম্যানেজমেন্টকে বুঝিয়ে দিতে হবে, দল ওর কাছ থেকে কী চাইছে। শিখরের দায়িত্ব যে ৪০-৪২ রান করলেই শেষ হয় না, সেই কড়া বার্তা দেওয়ার সময় এসেছে। টি-টোয়েন্টি তারুণ্যের খেলা। পেশিশক্তির ক্রিকেট। পরীক্ষা-নিরীক্ষাই যদি করতে হয়, তা হলে শিখর যদি রোহিতের সঙ্গে ওপেনিংয়ে দলের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারে, সে ক্ষেত্রে ওর জায়গায় ওপেন করানো হোক ঋষভ পন্থকে। বয়স কম, সাহস আছে, পেশির জোরও বেশ। ঋষভ কিন্তু ওপেনিংয়ে সফল হয়েও যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সঞ্জু স্যামসনকে উইকেটরক্ষক হিসেবে দেখে নেওয়ার সুযোগ থাকত। আমার মতে, ঋষভকে চাপমুক্ত হয়ে ওর নিজের মতো খেলতে দেওয়া হোক। প্রত্যাশার চাপেই হয়তো ভুল করে ফেলছে ছেলেটা। মনে রাখতে হবে, ঋষভ কিন্তু আগামী দিনের ‘ম্যাচ উইনার’।
কে এল রাহুলকেও অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে থাকতে গেলে ওকে রান করে দেখাতে হবে। শ্রেয়স আইয়ারকে নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন এটাই চোটের কারণে যখন হার্দিক পাণ্ড্য দলে নেই, তা হলে সেই জায়গায় কেন শিবম দুবে? কেন রবীন্দ্র জাডেজা নয়? ছেলেটার ব্যাটের হাত ভাল। তেমন ভাল ফিল্ডার। তেমনই টি-টোয়েন্টির কার্যকর বোলার। কিন্তু জাডেজাই দলে নেই।
জানি না এক বছর পরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ক্রুণাল পাণ্ড্য, ওয়াশিংটন সুন্দরকে দিয়ে বল করানোর কোনও পরিকল্পনা রয়েছে কি না? ওয়াশিংটনকে তো বিজয় হজ়ারে ট্রফিতে ওর রাজ্য তামিলনাডু়ই বোলার নয়, ব্যাটসম্যান হিসেবে এ বার খেলিয়েছে। তা হলে কেন ওয়াশিংটন? কেন অশ্বিন নয়? কোথায় কুলদীপ যাদব?
হার্দিক পাণ্ড্য ও বুমরার চোট। মহম্মদ শামির বিশ্রামেও যুক্তি রয়েছে। তা হলে নবদীপ সাইনি বা উমেশ যাদব দলে নেই কেন? ওদের বিকল্প কখনও খলিল আহমেদ হতে পারে না।
দ্রুত তাই টি-টোয়েন্টির সেরা দলটা আমাদের ঠিক করে নেওয়া জরুরি। তার পরে সেই দল নিয়েই পরবর্তী সিরিজে নামুক ভারত। যা বিশ্বকাপের আগে বিরাট কোহালির দলকে শক্তিশালী করবে আরও।