মধ্যমণি: দেশের মাটিতে শেষ এটিপি প্রতিযোগিতা খেলার পরে লিয়েন্ডার পেজকে সংবর্ধনা প্রাক্তন অ্যাথলিটদের। রবিবার বেঙ্গালুরুতে। পিটিআই
চুয়াল্লিশ বছরে দেশকে অলিম্পিক্সে প্রথম ব্যক্তিগত পদক দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে আটলান্টায়। জগৎসভায় দেশের পতাকা আরও উচুঁতে তুলে ধরার সেই গৌরব ভারতীয় ক্রীড়াজগতের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা। সেখান থেকে ২০২০। বেঙ্গালুরু ওপেন। দেশের মাটিতে শেষ বার কোনও এটিপি প্রতিযোগিতায় খেলতে নেমে এখনও তিনি একই ভাবে গর্বিত। হোক না ডাবলস ফাইনালে নেমেও হার। তবু তিনি খুশি সেরা জায়গা থেকেই অবসরের সিদ্ধান্ত নিতে পারায়। তিনি— লিয়েন্ডার পেজ।
অস্ট্রেলীয় সঙ্গী ম্যাথু এবডেনের সঙ্গে জুটিতে ডাবলসের ফাইনালে ভারতীয় জুটি পূরব রাজা এবং রামকুমার রামনাথনের বিরুদ্ধে হারার পরে আবেগরুদ্ধ লিয়েন্ডার। ‘‘সেরা জায়গায় থেকেই শেষ করার থেকে ভাল আর কী হতে পারে। আমি চাইনি এমন একটা সময় অবসর নিতে যখন লোকে বলবে, আর কেন খেলছ। আমি চেয়েছিলাম ট্রফি হাতেই শেষ করতে। সেটা বিশেষ অনুভূতি হয়ে থাকবে। পিট সাম্প্রাস অবসর নিয়েছিল যখন সেরা জায়গায় ছিল। মাইকেল জর্ডানও তাই,’’ বলেন লিয়েন্ডার।
আগেই লিয়েন্ডার জানিয়ে দিয়েছিলেন, পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে চলতি মরসুমই শেষ। এর পরেই তিনি টেনিসকে বিদায় জানাবেন। ১৮টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ীর কেরিয়ারের এই বিদায়ী মরসুমকে বলা হচ্ছে, ‘দ্য লাস্ট রোর’ (শেষ গর্জন)। গোটা খেলোয়াড় জীবনে তিনি ভক্তদের তাঁর সাফল্যে গর্জে ওঠার সুযোগ কম দেননি। তা সে অলিম্পিক্স ব্রোঞ্জ পদক জয় হোক, ১০টি মিক্সড ডাবলস ও ৮টি ডাবলস গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব হোক বা ডেভিস কাপে ডাবলসে সর্বাধিক জয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়া। ‘‘কেউ যদি আগে বলত, ঘরের মাঠে শেষ প্রতিযোগিতায় আমি ফাইনালে খেলব, তা হলে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী শুনে খুব আনন্দ হত,’’ ফাইনালে হারের পরে বলেন ৪৬ বছর বয়সি কিংবদন্তি।
ভারতীয় টেনিসের ‘চিরতরুণ’ উচ্ছ্বসিত ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উৎসাহ দিতে পেরে। তিনি বলেন, ‘‘যখন ম্যাচটা শেষ করে ভক্তদের সই দিচ্ছিলাম, এক খুদে খুব বেশি হলে পাঁচ-ছ’বছর বয়স হবে, এগিয়ে এল। দু’গালে তেরঙ্গা আঁকা। আমার দিকে সে এগিয়ে দিল ‘ওয়ান লাস্ট রোর’ টি-শার্ট। যা ওর শরীরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। টি-শার্ট এগিয়ে দিয়ে সে বলল, আমায় একটা অটোগ্রাফ দেবেন? আমার চেয়ে বয়সে ৪০ বছরের ছোট একজন ভক্ত যখন এ রকম একটা আব্দার করছে, তার মানে সে জানে এতদিন আমি কী অর্জন করেছি।’’
রবিবার লিয়েন্ডারকে বেঙ্গালুরুতে সংবর্ধিত করেন প্রাক্তন ভারতীয় খেলোয়াড়েরা। ছিলেন প্রাক্তন হকি খেলোয়াড় জুড ফেলিক্স, ভি আর রঘুনাথ, অর্জুন হলপ্পা, প্রাক্তন অ্যাথলিট অশ্বিনী নাচাপ্পা ও ডেভিস কাপার প্রহ্লাদ শ্রীনাথেরা। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লিয়েন্ডার বলেন, ‘‘তোমরা সবাই আমায় শেখালে কী ভাবে খেলাধুলোর উপর আবেগ, নিষ্ঠা, পরিশ্রম সাফল্যের পথে নিয়ে যায়।’’