IPL Scam

নিলাম থেকে আম্পায়ার, গড়াপেটা করা হয়েছিল সব জায়গায়: শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ললিতের

ঠিক কী অভিযোগ করেছেন মোদী? ইংল্যান্ডে বসবাসকারী, আইপিএলের প্রাক্তন কমিশনার একটি ইউটিউব চ্যানেলে বলেছেন, ‘‘শ্রীনিবাসন আমার শত্রু ছিল। ও কখনও আইপিএলকে পছন্দ করত না।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:২৩
Share:

(বাঁ দিকে) শ্রীনিবাসন, ললিত মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

দু’দিন আগেই শেষ হয়েছে আইপিএলের মহানিলাম। যা নিয়ে উত্তেজনা কম হয়নি। সেই উত্তেজনা কমতে না কমতেই বোমা ফাটালেন ললিত মোদী। বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন প্রাক্তন ভারতীয় বোর্ড সভাপতি শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে। সরাসরি জানিয়ে দিলেন, আম্পায়ার নিয়ে গড়াপেটা, নিলাম নিয়ে গড়াপেটা করেছিলেন শ্রীনিবাসন। আইপিএলের অপসারিত চেয়ারম্যান মোদী আরও জানিয়েছেন, শাহরুখ খানের প্রথম পছন্দ নাকি কলকাতা নাইট রাইডার্স ছিল না।

Advertisement

মোদীর এই অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্রিকেট দুনিয়া। ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে আইপিএল নিয়ে কেলেঙ্কারি। অতীতে বারবার কাঠগড়ায় উঠেছে আইপিএল। ম্যাচ গড়াপেটা থেকে শুরু করে জড়িয়ে গিয়েছে নানা বিতর্কে। সেই বিতর্ক প্রবল ভাবে ফিরে এল আইপিএলকে কেন্দ্র করে।

ঠিক কী অভিযোগ করেছেন মোদী? ইংল্যান্ডে বসবাসকারী, আইপিএলের প্রাক্তন কমিশনার একটি ইউটিউব চ্যানেলে বলেছেন, ‘‘শ্রীনিবাসন আমার শত্রু ছিল। ও কখনও আইপিএলকে পছন্দ করত না। ভেবেছিল, আইপিএল সফল হবে না। কিন্তু এক বার যখন সবাই বুঝল আইপিএল বিপ্লব আনতে চলেছে ক্রিকেটে, তখনই সবাই ক্ষির খেতে চলে আসে।’’

Advertisement

মোদী তুলে এনেছেন ২০০৯ সালের আইপিএল মরসুমের কথা। যে সময় শ্রীনিবাসন এক দিকে যেমন ভারতীয় বোর্ডের সচিব, সে রকমই আবার চেন্নাই সুপার কিংসের মালিকও। মোদী বলেছেন, ‘‘আমি বুঝেছিলাম, শ্রীনিবাসন আইপিএলের ক্ষতি করবে। সে জন্য আমি ওর বিরুদ্ধে মুখ খুলি। এর পরে ও আম্পায়ার ফিক্সিং করা শুরু করে।’’

কী ভাবে সেটা করতেন শ্রীনিবাসন? মোদীর কথায়, আম্পায়ার গড়াপেটা করতেন শ্রীনি। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম দিকে দেখতাম, শ্রীনি আম্পায়ার বদলে দিচ্ছে। আমি ঠিক বুঝতে পারিনি ব্যাপারটা। পরে বুঝলাম, ও চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচে চেন্নাইয়ের আম্পায়ার দিচ্ছে। ব্যাপারটা নিয়ে আমার ভীষণই আপত্তি ছিল। আমার কাছে এটা স্রেফ ফিক্সিং। যখন ব্যাপারটা ফাঁস করে দিতে চাই, শ্রীনিবাসন আমার বিরুদ্ধে চলে যায়।’’

এ তো গেল একটা দিক। আম্পায়ারিং নিয়ে গড়াপেটা করার পাশাপাশি আইপিএল নিলামেও নিজের জোর খাটিয়েছিলেন শ্রীনিবাসন বলে মোদীর অভিযোগ। যে নিলাম হয়েছিল ওই ২০০৯ মরসুমে। যাকে মোদী বলছেন, নিলাম-গড়াপেটা। মোদীর দাবি অনুযায়ী, ওই নিলামের আগে সব দলকে বলে দেওয়া হয়েছিল, কেউ যেন অ্যান্ড্রু ফ্লিন্টফের জন্য না ঝাঁপায়। কারণ, ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডারকে নেবে সিএসকে।

ওই ইউটিউব চ্যানেলে মোদী বলেছেন, ‘‘নিলামে অনেক কিছু হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত নিলাম-পরিচালক হাতুড়ি মেরে ঘোষণা করে দেন, ফ্লিন্টফ যাচ্ছে চেন্নাইয়ে। আমিই ওকে সিএসকে-র হাতে তুলে দিয়েছিলাম।’’ মোদী আরও বলেন, ‘‘শ্রীনিবাসন বলেছিল, ফ্লিন্টফকে চাই। শ্রীনিবাসন আমার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমাকে আইপিএলটা একার হাতে পরিচালনা করতে হচ্ছিল। তাই আমি সব রকম কাঁটাকে সরাতে চেয়েছিলাম।’’

এর পরে নির্বাসিত হন মোদী। তাঁকে দেশ ছেড়েও চলে যেতে হয়। সিএসকে অবশ্য বিতর্কের হাত থেকে রেহাই পায়নি। ২০১৩ সালে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। নাম জড়িয়ে যায় শ্রীনিবাসনের জামাই গুরুনাথ মইয়াপ্পনের। যিনি সিএসকে-র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর পরে দু’বছর নির্বাসনে থাকতে হয় সিএসকে দলকে। স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ওই সময় নির্বাসিত হয়েছিল রাজস্থান রয়্যালসও। এস শ্রীসন্থের মতো ক্রিকেটারকেও নির্বাসিত করা হয়।

মোদীর মুখে শোনা গিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং শাহরুখ খানের কথাও। প্রাক্তন ক্রিকেট কর্তার মতে, কলকাতা মোটেই শাহরুখের প্রথম পছন্দ ছিল না। মোদী বলেছেন, ‘‘ভারতে বলিউড আর ক্রিকেট খুব বিক্রি হয়। সে জন্য আমি শাহরুখকে আইপিএলে চেয়েছিলাম। ওর সঙ্গে আমি স্কুলে পড়েছি। ওকে বলেছিলাম, তুমি আইপিএলে এস। ক্রিকেট নিয়ে শাহরুখ বেশি কিছু না জানলেও একটা দল কেনার জন্য দর দিয়েছিল।’’ ২০০৮ সালে শাহরুখ মোটামুটি ৫৭০ কোটি টাকায় কেকেআর-কে কিনে নেয়।

মোদী এখন ফাঁস করেছেন, ওই সময় শাহরুখের পছন্দের দল ছিল মুম্বই ইন্ডিয়ানস। তাঁর মন্তব্য, ‘‘শাহরুখের প্রথম পছন্দ ছিল মুম্বই। কিন্তু মুকেশ অম্বানী সেই দলটা কিনে নেয়। শেষ পর্যন্ত কলকাতা দলকে কেনে শাহরুখ।’’

মোদী-জমানায় আরও একটি বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছিল। নিলামে নতুন দল কোচি কেনা নিয়ে বিতর্কে নাম জড়িয়ে যায় সাংসদ শশী তারুর এবং তাঁর প্রয়াত স্ত্রী সুনন্দা পুস্করের। যা নিয়ে মোদী বলেছেন, ‘‘কোচি দলকে বিক্রির সময় যখন দরপত্র চাওয়া হয়েছিল, তখন শশী তারুর আমাকে হুমকি দেয়। জোর করে আমাকে দিয়ে সুনন্দা পুস্করের নামে ২৫ শতাংশ শেয়ার লিখিয়ে নেওয়া হয়। যার মূল্য ছিল বহু কোটি টাকা। অথচ সুনন্দা পুস্করের কোনও অবদান ছিল না। এর নেপথ্যে ছিল শশী এবং ১০ জনপথ রোডের বাসিন্দা।’’ মোদী এও জানিয়েছেন, দাউদ ইব্রাহিমের হুমকি পাওয়ার পরেই তাঁকে ভারত ছাড়তে হয়েছিল।

মোদীর এই বিস্ফোরক অভিযোগের ধাক্কা ক্রিকেটকে কী ভাবে নড়িয়ে দেয়, সেটাই এখন দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement