শিবানী আগরওয়ালা নিজস্ব চিত্র
সম্পূর্ণ অখ্যাত একটি খেলা। অনেকেই নাম শোনেননি। সেই খেলাতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দু’টি পদক নিয়ে এসেছেন কলকাতার মেয়ে শিবানী আগরওয়ালা। আগামী নভেম্বরে ফ্রান্সে হবে আরও একটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে তৃতীয় পদকের সন্ধানে যাচ্ছেন তিনি।
শিবানী যে খেলাটি খেলেন, তার পোশাকি নাম ‘কেটেলবেল’। রাশিয়া-জাত এই খেলাটি মূলত পূর্বতন সোভিয়েট ইউনিয়নে ব্যপক জনপ্রিয় ছিল। সোভিয়েট ভেঙে যাওয়ার পর উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান-সহ অনেক দেশেই এই খেলার চল রয়েছে। আন্তর্জাতিক কেটেলবেল ম্যারাথন সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক গিরা ক্রীড়া সংস্থা এই খেলা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে আয়োজন করে।
এই খেলায় কেটলির আকারের একটি ভারী বস্তু নির্দিষ্ট বৃত্তে ঘোরাতে হয়। জিনিসটি দেখতে অনেকটা হাতলওয়ালা ক্যাননবলের মতো। ১০ মিনিটের মধ্যে যিনি যত বেশি ঘোরাতে পারবেন, তিনি বিজয়ী হবেন। কেটেলবেলের বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। শিবানী ৩৫-৩৯ কেজি বিভাগে সোনা এবং ওপেন বিভাগে রুপো জিতেছেন।
শিবানীর ইভেন্টের নাম স্ন্যাচ। এই বিভাগে ১৬ কেজির কেটেলবেল দু’পায়ের ফাঁকে মাটিতে রাখা থাকে। সেটি মাথার উপর দিয়ে ঘুরিয়ে আবার মাটিতে রাখতে হয়। ১০ মিনিটের মধ্যে যিনি এই কাজ সব থেকে বেশি করতে পারবেন, তিনি জিতবেন। ৭৩ বার ঘুরিয়ে সোনা জিতেছিলেন শিবানী। তাঁর বক্তব্য, আরও ভাল ফল করতে পারতেন। কিন্তু একে অচেনা দেশ, তার উপর তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে যাওয়ায় ভাল পারফর্ম করতে পারেননি তিনি। এ ছাড়া মালয়েশিয়ায় কেটেলবেল চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জিতেছেন শিবানী। কলকাতাতেও ২০১৩ সালে কেটেলবেল চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছিল।
এই খেলায় হাতের উপর প্রচণ্ড চাপ পড়েওবলেও জানিয়েছেন শিবানী। নিজস্ব চিত্র
এই খেলায় সঙ্গে শিবানীর যুক্ত হওয়া সম্পূর্ণ আকস্মিক ভাবে। কোনও দিনই ক্রীড়াবিদদের মতো চেহারা ছিল না। সন্তানের জন্মের পর শরীরের বাড়তি ওজন ঝরাতেই কেটেলবেল-এ অনুশীলন শুরু করেন। ধীরে ধীরে খেলাটার প্রতি প্রেম জন্মে যায় তাঁর। শহরে থাকলে একদিনও অনুশীলনে কামাই দেন না। ক্রীড়াবিদদের মতো শরীর না থাকা সত্ত্বেও স্রেফ দায়বদ্ধতা এবং মনের জোরে তিনি সহজেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় জয় পাচ্ছেন।
শিবানী পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। আগে একটি নামী বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেছেন। তবে এখন তাঁর ধ্যানজ্ঞান পুরোপুরি কেটেলবেলেই।