যুযুধান: আজ, চেন্নাইয়ে মুখোমুখি কোহালি-মর্গ্যান। আরসিবি, কেকেআর
অইন মর্গ্যান বনাম বিরাট কোহালি। যুযুধান দুই দলের অধিনায়ক। এক জন ২০১৯ বিশ্বকাপ জিতেছেন। অন্য জন পারেননি। চেন্নাইয়ের মাঠে রবিবার কি কোথাও ঠান্ডা স্রোত বইবে তাঁদের মধ্যে? বিশ্বকাপ যন্ত্রণা ঠিকরে বেরবে না কোহালির চোখেমুখে?
আন্দ্রে রাসেল বনাম শাহবাজ় আহমেদ। এক জন শাহরুখ খানের দলের ডন ওয়ান, ডন টু, ডন থ্রি সব। একটা গোটা দলের সাফল্য-ব্যর্থতা আর কখনও এতটা এক জনকে ঘিরে আবর্তিত হয়নি আইপিএলে। যতটা রাসেলকে নিয়ে হয় নাইট রাইডার্সে। কখনওসখনও মনে হয়, দলটার নামই হওয়া উচিত ছিল রাসেল রাইডার্স। রবিবার আইপিএলের শক্তিমানের পরীক্ষা এক নবাগতের সামনে। যিনি কোভিড-১৯ স্রোত আছড়ে পড়ার আগে রঞ্জি ট্রফিতে প্রাণান্তকর চাপের মধ্যে একের পর এক ম্যাচে অনুষ্টুপ মজুমদারের সঙ্গে ছিলেন বাংলার ত্রাতা। রঞ্জিতে বেসামাল হয়ে পড়া নৌকো বার বার অনমনীয় প্রত্যয় নিয়ে তরীতে নিয়ে এসেছিলেন। আইপিএলের নবীন বরণ মঞ্চে সুযোগ পেয়েই তাঁর সেই হার-না-মানা মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন শাহবাজ়। যাঁর মধ্যে চিরকালীন যোদ্ধা অরুণ লালের ছোঁয়া। এক ওভারে তিন উইকেট তুলে নিয়ে ডেভিড ওয়ার্নারদের সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদকে অবধারিত ভাবে জেতা ম্যাচ মাথা নিচু করে ফিরিয়েছেন। এখনকার দিনে আর কম্পিউটার বিশ্লেষকের ঘরেও যেতে হয় না ক্রিকেটারদের। প্রত্যেক বোলারের মোবাইলে ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা সকালবেলাতেই এসে যায়। শাহবাজ় এবং তাঁর অধিনায়ক বিরাট কোহালির মোবাইলেও নিশ্চয়ই এত ক্ষণে পৌঁছে গিয়েছে, আগের ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ক্রুণাল পাণ্ড্য কী ভাবে ভোঁতা করে দিয়েছিলেন রাসেলকে। ১৫ বলে ৯ করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা। তাঁর মতো আইপিএল পালোয়ানের থেকে এমন স্লথ ব্যাটিং চমকে ওঠার মতো। ঘটনা হচ্ছে ক্রুণালের মতোই টেনে টেনে বাঁ হাতি স্পিন করান শাহবাজ়। খুব বেশি বল ঘোরে না কিন্তু পড়ে দ্রুতগতিতে বেরিয়ে যায়, যা অনেক সময়েই ব্যাটসম্যানের মনে ধাঁধার সৃষ্টি করে। তার উপরে চেন্নাইয়ের বাইশ গজে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে বিমান হারিয়ে যাওয়ার মতো অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে সব আগ্রাসী ব্যাটসম্যানদের শট। নাইট রাইডার্স যেমন অবিশ্বাস্য ভাবে ম্যাচ তুলে দিয়ে এসেছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হাতে, তেমনই সানরাইজ়ার্স জেতা ম্যাচ হারল আরসিবি-র কাছে। এ দিন ফের ওয়ার্নারদের রান তাড়া গুলিয়ে গেল মুম্বইয়ের সামনে। জেতা ম্যাচ তুলে দিলেন মুম্বইয়ের হাতে।
সেই রহস্যময় চেন্নাই পিচ। সেই শটের ওস্তাদদের সংগ্রাম। রবিবারেও যদি চলতে থাকে, রাসেল কী করে চক্রব্যূহ কেটে বেরবেন? তফাত হচ্ছে, রাতের নয়, এটা দিনের ম্যাচ। তাই পিচ বেশি শুকনো থাকবে, শিশিরের প্রভাবে বল পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ব্যাটসম্যান রাসেলের বড় বড় ছক্কা দেখা না দিলে বাজিগরের দলের বাজিমাত করা কঠিন। তা সে বোলার রাসেল যতই জগিং করতে করতে এসে পাঁচ উইকেট নিয়ে যাওয়ার কেরামতি দেখান।
শাহবাজ় বনাম রাসেল দ্বৈরথে কোথাও যেন বাংলা বনাম কলকাতা বাজনাও থাকছে। এমনিতেই বঙ্গ ক্রিকেটমহলে চিরকালীন ক্ষোভ, নাইট রাইডার্স কর্তারা এ রাজ্যের ক্রিকেটারদের দলে নিতে চান না। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো তারকাকেও নিলামে অপমানিত করা হয়েছে বলে এখনও গজরায় বাঙালি। তাই শাহবাজ় যখন বল করতে আসবেন, কলকাতার ক্রিকেট ভক্তদের একটা অংশ টিভির সামনে বসে আরসিবির হয়ে গলা ফাটালেও অবাক হওয়ার থাকবে না।
নাইট ভক্তদের জন্য আশার তথ্য হচ্ছে, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধ বরাবরই ব্যাট হাতে দারুণ সফল রাসেল। যদি পুরনো রেকর্ড তাতিয়ে তোলে তাঁকে। আবার ভুলে গেলে চলবে না, ক্রিকেটে প্রত্যেকটা দিনই নতুন দিন। অতীতে কে কী করেছে, তা দিয়ে কিছু হয় না।
নাইটদের সব চেয়ে বেশি করে চিন্তা থাকবে তাদের মাঝের দিকের ব্যাটিং নিয়ে। এত বড় বড় সব নাম, এত অভিজ্ঞতা। কিন্তু ম্যাচ তুলে দিয়ে এল মুম্বইয়ের হাতে। মর্গ্যানের অধিনায়কত্ব যতই তাজা বাতাস আনুক, ব্যাটসম্যান মর্গ্যানকে রান পেতে হবে। দীনেশ কার্তিক খুব ভাল স্পিন খেলেন এবং চেন্নাইয়ের পিচে সব চেয়ে বড় রক্ষাকর্তা হতে পারতেন। কারও কারও মত, কার্তিককে আরও উপরের দিকে পাঠানো যেত। আবার অন্য মত হচ্ছে, চেন্নাইয়ের পিচে শেষের দিকে খেলা কঠিন হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের। তার জন্য বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান থাকুক। রাসেলকে বরং নতুন বলে পাঠানো হোক। ওই সময়টাতেই রান তোলা সব চেয়ে সহজ। নাইটদের প্রথম পাওয়ার প্লে-তে বেশি রান তোলার দিকে মন দিতে হবে শেষের ওভারগুলোতে রান খরা মেরামত করতে গেলে।
আরসিবি ব্যাটিংয়ের গভীরতা তাদের এই সুবিধা দিচ্ছে। শুরুতে বিরাট, মাঝের দিকে এবি ডিভিলিয়ার্সের সঙ্গে দারুণ শুরু করেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। পিচ বুঝে ব্যাট করছেন ম্যাক্সওয়েল। শুধু বড় শট নিতে যাচ্ছেন না, ইনিংসকে গোছানোর চেষ্টাও করছেন।
মর্গ্যান ফের স্পিনার দিয়েই শুরুর ওভারগুলোতে আক্রমণ শানাতে পারেন। বিরাট কোহালি যে হালফিলে স্পিনারদের বিরুদ্ধে কয়েক বার আউট হয়েছেন, তা নিশ্চয়ই মাথায় থাকবে মর্গ্যানের। ধোনি দু’শোতম ম্যাচ খেললেন চেন্নাইয়ের হয়ে। এ বার কোহালিও মাইলফলকের সামনে। আর ৫৬ রান করলে তিনি প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে ৬,০০০ রান
করে ফেলবেন।
রবিবারের মহারণে আরও একটা দ্বৈরথ আছে। কেকেআরের শুভমন গিল বনাম আরসিবি-র মহম্মদ সিরাজ। এত দিন জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছিলেন। তরুণ প্রজন্মের দুই মুখ আজ একে অন্যকে টেক্কা দিতে ছুটবেন।