জিতে পরিচিত ভঙ্গিতে উৎসব শাহরুখের। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
নতুন মরসুমে নতুন অধিনায়ক কলকাতা নাইট রাইডার্স-এ। দিন কয়েক আগেই শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফিতে মারকাটারি ইনিংস খেলে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছে দীনেশ।
ইডেনে রবিবার লড়াই ছিল ভারতীয় ক্রিকেটের ভিকে বনাম ডিকে-র— বিরাট কোহালি বনাম দীনেশ কার্তিক। ইডেনে দু’টো বিষয় দেখতে তাই মুখিয়ে ছিলাম।
এক, ইডেনে বিরাট কোহালির ব্যাটিং। দুই, আইপিএল-এ নতুন দলের দায়িত্ব পাওয়ার পরে কেমন অধিনায়কত্ব করেন কেকের অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক। বিরাট হয়তো এ দিন তেমন বড়সড় কিছু করতে পারেনি। একটা চার ও ছক্কা সহযোগে ওর ৩৩ বলে ৩১ রানের ইনিংস খারাপ নয়। কিন্তু বিরাট কোহালি ব্যাট হাতে বাইশ গজে বিচরণ করলে ওর কাছ থেকে বাড়তি প্রত্যাশা থেকেই যায়। সেই প্রত্যাশা পূর্ণ হয়নি আমার ও ইডেনের ক্রিকেটপ্রেমীদের। সেখানে আমাকে মুগ্ধ করে দিয়ে গেল কেকেআর অধিনায়ক দীনেশ কার্তিকের অধিনায়কত্ব। আরসিবি-র ব্যাটিংয়ের সময় দুর্দান্ত ভাবে বোলিং পরিবর্তন করে বিপক্ষের রান আটকে রাখল১৭৬-৭। পরে ব্যাট হাতে ২৯ বলে ৩৫ রান করে কেকেআর ইনিংসকে টেনে নিয়ে গেল। ফলে সাত বল বাকি থাকতেই চার উইকেটে প্রথম ম্যাচ জিততে অসুবিধা হয়নি কলকাতা নাইট রাইডার্সের।
শেষ ওভারে বিনয় কুমারকে বল করতে ডাকার ব্যাপারটা অবশ্য আমার মন মতো হয়নি। কিন্তু বাকি ১৯ ওভার বেশ সাড়া জাগানো অধিনায়কত্ব করে গেল ডিকে। শেষ ওভার বাদ দিলে দুর্দান্ত বোলিং পরিবর্তন করল। ফিল্ডিংয়ের সময় ক্রমাগত বোলিং পরিবর্তন করে চাপ বাড়াচ্ছিল বিরাট কোহালি-দের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর-এর উপর। দীনেশের ধুরন্ধর অধিনায়কত্বের জন্যই ১৫-২০ রান কম হয়ে গেল আরসিবি-র না হলে এবি ডিভিলিয়ার্স ও বিরাট কোহালি যখন ব্যাট করছিল, তখন মনে হচ্ছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের রান ২০০-র কাছাকাচি চলে যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আরসিবি ইনিংস ১৭৬-৭ শেষ হয়েছে নাইট অধিনায়কের ক্রিকেট বুদ্ধিতেই।
আলিঙ্গন: বিরাটকে দেখতে পেয়েই জড়িয়ে ধরলেন শাহরুখ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এমনিতেই কেকেআর-এর যেমন ব্যাটিং গভীরতা, ঠিক তেমনই ওদের বোলিং শক্তি। সেখানে বিনয় কুমারকে দিয়ে প্রথম ওভার বল করিয়ে স্কোরবোর্ডে ১৪ রান উঠে যাওয়ার পরেই দীনেশ দ্রুত বুঝে গিয়েছিল, ব্রেন্ডন ম্যাকালাম ও কুইন্টন ডি কক-এর সামনে পেসার আনলেই পাওয়ার প্লে-তে রান বাড়বে। তাই মিচেল জনসন, আন্দ্রে রাসেলকে ডাকেনি। বেশির ভাগ অধিনায়ক এই পরিস্থিতিতে ভরসা করত সুনীল নারাইন-এর উপর। কারণ, গত কয়েক আইপিএল-এ এই ক্যারিবিয়ান ‘রহস্য স্পিনার’ ব্যাটসম্যানদের ত্রাস হয়ে উঠেছে। কিন্তু দীনেশ পাওয়ার প্লে চলাকালীন সুনীল নারাইন-কে ডাকেনি। কারণ, ও নিজেই জানে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয় লেগ স্পিনারদের কেলতে গিয়ে কী রকম নাজেহাল হয়েছিল কুইন্টন ডি কক, এবি ডিভিলিয়ার্সরা। আর ব্রেন্ডন ম্যাকালামও লেগ স্পিনের বিরুদ্ধে খুব জোরালো ব্যাট নয়। তার উপর সুনীল নারাইন অফস্পিনের উপর ব্যাটসম্যানকে ফাঁদে ফেলে। তাই দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ—এই পাঁচ ওভারে ও বল করিয়ে গেল দুই লেগ স্পিনার পীযূষ চাওলা ও কুলদীপ যাদবকে দিয়ে। এই পাঁচ ওভারে রান ওঠে কুইন্টন ডি কক-এর উইকেটের সঙ্গে স্কোরবোর্ডে আরসিবি রান যোগ করে মাত্র ৩৮। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পাওয়ার প্লে-তে খুব ঝলমলে পারফরম্যান্স নয়। তাই প্রথম ছয় ওভারে ৫২-র বেশি তুলতে পারেনি ম্যাকালাম-কোহালিরা।
অভিভাবক: ছোট্ট আব্রামকে নিয়ে ইডেনে শাহরুখ খান। আরসিবি-র ১৭৬ রান তাড়া করে রবিবার কেকেআর জিতল ৪ উইকেটে।
জয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেন শাহরুখ। মমতা তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
পাওয়ার প্লে শেষ হতেই দীনেশ ঠিক নিয়ে এল সুনীল নারাইন আর মিচেল জনসন-কে। এর পরেই ক্রমে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে থাকা ব্রেন্ডন ম্যাকালাম (৪৩) আউট। এর পরেই কুলদীপ যাদব ও নারাইন-কে মারতে শুরু করেছিল বিরাট ও ডিভিলিয়ার্স। তাই প্রথমে ও বোলিং পরিবর্তন করে আনল জনসন ও পীযূষ-কে। তার পরে আনল আন্দ্রে রাসেল-কে। রান ওটার গতিটা একটু কমল। আরসিবি তখন ছন্দ পেয়ে গিয়েছে। ১৪ ওভারে রান তখন ১২১-২। পরের ওভারে দেখলাম দীনেশ বল করতে ডাকল নীতিশ রানাকে। দিল্লির এই অফস্পিনারকে দেখে সবাই অবাক হয়েই গিয়েছিল। ক্রিজে প্রায় থিতু হয়ে যাওয়া ডিভিলিয়ার্স ও বিরাট কোহালিকে পর-পর দুই বলে আউট করে কেকেআর-এর উপর চেপে বসা ফাঁসটা আলগা করে দেয় নীতিশ-ই। যার নেপথ্যে থাকল নতুন নাইট অধিনায়ক কার্তিকের মস্তিষ্ক।
স্কোরকার্ড
আরসিবি ১৭৬-৭ (২০)
কেকেআর ১৭৭-৬ (১৮.৫)
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর
ব্রেন্ডন ম্যাকালাম বো নারাইন ৪৩
কুইন্টন ডি’কক ক বিনয় বো পীযূষ ৪
বিরাট কোহালি বো রানা ৩১
ডিভিলিয়ার্স ক জনসন বো রানা ৪৪
সরফরাজ খান ক রিঙ্কু বো জনসন ৬
মনদীপ সিংহ ক কুলদীপ বো বিনয় ৩৭
ক্রিস ওক্স ক রাসেল বো বিনয় ৫
ওয়াশিংটন সুন্দর ন.আ. ০
অতিরিক্ত ৬
মোট ১৭৬-৭ (২০)
পতন: ১৮-১ (ডি’কক, ১.৪), ৬৩-২ (ম্যাকালাম, ৮.২), ১২৭-৩ (ডিভিলিয়ার্স, ১৪.২), ১২৭-৪ (কোহালি, ১৪.৩), ১৫৪-৫ (সরফরাজ, ১৮.১), ১৭৮-৬ (মনদীপ, ১৯.৫), ১৭৬-৭ (ওক্স, ১৯.৬)।
বোলিং: বিনয় কুমার ২-০-৩০-২, পীযূষ চাওলা ৪-০-৩১-১, কুলদীপ যাদব ৩-০-৩৩-০, সুনীল নারাইন ৪-০-৩০-১, মিচেল জনসন ৪-০-৩০-১, আন্দ্রে রাসেল ২-০-১০-০, নীতীশ রানা ১-০-১১-২।
কলকাতা নাইট রাইডার্স
সুনীল নারাইন বো উমেশ ৫০
ক্রিস লিন ক ডিভিলিয়ার্স বো ওক্স ৫
উথাপ্পা ক ম্যাকালাম বো উমেশ ১৩
রানা এলবিডব্লিউ বো ওয়াশিংটন ৩৪
দীনেশ কার্তিক ন. আ. ৩৫
রিঙ্কু সিংহ ক ডি’কক বো ওক্স ৬
রাসেল ক ডিভিলিয়ার্স বো ওক্স ১৫
বিনয় কুমার ন. আ. ৬
অতিরিক্ত ১৩
মোট ১৭৭-৬ (১৮.৫)
পতন: ১৬-১ (লিন, ১.৫), ৬৫-২ (নারাইন, ৫.২), ৮৩-৩ (উথাপ্পা, ৭.৩), ১৩৮-৪ (রানা, ১৪.৩), ১৪৬-৫ (রিঙ্কু, ১৫.৪), ১৬৪-৬ (রাসেল, ১৭.৪)।
বোলিং: যুজবেন্দ্র চহাল ৩-০-২৯-০, ক্রিস ওক্স ৪-০-৩৬-৩, ওয়াশিংটন সুন্দর ৪-০-৪৮-১, উমেশ যাদব ৪-০-২৭-২, কুলবন্ত খেজরোলিয়া ৩.৫-০-৩৪-০।
চার উইকেটে জয়ী কেকেআর
ম্যাচের সেরা সুনীল নারাইন