মোহনবাগানের জোড়া ফলা বেইতিয়া এবং গন্সালেসের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সমর্থকেরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ডার্বি-আগমনীর বাজনা বেজে ওঠার সঙ্গেই সঙ্গেই ইদানিং ময়দান আলোড়িত হয় কোনও না কোনও তারকা বিদেশি ফুটবলারের নাম নিয়ে। যাঁদের ঘিরে স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন দেখেন দু’দলের সদস্য- সমর্থকেরা।
ওকোরি চিমা থেকে হোসে ব্যারেটো, ওকোলি ওডাফা থেকে সনি নর্দের মতো বিদেশিদের সাফল্য এবং ব্যর্থতার প্রহর গোনা শুরু হয় ডার্বি শুরুর আগে।
এ বার কলকাতা ডার্বিতে যেমন হচ্ছে লাল-হলুদের খাইমে সান্তোস কোলাদোকে নিয়ে।
স্প্যানিশ এই স্ট্রাইকারের জন্যই যেমন রবিবারের বড় ম্যাচ জেতার স্বপ্ন দেখছেন লাল-হলুদ সমর্থকেরা, তেমনই আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের দলের সেরা অস্ত্রকে রুখে দিতে পারলেই জয় নিশ্চিত বলে ধরে নিয়েছে মোহনবাগান। এবং যা পরিস্থিতি তাতে কোলাদোর দাওয়াই হিসেবে এক স্কুল ছাত্রকে ব্যবহার করার কথা ভাবছেন কিবু ভিকুনা। ট্রায়াল দিয়ে সিনিয়র দলে পাকাপাকি জায়গা করে নেওয়া সেই ফুটবলারের নাম শেখ সাহিল! কল্যাণী বাইপাসের উপর ডাঙ্গা দিখিনা অঞ্চলে বাড়ি মোহনবাগানের এই নবীন প্রতিভার। সাহিল দায়িত্ব পেলে কি পারবেন কোলাদোর মতো অভিজ্ঞ ফুটবলারকে সামলাতে?
‘‘কেন পারব না? জানি না কোচ আমাকে শুরু থেকেই দলে রাখবেন কি না। কোলাদো কেন, উনি যে দায়িত্ব দেবেন, সেটাই পালন করার চেষ্টা করব। আমি কাউকে ভয় পাই না,’’ বলার সময় একটুও গলা কাঁপে না ব্যারাকপুর মন্মথনাথ স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রের। কিবুর দলে আজ যে ফুটবলাররা খেলবেন তাঁদের মধ্যে সাহিলই কনিষ্ঠতম। শুধু যুব দল থেকেই নয়, স্টপার থেকে কিবুই সাহিলকে তুলে নিয়ে এসেছেন সেন্ট্রাল মিডিয়ো পজিসনে। সাহিল বলছিল, ‘‘যখন কিবু-স্যারের কাছে ট্রায়াল দিতে এসেছিলাম তখন এক বারও ভাবিনি উনি আমাকে পছন্দ করবেন এবং সিনিয়র দলে নিয়মিত খেলার সুযোগ দেবেন। স্যর আমাকে স্টপার থেকে মিডিয়ো করে দিয়েছেন।’’ কিন্তু ৬৫ হাজার দর্শকের সামনে ডার্বি খেলতে নামার আগে কোনও চাপ নেই আপনার? শক্তপোক্ত চেহারার বছর সতেরোর তরুণের সটান জবাব, ‘‘চাপ ভাবলেই চাপ। অত দর্শকের সামনে কখনও খেলিনি ঠিক, তবে আমি মোহনবাগানের হয়ে দুটো ডার্বি যে খেলেছি, দুটোই কিন্তু জিতেছি।’’ ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে দুটো ম্যাচ? কোথায়? ঠান্ডা গলায় জবাব আসে ‘‘অনূর্ধ্ব-১৬ আই লিগের ডার্বি খেলেছিলাম গত বছর। আর একটা বীরভূমে প্রদর্শনী ম্যাচে। এ বার সুযোগ পেলে সেই রেকর্ড অক্ষত রাখতে চাইব।’’
মোহনবাগানের নড়বড়ে রক্ষণের সামনে রক্ষণ-পর্দা হিসাবে সাহিলকে ব্যবহার করছেন কিবু। অনেকখানি জায়গা জুড়ে ভ্রাম্যমান মিডিয়ো হিসাবে তাকে খেলাচ্ছেন তিনি। জোসেবা বেইতিয়ার পাশে। ডুরান্ড কাপে রিয়াল কাশ্মীর এবং গোকুলমের বিদেশি স্ট্রাইকারদের আটকানোর দায়িত্ব সাহিলের উপরই বর্তেছিল।
শনিবার সকালে দেড় ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার অনুশীলনে প্রথম একাদশেই রাখা হয়েছিল সাহিলকে। তবে জানা গিয়েছে, কোলাদোর জন্য কোনও মার্কিং রাখার কথা ভাবছেন না কিবু। তাঁকে জোনাল মার্কিং করা হবে। যার প্রধান দায়িত্বে থাকবেন সাহিল। ক্লাব সূত্রের খবর, প্রথম একাদশ এখনও ঠিক করেননি সবুজ-মেরুন কোচ। কুড়ি জনের দল বেছেছেন শুধু। কারণ তিনি এখনও ঠিক করতে পারেননি কোন তিন স্পেনীয়কে শুরুতে খেলাবেন।
কোলাদোর জন্য এক স্কুল ছাত্রকে তৈরি করলেও, প্রকাশ্যে লাল-হলুদের স্ট্রাইকারকে নিয়ে কথা বলতে নারাজ স্পেনীয় কোচ এবং পালতোলা নৌকার সওয়ারিদের কেউই। ইস্টবেঙ্গলের প্রতিটি ম্যাচের খুঁটিনাটি যাঁর খাতায় পুঙ্খানুপুঙ্খ লেখা রয়েছে, সেই কিবু বলে দিয়েছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল মানে শুধু কোলাদো নয়। এগারো জন নিয়েই ভাবছি।’’ তাঁর এক স্প্যানিশ সালভা চামোরো শনিবার সকালে আরও এক ধাপ এগিয়ে বলে দিয়েছেন, ‘‘কোলাদো কে? ওকে তো চিনিই না। ইস্টবেঙ্গলের কোনও খেলাই তো দেখিনি এ বার।’’ বরং চিংড়ি মাছ হাতে হাসিমুখে ছবি তোলার পর চামোরোর মুখ থেকে বেরিয়েছে, ‘‘গোল করতে চাই গোল। সবাই তো বলছে এই ম্যাচে গোল করতে পারলেই সবাই মনে রাখে। সেই চেষ্টা করব।’’
চামোরোর হেড আটকাতে লাল-হলুদের আলেসান্দ্রো কি ‘অস্ত্র’ প্রয়োগ করেন সেটাও দেখার। তবে কোলাদোর জন্য কিবুর ‘টোটকা’ তৈরি। কিন্তু পিন্টু মাহাতোর মতো এ বারের কলকাতা ডার্বি সাহিলের মতো কোনও তারকার জন্ম দেয় কি না, এখন তারই অপেক্ষা।