চালকের আসনে নিউজিল্যান্ড। দুই টেস্টের সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে এখন ৫১ রানে এগিয়ে আছে কিউয়িরা। এই টেস্টের প্রথম দুই দিন আগাগোড়া দাপট দেখিয়েছে হোম টিম। ভারতীয় দল কোনও সেশনেই প্রাধান্য দেখাতে পারেনি। তবে শেষ সেশনে তিন উইকেট নিয়ে লড়াইয়ে ফিরেছেন বিরাট কোহালিরা। এখন যত দ্রুত সম্ভব শেষ পাঁচ উইকেট নেওয়াই লক্ষ্য টিম ইন্ডিয়ার।
শনিবার, প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন সকালে পাঁচ উইকেটে ১২২ রান নিয়ে শুরু করেছিল ভারত। টস হেরে শুক্রবার ব্যাট করতে নেমেছিল বিরাট কোহালির দল। কিন্তু, নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট পড়তে থাকে। একমাত্র অজিঙ্ক রাহানেই লড়ছিলেন। দিনের শেষ সেশন অবশ্য বৃষ্টিতে ভেস্তে গিয়েছিল।
এ দিন সকালে প্রথম ফেরেন ঋষভ পন্থ। রাহানের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন তিনি। ১৯ করেন তিনি। ১৩২ রানে পড়েছিল ভারতের ষষ্ঠ উইকেট।
সপ্তম উইকেট পড়ল ওই ১৩২ রানেই। টিম সাউদির বলে বোল্ড হলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। প্রথম বলেই ফিরলেন তিনি। কোনও রান না করেই।
পাঁচ নম্বরে নেমে একটা দিক ধরে রেখেছিলেন রাহানে। অন্যপ্রান্ত থেকে উইকেট পড়তে থাকলেও নির্ভরতা জুগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ বার তিনিও ফিরলেন। সাউদিরই শিকার হলেন তিনি। তাঁর ক্যাচ জমা হল উইকেটরক্ষক ওয়াটলিংয়ের হাতে।
১৩৮ বলের ইনিংসে রাহানে করলেন ৪৬। তাঁর ইনিংসে ছিল পাঁচটি বাউন্ডারি। ৬২.৩ ওভারে অষ্টম উইকেট পড়ল ভারতের। দলের রান তখন ১৪৩। রাহানে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের দুশো রানের স্বপ্নে দাঁড়ি পড়ল।
এর পর ফিরলেন ইশান্ত শর্মা। কাইল জেমিসনের বলে উইকেটকিপার ওয়াটলিংকে ক্যাচ দিলেন তিনি। ২৩ বলে তিনি করলেন ৫। ভারতের নবম উইকেট পড়ল ১৬৫ রানে।
রাহানে ফেরার পর ভারতের রানকে দেড়শোর গণ্ডি পার করে দিয়েছিলেন মহম্মদ শামি। তাঁর ২০ বলে ২১ রানের মধ্যে ছিল তিনটি চার। সাউদির বলে টম ব্লান্ডেলকে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি। ১৬৫ রানেই দাঁড়ি পড়ল ভারতের ইনিংসে। কোনও রান না করে অপরাজিত থাকলেন বুমরা।
কিউয়ি বোলারদের মধ্যে সেরা অভিষেককারী জেমিসন। ১৬ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৩৯ রানে চার উইকেট নিলেন তিনি। চার উইকেট নিয়েছেন সাউদিও। তবে তা এসেছে ৪৯ রানের বিনিময়ে। ট্রেন্ট বোল্ট ৫৭ রান দিয়ে নিলেন এক উইকেট।
প্রথম সেশনের মধ্যেই পড়ে গিয়েছিল ভারতের শেষ পাঁচ উইকেট। যার মধ্যে তিনটি উইকেটই নিয়েছিলেন সাউদি। লাঞ্চের আগে আট ওভার ব্যাট করেছিল নিউজিল্যান্ড। কোনও উইকেট না হারিয়ে ১৭ রান তুলেছিল কিউয়িরা।
নিউজিল্যান্ডের প্রথম উইকেট পড়ে ১১ ওভারে। ইশান্ত শর্মার বলে উইকেটকিপার ঋষভ পন্থকে ক্যাচ দেন টম লাথাম। তিনি ফেরেন ১১ রানে। নিউজিল্যান্ডের রান তখন ২৬।
নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় উইকেট পড়ে ৭৩ রানে। ওপেনার টম ব্লান্ডেলকে সুইংয়ে বোকা বানিয়ে বোল্ড করেন ফের ইশান্ত। ৮০ বলে ৩০ করেন ব্লান্ডেল। তার আগে দ্বিতীয় উইকেটে কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে ৪৭ রান যোগ করেন তিনি।
এর পর তৃতীয় উইকেটে গুরুত্বপূর্ণ ৯৩ রান যোগ করেন কেন উইলিয়ামসন ও রস টেলর। কেরিয়ারের শততম টেস্টে ৭১ বলে ৪৪ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেললেন টেলর। যাতে ছিল ছয়টি চার ও একটি ছয়। ইশান্তের বলে চেতেশ্বর পূজারাকে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি।
রস টেলর যখন ফিরলেন, তখন ১৬৬ রান উঠে গিয়েছে স্কোরবোর্ডে। এবং তত ক্ষণে ভারতের প্রথম ইনিংসের রানকে টপকেও গিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
দুর্দান্ত ব্যাট করছিলেন ব্ল্যাক ক্যাপস অধিনায়ক উইলিয়ামসন। আউট হবেন বলে মনে হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত তাঁকে ফেরাল কভারে পরিবর্ত ফিল্ডার রবীন্দ্র জাডেজার সামনে ঝাঁপিয়ে নেওয়া ক্যাচ। মহম্মদ শামির বলে উইলিয়ামসন ফিরলেন ৮৯ রানে। হারালেন আরও এক বার সেঞ্চুরির সুযোগ। ১৫৩ বলের ইনিংস তিনি সাজালেন ১১টি চারে। কিউয়িদের চতুর্থ উইকেট পড়েছিল ১৮৫ রানে।
২০৭ রানে পড়ল পঞ্চম উইকেট। এ বার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অফস্পিনে হেনরি নিকলসের খোঁচা ধরলেন বিরাট কোহালি। ৬২ বল খেলে নিকলস করলেন ১৭।
আর উইকেট পড়েনি। দ্বিতীয় দিনের শেষে পাঁচ উইকেটে ২১৬ রান তুলেছে নিউজিল্যান্ড। ওয়াটলিং (১৪) ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম (৪) অপরাজিত রয়েছেন। পঞ্চাশের বেশি রানে এগিয়ে রয়েছে কিউয়িরা। সেটা বেশি বাড়তে দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি, ব্যাটসম্যানদেরও নিতে হবে বাড়তি দায়িত্ব।
ভারতের সফলতম বোলার ইশান্ত শর্মা। ১৫ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৩১ রানে তিন উইকেট নিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ছয় ওভার মেডেনও রয়েছে। বাকি দুই উইকেট নিয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন (১-৬০) ও মহম্মদ শামি (১-৬১)। যশপ্রীত বুমরা কোনও উইকেট পাননি। আর এটাই উদ্বেগে রাখছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।