সারা দিনে পড়ল ১৬ উইকেট! তার মধ্যে নিউজিল্যান্ডের ১০, ভারতের ৬। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষে রীতিমতো জমে উঠেছে ম্যাচ। যা পরিস্থিতি, তাতে সোমবারই হয়ে যেতে পারে ফয়সালা। এই মুহূর্তে ৯৭ রানে এগিয়ে ভারত, হাতে রয়েছে চার উইকেট। ভারত কি তৃতীয় দিনে জেতার মতো লিড নিতে পারবে, এই প্রশ্নই ঘুরছে ক্রিকেটমহলে।
ওয়েলিংটনে প্রথম টেস্ট ১০ উইকেটে জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। একইসঙ্গে, দুই টেস্টের সিরিজে ১-০ এগিয়ে গিয়েছিল তারা। তাই ক্রাইস্টচার্চে জিততেই হবে ভারতকে। না হলে সিরিজ হারতে হবে। শুধু হারই নয়, রয়েছে হোয়াইটওয়াশের হাতছানিও। এর আগে ওয়ানডে সিরিজেও ০-৩ হোয়াইটওয়াশ হয়েছে ভারত।
শনিবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছিল ২৪২ রানে। পৃথ্বী শ, চেতেশ্বর পূজারা, হনুমা বিহারী হাফ-সেঞ্চুরি করলেও কেউই বড় রান পাননি। এমনকি, কেউ ষাট রানেও পৌঁছতে পারেননি। প্রথম দিনের শেষে বিনা উইকেটে ৬৩ তুলেছিল নিউজিল্যান্ড। শনিবার শেষ সেশনে ২৩ ওভার বল করেও উইকেট পাননি বোলাররা।
রবিবার সকালে ভারতীয় বোলাররা উজাড় করে দিলেন। প্রথম দুই ঘণ্টায় এল পাঁচ উইকেট। পর পর আউট হয়েছিলেন টম ব্লান্ডেল (৩০), অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন (৩), রস টেলর (১৫), টম লাথাম (৫২), হেনরি নিকলস (১৪)। কিউয়িরা যোগ করেছিল মাত্র ৭৯ রান। লাঞ্চের সময় পাঁচ উইকেটে ১৪২ তুলেছিল তারা।
লাঞ্চের সময় ভারতের লিড ছিল ১০০ রান। মনে করা হচ্ছিল, দ্রুত বিপক্ষ ইনিংস ছেঁটে ফেলে যতটা সম্ভব লিড বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু তা হল না। বেসিন রিজার্ভেরই পুনরাবৃত্তি হল হ্যাগলি ওভালে। ফের কিউয়ি টেলএন্ডাররা প্রতিরোধ গড়ে তুলে হতাশ করলেন ভারতীয়দের।
১৫৩ রানে সাত উইকেট পড়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের। দ্বিতীয় সেশনে খেলা শুরুর পর ১১ রানের মধ্যে ফিরে গিয়েছিলেন ওয়াটলিং (০) ও টিম সাউদি (০)। যশপ্রীত বুমরার বলে একই ওভারে পর পর ফেরেন দু’জনে। ফলে, আরও চাপ বাড়ল নিউজিল্যান্ডের উপর।
আর এখানেই প্রথম টেস্টের পুনরাবৃত্তি ঘটল। ফের কিউয়ি টেলএন্ডাররা হতাশ করে চললেন কোহালির দলকে। শেষ তিন উইকেটে ৮২ রান যোগ করল নিউজিল্যান্ড। যার বেশির ভাগই এল কাইল জেমিসনের ব্যাট থেকে। তিনি করলেন ৪৯। ফলে, বড় লিড নেওয়া গেল না।
৭ রানের লিড পেয়েছিল ভারত। অথচ, একসময় মনে হয়েছিল, লিড বেশ ভালই হবে। দু’শো রানের কমে নিউজিল্যান্ডকে আউট করার মতো পরিস্থিতি ছিলও। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সফলতম মহম্মদ শামি। তিনি নিলেন চার উইকেট।
যশপ্রীত বুমরার ফর্ম নিয়ে প্রচুর চর্চা চলছিল ক্রিকেটমহলে। তিন উইকেট নিয়ে তিনি ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিলেন। শামি-বুমরা ছাড়াও উইকেট পেলেন রবীন্দ্র জাডেজা (২-২২) ও উমেশ যাদব (১-৪৬)।
জাডেজা অবশ্য দুটো অসাধারণ ক্যাচও নিলেন। যে ভাবে কার্যত উড়ে গিয়ে এক হাতে এই ক্যাচ তিনি নিয়েছেন, তা চোখ কপালে তোলার মতোই। এর পর নেটদুনিয়ায় তাঁকে ‘সুপারম্যান’ বলা হচ্ছে। ক্যাচ দেখে ধারাভাষ্যকাররাও বলে ওঠেন, সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্যাচটি নিলেন জাডেজা।
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের শুরুটা ভাল হয়নি। দ্বিতীয় ওভারেই ফেরেন ময়াঙ্ক আগরওয়াল। ট্রেন্ট বোল্টের বলে ৩ রানে এলবিডব্লিউ হন তিনি। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৭ রান করেছিলেন ময়াঙ্ক। দুই ইনিংস মিলিয়ে এই টেস্টে ময়াঙ্ক করলেন মাত্র ১০।
পৃথ্বী শ প্রথম ইনিংসে হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন। কিন্তু, দ্বিতীয় ইনিংসে বড় রান পেলেন না তিনিও। ১৪ রানে টিম সাউদির বাউন্সারে যে ভাবে আউট হলেন, তা তাঁর টেকনিক নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিল। ২৬ রানের মধ্যে ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়েছিলেন দুই ওপেনার।
বিরাট কোহালি ব্যাট হাতে ফের ব্যর্থ হলেন এ দিন। এই সফরে মাত্র একটাই পঞ্চাশ করেছেন তিনি। দুঃসময় অব্যাহত থাকল রবিবার সফরের শেষ ইনিংসেও। ১৪ রানে গ্র্যান্ডহোমের বলে এলবিডব্লিউ হলেন তিনি।
দলীয় ৫১ রানে তৃতীয় উইকেট পড়ার পর চতুর্থ উইকেট পড়ল ৭২ রানে। নীল ওয়্যাগনারের বলে অদ্ভুত ভাবে খেলে স্টাম্পে টেনে আনলেন আজিঙ্ক রাহানে। ৪৩ বলে তিনি করলেন ৯। যখন মনে হচ্ছিল পূজারা-রাহানে জুটি ক্রিজে জমে গিয়েছেন, তখনই বোল্ড হলেন ভারতের সহ-অধিনায়ক।
এর পর ফিরলেন চেতেশ্বর পূজারাও। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বোল্টের বাঁক খাওয়ানো ডেলিভারিতে বোল্ড হলেন তিনি। যা প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাল পূজারার টেকনিককেও। ৮৮ বলে ২৪ করে ফিরলেন তিনি। ৮৪ রানে পড়ল পঞ্চম উইকেট।
ষষ্ঠ উইকেট পড়ল ৮৯ রানে। ছয় নম্বরে নৈশপ্রহরী উমেশ যাদবকে নামিয়েছিল ভারত। কিন্তু তা কাজে এল না। ১ রান করে বোল্টের বলে বোল্ড হলেন তিনি।
দিনের শেষে ছয় উইকেটে ৯০ তুলেছে ভারত। ক্রিজে আছেন হনুমা বিহারী (৬) ও ঋষভ পন্থ (১)। ৯৭ রানে এগিয়ে রয়েছে টিম ইন্ডিয়া। সোমবার লিড বাড়াতে না পারলে হোয়াইটওয়াশের খাঁড়া মাথার উপর কিন্তু ঝুলছেই। ছবি: এএফপি, রয়টার্স।