নজরে: টোকিয়োয় ৪০০ মিটার হার্ডলসে বিশ্বরেকর্ড গড়ার পথে নরওয়ের ওয়ারহম (মাঝে)। মঙ্গলবার। ছবি রয়টার্স।
অনেকে বলছেন ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের ইতিহাসে অন্যতম সেরা দৌড়। ৪৫.৯৪ সেকেন্ডের এই দৌড় দেখলে অনেকেই তা মানবেন। মঙ্গলবার নরওয়ের কার্স্টেন ওয়ারহম ৪০০ মিটার হার্ডলসে যা করে দেখালেন। নিজেরই বিশ্বরেকর্ড ভেঙে সোনা জিতলেন টোকিয়ো অলিম্পিক্সে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী রাই বেঞ্জামিনের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হল তাঁর। ১০টা হার্ডলসের বাধা পেরিয়ে যখন তিনি শেষ করলেন, দেখা গেল সময় নিয়েছেন তাঁর পুরনো বিশ্বরেকর্ড ৪৬.৭০-র চেয়ে ০.৭৬ সেকেন্ড কম। জুলাই মাসেই যা গড়েছিলেন তিনি। তার পরে ফের এ রকম একটা পারফরম্যান্স এক কথায় অবিশ্বাস্য। রেস শেষ করে সময় দেখার পরে ২৫ বছর বয়সি নরওয়ের অ্যাথলিটকে দেখে মনে হচ্ছিল নিজেই যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না!
বেঞ্জামিনও পুরনো বিশ্বরেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। তিনি সময় নিয়েছেন ৪৬.১৭। তৃতীয় হয়েছেন ব্রাজিলের ২১ বছর বয়সি অ্যালিসন ডস স্যান্টোস। তাঁর সময় ৪৬.৭২। ‘‘শেষ ২০ মিটারে আমি পায়ে কোনও সাড় পাচ্ছিলাম না। শুধু দৌড়ে গিয়েছি,’’ বলছিলেন ওয়ারহম। রুপোজয়ী বেঞ্জামিন তখন বলেন, ‘‘অসাধারণ একটা রেস হল। আমরা পুরনো বিশ্বরেকর্ড ভেঙে দিলাম। যেন ছেলেখেলা। যদি এর আগে কেউ আমায় বলত ৪৬.১ সময় নিয়েও আমি এই রেসটা হারব, তাঁকে হয়তো বলতাম ঘর দেখে বেরিয়ে যাও। অলিম্পিক্সের ইতিহাসে এটাই সেরা রেস। এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই।’’
এক মাস আগেও ১৯৯২ বার্সেলোনা অলিম্পিক্সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেভিন ইয়ং-এর গড়া ৪৬.৭৮ সেকেন্ডের বিশ্বরেকর্ড অক্ষত ছিল। যা ২৯ বছর ধরে কেউ ভাঙতে পারেননি তখনও। এখন সেটাই এসে দাঁড়াল ৪৬ সেকেন্ডেরও কম সময়ে। তাও আবার হার্ডলস পার করে আসার মতো একটা দৌড়ে। কী ভাবে এমন অবিশ্বাস্য কীর্তি গড়লেন ওয়ারহম এবং বেঞ্জামিন? শুধু কি আধুনিক ট্রেনিংয়ের সাহায্যে? অনেকে বলছেন, সেটা ধরা যেতেই পারে। তবে এই প্রজন্মের ৪০০ মিটারের অ্যাথলিটদের প্রতিভা এবং মানসিকতাও একটা বড় কারণ। বেঞ্জামিন যেমন বলছিলেন, ‘‘তুমি কে, আমার তাতে কিছু যায় আসে না। কেভিন ইয়ং হতে পারেন বা এডউইন মোসেস (১৯৭৬ এবং ১৯৮৪ অলিম্পিক্সে ৪০০ মিটার হার্ডলসে সোনাজয়ী)। তাঁদের আমরা সম্মান করি। কিন্তু আমরা আজ যা করে দেখিয়েছি, সেটা তাঁরাও পারেননি।’’
সব চেয়ে বড় কথা হল এখানেই তাঁরা সন্তুষ্ট নন। ওয়ারহম বলেছেন, ‘‘অনেক সময়ই আমি ভাবতাম একেবারে নিখুঁত রেস কী রকম হয়! আগে বলেছিলাম, হয়তো নিখুঁত রেস বলে কিছু হয়ই না। তবে এই রেসটা সে দিক থেকে নিখুঁত হওয়ার অনেক কাছাকাছি জায়গায় থাকবে।’’ সঙ্গে সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকার ব্যাপারটাও রয়েছে। বেঞ্জামিন বলেছেন, ‘‘ওয়ারহম দারুণ অ্যাথলিট। এটা নিয়ে মনে কিছু রাখার উপায় নেই। গত কাল রাতে ঘুমোতে পারিনি। এত কিছু মাথায় ঘুরছিল। আমাদের দু’জনের মধ্যে সবকিছু এমনিতে ঠিকঠাকই আছে। তবুও আমরা একে অন্যের সঙ্গে কথা বলছিলাম না। ও অবিশ্বাস্য কাজটা করেই ফেলল।’’