গড়বেতার অরবিন্দ স্টেডিয়ামে চলছে ক্লাস। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।
আত্মরক্ষার কৌশল হিসাবে হোক বা বুদ্ধির বিকাশে, ক্যারাটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। পাঁচ বছর আগে গড়বেতার সুচেতনা সেবা সঙ্ঘের উদ্যোগে স্থানীয় অরবিন্দ স্টেডিয়ামে মাত্র পাঁচ জনকে নিয়ে যে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হয়, এখন সেখানে শিক্ষার্থী-সংখ্যাটা ৬০।
মহিলাদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চলায় তাঁদের স্বাবলম্বী করতে উদ্যোগী রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান। তাদের উদ্যোগ ও আর্থিক সাহায্যে স্কুলে স্কুলে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ক্লাস নাইনের ছাত্রীদের এই পাঠ দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কড়া নজরদারিতে চলছে এই প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি মানসিক জোর বাড়াতে একাধিক ধ্যানের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ বাড়াতে রাজ্য সরকার আন্তঃস্কুল পযার্য়ের ক্রীড়া প্রতিযগিতায় ক্যারাটে খেলাটিকে নথিভুক্তও করেছে।
বছর পাঁচেক আগে গড়বেতার সুচেতনা সেবা সঙ্ঘের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল ক্যারাটে প্রশিক্ষণ। প্রচারের অভাবে গোড়ায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও ছিল কম। কিন্তু শুরুর পর পরই ক্যারাটে শেখার আগ্রহ বাড়াতে জোর প্রচার চালায় ওই সঙ্ঘ। ফলে ক্রমশ বাড়ছে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা। পাশাপাশি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ক্যারাটে অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগেও শুরু হয়েছে প্রচার ও প্রশিক্ষণ শিবির। জেলার শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যাম পাত্র বলেন, “ইতিমধ্যে বহু স্কুলে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করা হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে জেলার প্রতি স্কুলেই তা শুরু হবে।” জেলা ক্যারাটে অ্যাসোসিয়েশন সূত্রের খবর, শুধু গড়বেতা নয়, মেদিনীপুর শহর, খড়্গপুর, ঝাড়গ্রাম, গোয়ালতোড়, কেশপুর, ঘাটাল সহ ৬৮টি জায়গায় প্রশিক্ষণ চলছে। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা হাজার দুয়েক। সংগঠনের জেলা সম্পাদক রাসবিহারী পাল বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবলের মতো শহর ছাড়িয়ে এ বার গ্রামেও ক্যারাটের প্রসার ঘটানো।”
এবং তা যে ঘটানো গিয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে শিক্ষার্থীদের সংখ্যায়। পাশাপাশি, এ বছর আন্তঃস্কুল স্তরের ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় সেবা সঙ্ঘের এক ছাত্রী রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় (অনুর্ধ্ব ১৭) তৃতীয় স্থান দখল করে। এ ছাড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ক্যারাটে অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে প্রতিযোগিতায় দুই ছাত্রও সোনার পদক দখল করে। সঙ্ঘের সম্পাদক শুভ্রকান্তি চক্রবর্তী বলেন, “গোটা ব্লক জুড়েই ক্যারাটের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। এই খেলার প্রতি গ্রামের যুবক-যুবতীদের ঝোঁক বাড়াতে প্রচার চলছে।” সঙ্ঘের ক্যারাটে প্রশিক্ষক দীপ অগস্তী বলেছেন, “আন্তঃস্কুল পযার্য়ের ও জেলা ক্যারাটে সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় আমাদের একাধিক ছাত্র-ছাত্রী সাফল্য পেয়েছে। জাতীয় স্তরে সুযোগ পেতে তৈরি হচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীরা।”
শিবিরে শিক্ষার্থী শুভম বাজপেয়ি, রিয়া মুখোপাধ্যায়, সৃজা বসুরা বলেন, “ক্যারাটে শুধু আত্মরক্ষা নয়, বুদ্ধির বিকাশও ঘটায়। অন্য খেলার মতো ক্যারাটেতে আগ্রহ বাড়াতে স্কুলে ও পাড়াতে আমরা প্রচার চালাচ্ছি।”