সেদিন: ছাব্বিশ বছর আগে হলদিয়া বন্দরের মাঠে কপিলের সঙ্গে রণেন। ছবি: রণেনের সৌজন্যে
‘‘জানেন জিন্স আর টি-শার্ট পরে সে দিন মাঠে এসেছিলেন কপিল। ব্যাট হাতে অবলীলায় গ্যালারিতে পাঠিয়েছিলেন আমার বল!’’
২৬ বছর আগের স্মৃতি। কিন্তু এখনও তা ফিকে হয়নি রণেন সরকারের কাছে। ফোনে সেদিনের কথা বলতে গিয়ে সামান্য উত্তেজিত হয়ে পড়ছিলেন বছর আটষট্টির রণেন। আর হবেন না-ই বা কেন, ১৯৯৪ সালে জানুয়ারির সকালে তিনি বল করেছিলেন বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেট অধিনায়ক কপিলদেব নিখাঞ্জকে। এমন সুবর্ণ সুযোগ তো আর সবার জীবনে আসে না!
১৯৯৪-এর পরে ২০২০— ফের হলদিয়ার মেলাতেই আসছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার কপিলদেব। তার আগে নস্টালজিয়ায় ডুবেছেন হলদিয়াবাসী। স্মৃতিমেদুর বর্তমানে নদিয়ার শিমুরালির বাসিন্দা রণেনও। সে সময় তিনি হলদিয়ার একটি ক্রিকেট ক্যাম্পের খেলায়াড় এবং কোচ ছিলেন। রণেন বলেন, ‘‘অবাক হয়ে ভাবি সেদিনের কথা। মাঠে ঢুকছেন কপিলদেব। চুলে পনিটেল। কাছে গিয়ে বললাম, স্যর আপনাকে বল করতে হবে। উনি হেসে বললেন, জীবনে অনেক বল করেছি। আজ ব্যাটই করি।’’ রণেনের কথায়, ‘‘ঠিক হল আমি বল করব। পিচটা আমার হাতের তালুর মতো চেনা। কিন্তু আমার বল মাটি ছোঁয়ার পরেই দেখলাম তা উড়ে মাঠের বাইরে বেরিয়ে গেল।’’
হলদিয়া বন্দর মাঠে আয়োজিত ওই খেলায় হাজির ছিলেন মণীন্দ্রনাথ ঘোষ। বন্দর মাঠে সেই সময় তিনি ক্রিকেট প্রশিক্ষণ শিবির চালাতেন। মণি স্যর বললেন, ‘‘আমাদের মধ্যে রণেন সেই সময় খুব ভাল বল করতেন। যাকে বলে, ক্যাম্পের সেরা বোলার। কিন্তু ওঁকে বিনা প্যাড, গ্লাভসে কপিল যেভাবে স্টেপ আউট করে ছয় মেরেছিলেন, তা এখনও চোখে ভাসে। যাওয়ার সময় ক্যাম্পের তরুণদের কপিল নানা টিপস দিয়েছিলেন।’’
নব্বইয়ের দশকে হলদিয়া বন্দরের কর্মী ছিলেন ক্রিকেটার সরোজ মিত্র। তিনিও বন্দর ক্রিকেট সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর বয়স এখন ৭৯ বছর। বর্তমানে তিনি কলকাতার বাসিন্দা। ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ দেন। ফোন করা হলে সরোজ প্রথমে জানান, তিনি ব্যস্ত রয়েছেন। কিন্তু ‘কপিলের প্রসঙ্গে কথা বলতে চাই’—শুনেই আগ্রহী হয়ে উঠেন সরোজ। তিনি বলেন, ‘‘হলদিয়া উৎসবে কপিল এসেছিলেন হলদিয়া একাদশ বনাম কোল ইন্ডিয়া একাদশের মধ্যে একটি ম্যাচ খেলতে। হলদিয়া একাদশের অধিনায়ক হয়েছিলেন তিনি। আমি ছিলাম সহ-অধিনায়ক। সময়ের অভাবে কপিল বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। তবে মাঠ ছেড়ে যাওয়ার আগে আমাকে ডেকে বলেন— মিত্র আপ কাপ্তানি করো।’’ সরোজের কথায়, ‘‘উনি ন্যাচরাল অ্যাথলিট। সারা জীবন ওই স্মৃতি আগলে রাখলে।’’
আজ, শুক্রবার হলদিয়া ট্রেড ফেয়ারের উদ্বোধনে বিশেষ অতিথি হিসাবে থাকবেন কপিল। থাকবেন অভিনেত্রী মনীষা কৈরলাও। তার আগে হলদিয়া শহর সেজে উঠেছে কপিল ‘পাজি’র কাট আউটে। শহরবাসীর আশা— কে বলতে পারে, হয়তো আজও ব্যাট হাতে দেখা যেতে পারে ‘পাজি’কে!