কামো ও ক্রোমা। তখন তাঁরা বাগানে ছিলেন। এখন জার্সির রং বদলেছে তাঁদের।
সেই কামো-ক্রোমাই ছুটছেন কলকাতা লিগে। তাঁদের সঙ্গে দৌড়ে এঁটে উঠতে পারছেন না ইস্ট-মোহনের স্পেনীয় স্ট্রাইকাররা। যত দিন এগোচ্ছে, স্প্যানিশ আর্মাডারা পিছিয়েই পড়ছেন। সোমবারও কামোর শটে কাঁপল ইস্টবেঙ্গলের জাল। দিনান্তে ভবানীপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচ ড্র করে কল্যাণী ছাড়ল আলেয়ান্দ্রো মেনেন্দেজের দল। এ দিন ইস্টবেঙ্গল-ভবানীপুর ম্যাচ ড্রয়ের কোলে ঢলে পড়ায় লিগের লড়াই এখন চতুর্মুখী। পিয়ারলেস, ভবানীপুর, ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান একই পয়েন্টে দাঁড়িয়ে। যদিও পিয়ারলেস একটি ম্যাচ কম খেলেছে বাকিদের থেকে। শেষ হাসি কার জন্য তোলা থাকবে, তার জবাব দেবে সময়।
তবে ইস্ট-মোহন সমর্থকদের আপাতত রাতের ঘুম উবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। দু’ প্রধানের স্পেনীয় স্ট্রাইকাররা গোলের রাস্তা হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁদের বেরঙিন দেখাচ্ছে। তুলনায় অনেক বেশি উজ্জ্বল পিয়ারলেসের ক্রোমা, ভবানীপুরের কামো। এখনও পর্যন্ত ১১টি গোল করে ফেলেছেন ক্রোমা। ৯টি গোল করে ক্রোমার ঠিক পিছনেই কামো। আফ্রিকান সিংহদের দাপটের কাছে নিষ্প্রভ কেন ইস্ট-মোহনের স্পেনীয় স্ট্রাইকাররা? ভবানীপুর কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীর হাতের অন্যতম তাস কামো বলছেন, ‘‘ফুটবল খেলতে হলে কঠিন পরিশ্রম করতে হয়। আমি প্রচণ্ড পরিশ্রম করছি। সেই কারণেই মাঠে নেমে গোল পাচ্ছি। কোচ শঙ্করলাল আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই আমি নিজের সেরাটা দিতে পারছি।’’
কলকাতা ময়দানের ঘাস হাতের তালুর মতো চেনেন কামো-ক্রোমা। দু’ প্রধানের জার্সি পরে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছেন দু’ জনেরই। অথচ একদিন ইস্ট-মোহন থেকে চলে যেতে হয়েছিল দুই স্ট্রাইকারকে। এখন তাঁরাই ইস্ট-মোহনকে বেগ দিচ্ছেন। পিয়ারলেসের ফুটবলার সৈয়দ রহিম নবি তুলে ধরছেন অন্য ‘রহস্য’। তাঁর সময়তেও দু’ প্রধানে আফ্রিকান স্ট্রাইকারদের দাপট ছিল। এখন ছবিটা পুরোদস্তুর বদলে গিয়েছে কলকাতার দুই বটবৃক্ষ ক্লাবে। নবি বলছেন, ‘‘ পিয়ারলেস ও ভবানীপুর দলে বাঙালি ফুটবলারের সংখ্যা বেশি। কলকাতার ক্লাবের পালস তো ভাল বুঝবে বাঙালি ফুটবলাররাই। দু’ প্রধানে বাঙালি ফুটবলার ক’ জন?’’ প্রশ্ন ছুড়ে দেন নবি। তার পরে নিজেই গভীরে ঢুকে বলছেন, ‘‘আফ্রিকান ফুটবলাররা এখানকার স্থানীয় ছেলেদের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। ফুটবল দলগত খেলা। তারই প্রতিফলন ঘটছে মাঠে। ক্রোমা গতবারও সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিল। এ বারও সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়ে রয়েছে। কামোও গোল পাচ্ছে।’’ সাদার্ন সমিতির কোচ মেহতাব হোসেন বলছেন, ‘‘এ বারের লিগে যে ক্লাবে ভাল মানের স্ট্রাইকার এবং বাঙালি ফুটবলার রয়েছে, সেই দলই ভাল খেলছে।’’
আরও পড়ুন- গম্ভীরের পছন্দের ক্রিকেটারই কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন পন্থকে
আরও পড়ুন-ভবানীপুরের সঙ্গে ড্র, লিগ দৌড়ে পিছিয়েই রইল ইস্টবেঙ্গল
বছর দশেক আগেও ওডাফা ওকোলি, র্যান্টি মার্টিন্স, এডে চিডিরা ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতেন। কলকাতা ময়দান তাঁদের নামেই জয়ধ্বনি দিত। ওডাফা-র্যান্টি-চিডিরা হারিয়ে গিয়েছেন এখন। সাফল্যের সন্ধানে ইস্ট-মোহন স্পেন থেকে এনেছে ফুটবলার ও কোচ। দিন তিনেক আগে রেনবোর দায়িত্ব নিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার সৌমিক দে। তিনি বলছেন, ‘‘পিয়ারলেস ও ভবানীপুর প্রতিটি ম্যাচে একই দল নামাচ্ছে। প্রথম একাদশে বেশি পরিবর্তন আনছে না। অন্য দিকে দু’ প্রধান প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই কিছু না কিছু পরিবর্তন আনছে। আমার মনে হয়, এই পরিবর্তনের জন্যই সমস্যা হচ্ছে। দু’ প্রধানের স্ট্রাইকাররা গোল পাচ্ছে না। ওদেরও মানিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দিতে হবে।’’
সময় দেওয়ার কথা বলছেন দু’ প্রধানের কোচও। কিন্তু, স্ট্রাইকাররা জ্বলে না ওঠায় সমর্থকদের বুকেই রক্তক্ষরণ হচ্ছে। প্রিয় দলের স্ট্রাইকারদের কাছ থেকে গোল দেখার জন্যই তো মাঠ ভরান ভক্তরা। সেটা দেখতে না পাওয়ায় ভিতরে ভিতরে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছেন তাঁরা।