মহড়া: ইংল্যান্ডের নেটে জোফ্রা। বুধবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। গেটি ইমেজেস
করোনা বিধি ভেঙে বাদ পড়ার পরে তিনি বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করলেন জোফ্রা আর্চার। ইনস্টাগ্রামে এই বর্ণবৈষম্যের মুখোমুখি তাঁকে হতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইংল্যান্ডের ফাস্ট বোলার। সেই ঘটনার ব্যাপারে তিনি ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডের কাছে অভিযোগও জানিয়েছেন।
জৈবিক সুরক্ষার মধ্যে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট সিরিজ আয়োজন করা হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে, খেলোয়াড়, ধারাভাষ্যকার, কর্তা, সাংবাদিক বা মাঠে কর্মরত কর্মীদের নিয়ে একটি বলয় তৈরি হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এই বলয়ের মধ্যে বাইরে থেকে কাউকে যেমন প্রবেশ করার অধিকার দেওয়া যাবে না, তেমনই বলয়ের ভিতর থেকেও কেউ বাইরে যেতে পারবেন না। ক্রিকেটারেরা সকলে একসঙ্গে থাকছেন এবং কেউ সিরিজ শেষ না-হওয়া পর্যন্ত বলয় ছেড়ে বাড়িও যেতে পারবেন না।
আর্চার এই বিধিই ভেঙেছিলেন। ক্রিকেটারদের নিজেদের গাড়ি করে সাউদাম্পটন থেকে ম্যাঞ্চেস্টারে আসতে দেওয়া হয়েছিল। সেই সুযোগ নিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে নিজের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন আর্চার। শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য তাঁকে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে বাদ দেওয়াও হয়।
তা নিয়েই ইংল্যান্ডের একটি ট্যাবলয়েডে ‘কলাম’ লিখেছেন আর্চার। মুখ খুলে বলেছেন, ‘‘আমি জানি, অন্যায় করেছি। তার ফলও আমি ভোগ করেছি। কিন্তু একই সঙ্গে বলে দিতে চাই, আমি কোনও অপরাধী নই। নিজেকে নিয়ে স্বাভাবিক অনুভূতি ফিরে পেতে চাই।’’
আরও পড়ুন: আশাবাদী, সতর্কও উইলিয়ামসন
ট্যাবলয়েডেই লেখা হয়েছিল, বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন আর্চার। তা নিয়ে অবশ্য খোলাখুলি কিছু জানাননি তিনি। লিখেছেন, ‘‘কয়েকটা জিনিস বাড়িতে নামিয়ে দিতে গিয়েছিলাম। আমি জানি, সিদ্ধান্তে ভুল ছিল আমার।’’ যোগ করেছেন, ‘‘শেষ কয়েক দিন ধরে ইনস্টাগ্রামে যে ভাবে কটুক্তি করা হচ্ছে তা মানা যায় না। বেশির ভাগই বর্ণবিদ্বেষমূলক। এ বিষয়ে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডকে জানিয়েছি।’’
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার কথাও লিখেছেন আর্চার। ‘‘ক্রিস্টাল প্যালেসের ফুটবলার উইলফ্রেড জ়াহাও বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়েছে। একটি ১২ বছর বয়সি ছেলে ওকে উদ্দেশ্য করে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছে। জানার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছি। আর ফেরার ইচ্ছেও নেই।’’ স্টেডিয়াম সংলগ্ন হোটেলের রুমে বসে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ দেখা খুবই যন্ত্রণাকর অভিজ্ঞতা, স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। জয়ের উৎসবও পালন করতে পারেননি সতীর্থদের সঙ্গে।
বিতর্কের ঝড়ের মুখে পড়া পেসার লিখেছেন, ‘‘দু’দিন আগে প্রথম বার যখন নেটে বল করার জন্য রুমের বাইরে বেরিয়েছি, দেখলাম আমার প্রত্যেক পদক্ষেপ ক্যামেরাবন্দি করা হচ্ছে। যেন কোনও অপরাধীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নেটে বল করার প্রেরণাই পাচ্ছিলাম না। পুরো বিষয়টাই আমাকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে একটি ভুলের জন্য।’’
মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হতে বেন স্টোকসের পরামর্শ নেন আর্চার। ব্রিস্টলের পানশালায় মদ্যপ অবস্থায় হাতাহাতিতে জড়ানোর পরে স্টোকসকেও বিতর্কের ঝড় সামলাতে হয়েছিল। আর্চার লিখেছেন, ‘‘আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েও কী ভাবে নিজেকে শান্ত রাখা যায় তা জানতে চেয়েছিলাম স্টোকসের কাছে। স্টোকস ও ডাক্তারের পরামর্শ শুনে মনোবল ফেরানোর চেষ্টা করেছি।’’
আরও পড়ুন: অভিনব দল সেরিনা-নাটালিদের
আগামীকাল, অর্থাৎ শুক্রবার থেকে শুরু তৃতীয় টেস্ট খেলার মতো মানসিকতা আর্চারের রয়েছে কি না তা নিয়েও সংশয় তৈরি হচ্ছে। কারণ তিনি নিজেই লিখেছেন, ‘‘চলতি সপ্তাহে ইংল্যান্ড জার্সিতে ফেরার জন্য মানসিক ভাবে একশো শতাংশ প্রস্তুত থাকতে হবে। এ সপ্তাহে যাই করব, তাতেই সংবাদপত্রের শিরোনামে থাকব। যদি ৯০ মাইল প্রতি ঘণ্টায় বল করতে না পারি, তা হলে আমাকে নিয়ে লেখা হবে। যদি ৯০ মাইল প্রতি ঘণ্টায় একটানা বল করতে না পারি, আমাকে নিয়ে লেখা হবে। যদি নিজের বাঁ-পায়ের মোজাটা প্রথমে না পরি, তা হলেও আমি খবরে আসব।’’
ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইনস্টাগ্রামে আর্চারের বর্ণবৈষ্যম্যের শিকার হওয়ার বিষয়টি নিয়ে তাঁরা লড়াই করছেন। এ ব্যাপারে ইংল্যান্ড বোর্ড আর্চারের পাশে রয়েছে।