লক্ষ্য: বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ও অলিম্পিক্সের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত জিনসন। ফাইল চিত্র
এশিয়ান গেমসে সোনা। সপ্তাহ খানেক আগে বার্লিনে জাতীয় রেকর্ড ভেঙে রুপো। একই সঙ্গে বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের ছাড়পত্র পাওয়া। সাফল্যের নিরিখে যে কোনও ভারতীয় অ্যাথলিটকে গর্বিত করার মতো মাইলস্টোন।
কিন্তু কেরলের দূরপাল্লার (১৫০০ ও ৮০০ মিটার) রানার জিনসন জনসনের সাফল্যের হাইওয়েতে এগুলো ছোট ছোট ‘স্টপ’ ছাড়া আর কিছু নয়। তাঁর হাইওয়ে গিয়ে শেষ হচ্ছে আরও অনেক দূরে। বিশেষ একটি লক্ষ্যে। ‘‘সবাই সব কিছু ভুলে যাবে। কিন্তু অলিম্পিক্সে আমি যদি কিছু একটা করতে পারি, তা হলে লোকে আমাকে চিরকাল মনে রেখে দেবে,’’ সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্প্রিংস থেকে আনন্দবাজারের সঙ্গে হোয়াটস্যাপ কলে যখন কথা বলছিলেন জিনসন, ধরা পড়ছিল একটা চাপা আত্মবিশ্বাস। কিন্তু কলোরাডোতে কেন? কারণ, ছ’হাজার ফুট উচ্চতায় মার্কিন কোচের তত্ত্বাবধানে ‘হাই অল্টিচিউড ট্রেনিং’ তাঁকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস জিনসনের।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লা দৌড়ের বিখ্যাত কোচ স্কট সিমন্সের কাছে এ বার দীর্ঘমেয়াদি কোচিং শুরু করেছেন জিনসন। সপ্তাহখানেক হল কলোরাডোয় এসেছেন। একান্ত সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, ‘‘এখানকার উচ্চতা ছ’হাজার ফুট। এখানে অনুশীলন করলে আমার সহ্যক্ষমতা, দম অনেক বেড়ে যাবে। তা ছাড়া সিমন্স খুবই নামী কোচ। ওর হাত থেকে অনেক চ্যাম্পিয়ন বেরিয়েছে। আশা করি আমিও উপকৃত হব।’’
অলিম্পিক্সের আগে তো দোহায় ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। নিজের সামনে কোনও বিশেষ লক্ষ্য স্থির করেছেন? জিনসন বলছিলেন, ‘‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদক আমার লক্ষ্য নয়। আমি দোহায় নামব অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য।’’
এর বাইরে আপনি কি আর কিছুতে নজর রাখছেন? জিনসনের জবাব, ‘‘১৫০০ মিটারে আমার সেরা টাইমিং হল তিন মিনিট ৩৫.২৪ সেকেন্ড। আমার লক্ষ্য হল আরও তিন-চার সেকেন্ড সময় কমিয়ে ফেলা। তা হলে টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ভাল কিছু করার একটা সম্ভাবনা থাকবে।’’ অভূতপূর্ব হলেও সত্যি, রিয়ো অলিম্পিক্সে ১৫০০ মিটারে যিনি সোনা জিতেছিলেন, সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাথেউ সেন্ত্রোউৎজের সময় ছিল তিন মিনিট ৫০ সেকেন্ড। যদিও ফাইনালের চেয়ে হিটে অনেক কম সময় (তিন মিনিট ৩৮.৩১ সেকেন্ড) হয়েছিল। এই মুহূর্তে ১৫০০ মিটারে বিশ্বের এক নম্বর হলেন কেনিয়ার টিমোথি চেরিউইয়োলি। যাঁর সেরা সময় তিন মিনিট ২৮.৪১ সেকেন্ড।
গত বছর এশিয়াডে ১৫০০ মিটারে সোনজয়ী জিনসনের পক্ষে বিশ্বমঞ্চে কতটা চমক দেখানো সম্ভব? এই প্রশ্ন নিয়ে আনন্দবাজারের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল আমেরিকান ডিসটান্স প্রোজেক্টের কর্ণধার এবং জিনসনের বর্তমান কোচ সিমন্সের সঙ্গে। ই-মেল মারফত সিমন্স যে প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘জিনসনকে দেখে আমার মনে হয়েছে ওর পক্ষে বিশ্বমঞ্চে অবশ্যই সফল হওয়া সম্ভব। ভারতকে ও গর্বিত করবে।’’
কেন জিনসনকে নিয়ে তিনি এতটা আশাবাদী, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন সিমন্স। বলেছেন, ‘‘জিনসনের ‘ভিও২ ম্যাক্স’ খুবই ভাল। কিন্তু আরও উন্নতি করতে হবে। যেটা করতে পারলে নিঃসন্দেহে ওর পারফরম্যান্স অনেক ভাল হবে।’’ ‘ভিও২ ম্যাক্স’ খুব সহজ কথায় হল, কঠোর পরিশ্রমের সময় একজন কতটা অক্সিজেন কাজে লাগাতে পারছে, তার হিসেব। যে যত বেশি অক্সিজেন কাজে লাগাবে, সে তত বেশি পরিশ্রমের মাত্রা বাড়াতে পারবে। এক জন অ্যাথলিটের ক্ষেত্রে ‘ভিও২ ম্যাক্স’ ভাল হওয়া মানে তাঁর ক্ষমতাও বেড়ে যাওয়া।
জিনসনের ক্ষেত্রে তাঁর পরিকল্পনা কী, তার একটা ধারণা দিয়েছেন সিমন্স। বলেছেন, ‘‘আমরা চাইছি জিনসনের অক্সিজেন নেওয়ার এবং তা কার্যকর করার মাত্রা বাড়াতে। একই সঙ্গে জোর দেওয়া হবে ওর শক্তিবৃদ্ধির উপরেও।’’ কোচ জানাচ্ছেন, কলোরাডো স্প্রিংসে ‘হাই অল্টিচিউড ট্রেনিং’-এর ফলে এই লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব। তবে এই মুহূর্তে জিনসনের ট্রেনিং রুটিনে খুব একটা বদল করতে চান না সিমন্স। বলেন, ‘‘জিনসনের গতি খুবই ভাল। ওর শারীরিক উন্নতি, রক্ষণাবেক্ষণ খুবই ভালভাবে হয়েছে। এ জন্য আমি ওর কোচেদের ধন্যবাদ দিতে চাই। বার্লিনে খুব ভাল সময় করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ছাড়পত্র পেয়েছে। তাই এখনই ওর রুটিন বদলাতে চাই না। যে রুটিন চলছে, সেটাই চলবে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আমি ওর সঙ্গে নতুন রুটিন নিয়ে বসব। তার পর দেখা যাক, কী করা যায়।’’
আপনি কি নিজের উদ্যোগে সিমন্সের ট্রেনিংস সেন্টারে এসেছেন? জিনসন বললেন, ‘‘আমি তো টপস (টার্গেট অলিম্পিক্স পোডিয়াম স্কিম) অ্যাথলিট। তাই সাই আমাকে বিদেশে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।’’ সিমন্সের কোচিংয়ে কোন ব্যাপারটার উপরে জোর দিতে চান? জিনসন বলছেন, ‘‘আমি দেখেছি, শেষ ১৫০-২০০ মিটারে প্রত্যাশিত গতিটা তুলতে পারছি না। সেটা মেরামত করে নিতে চাই। যদি তা করতে পারি, তিন-চার সেকেন্ড সময় নিশ্চিত ভাবে কম করতে পারব।’’
তাঁর মুকুটে এখন অনেক সাফল্যের পালক। ১৫০০ মিটারে জীবনের কোন রেসটাকে সেরা বলবেন? জিনসনের জবাব, ‘‘আমি এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছি। আবেগের দিক দিয়ে ওটা অবশ্যই আগে থাকবে। কিন্তু আমি সব চেয়ে খুশি হয়েছি বার্লিনে জিতে। কারণ ওই রেসে আমি সেরা সময়টা করেছিলাম।’’
সেই সেরা সময়কেও এখন টপকে যেতে চান জিনসেন। না হলে যে স্বপ্ন ছোঁয়া হবে না তাঁর।