আগমন: বার্সেলোনা বিমানবন্দরে মেসির বাবা হর্হে পৌঁছতেই ঘিরে ধরেন সাংবাদিক এবং ভক্তরা। বুধবার। রয়টার্স
বার্সেলোনা প্রেসিডেন্ট জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউয়ের সঙ্গে লিয়োনেল মেসির বাবার বৈঠক শুরু হওয়ার আগেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল আবহ। হর্হে মেসি আর্জেন্টিনীয় কিংবদন্তির বাবা শুধু নন, এজেন্টও। তিনি জানিয়ে দিলেন, ছ’বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকার পক্ষে বার্সেলোনায় থাকা কঠিন।
বুধবার ব্যক্তিগত বিমানে রোসারিয়ো থেকে বার্সেলোনায় পৌঁছন মেসির বাবা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রথমে তিনি বলার চেষ্টা করছিলেন, ‘‘আমি কিছুই জানি না।’’ সাংবাদিকেরা ফের প্রশ্ন করেন, ‘‘বার্সেলোনায় মেসির ভবিষ্যৎ সম্পর্ক আপনার ধারণা কী?’’ আর্জেন্টিনীয় কিংবদন্তির বাবা বলেছেন, ‘‘বার্সেলোনায় থাকা মেসির পক্ষে খুবই কঠিন।’’ এই পরিস্থিতিতে কি ম্যাঞ্চেস্টার সিটিতে পেপ গুয়ার্দিওলার অধীনেই খেলা উচিত মেসির? হর্হে দাবি করেন, ‘‘আমি জানি না। কারণ, এখনও কিছুই হয়নি।’’ এখানেই শেষ নয়। দাবি করেন, গুয়ার্দিওলার সঙ্গে নাকি তাঁর কোনও কথাই হয়নি। বলেছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত পেপের সঙ্গে আমার কথা হয়নি। ম্যান সিটিতে যাওয়া নিয়েও কিছু ঠিক হয়নি।’’
আর্জেন্টিনা তারকার বাবা যতই দাবি করুন, গুয়ার্দিওলা বা ম্যান সিটির সঙ্গে তাঁর কোনও কথা হয়নি, স্পেনের সংবাদ মাধ্যমের দাবি অনুযায়ী ইতিমধ্যেই বার্সেলোনা পৌঁছে গিয়েছেন চিকি বেগিরিস্তাই। ম্যান সিটির ডিরেক্টর অব ফুটবলের উদ্দেশ্যই হল মেসির সঙ্গে কথা বলা। তবে মেসিকে নেওয়ার দৌড় থেকে সরে দাঁড়াল ইন্টার মিলান।
ইটালির এই ক্লাব আর্জেন্টিনা অধিনায়ককে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়েছিল। ইটালির একটি সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছিল, আগামী মরসুমে ইন্টারে খেলা কার্যত নিশ্চিত তাঁর। কারণ, মেসির বাবা নাকি মিলানে বাড়ি কিনেছেন। সেখান থেকেই ব্যবসা চালাতে চান। তা হলে হঠাৎ কী হল? ইন্টারের ডিরেক্টর পিয়েরো আউসিলিয়ো বলেছেন, ‘‘সব দলের প্রেসিডেন্ট ও কোচ যে মেসিকে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবের ছবিটা একেবারেই উল্টো। মেসিকে নেওয়ার মতো অর্থ
আমাদের নেই।’’
মেসির ক্লাব ছাড়াকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। আর্জেন্টিনা অধিনায়ক ইতিমধ্যেই বু্রোফ্যাক্স পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, বার্সায় আর থাকতে চান না। তাঁকে যেন ‘ফ্রি প্লেয়ার’ হিসেবে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু চুক্তিতে বিচ্ছেদের শর্ত অনুযায়ী (বাই আউট ক্লজ) ৭০০ মিলিয়ন ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় ৬১৪৪ কোটি) না দিলে যে ছাড়া হবে না, স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন বার্সা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মেসি অনড়। প্রাক-মরসুম প্রস্তুতি শুরুর আগে তিনি করোনা পরীক্ষা করাতে যাননি। যোগ দেননি রোনাল্ড কোমানের অনুশীলনেও। স্পেনীয় সংবাদ মাধ্যমের দাবি, শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য মেসিকে ১.১ মিলিয়ন ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯ কোটি ৫৪ লক্ষ) জরিমানার পাশাপাশি নির্বাসিত করতে পারে বার্সা। যদিও মেসি তা নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে লা লিগা শুরু হওয়ার কথা। তার আগেই ক্লাব ছাড়তে মরিয়া তিনি। এ রকম অগ্নিগর্ভ পরিবেশেই বুধবার দুপুরে বার্তোমেউয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন মেসির বাবা। দু’ঘণ্টা বৈঠক করেন তাঁরা। স্পেনের সংবাদমাধ্যমের দাবি, বার্সা প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, কোনও অবস্থাতেই মেসিকে ছাড়ব না আমরা।
এই পরিস্থিতিতে বার্সা নতুন মরসুমের যে জার্সি প্রকাশ করেছে, তাতে ওসুমানে দেম্বেলে, আতোয়াঁ গ্রিজ়ম্যানদের সঙ্গে মেসির ছবিও রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্লাবের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে সমর্থকেরা লিখেছেন, ‘‘ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া মেসির ছবি ব্যবহার করে ভুল বার্তা দিচ্ছে বার্সা।’’