হতাশ: স্ট্রেট সেটে ফাইনালে হারের পরে সেরিনা। রয়টার্স
উইম্বলডনের ফাইনালে শনিবার ফের হেরে যাওয়ার পরে অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এই সেরিনা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? এক বছরে তিনটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল হারার পরে মার্গারেট কোর্টের ২৪টা গ্র্যান্ড স্ল্যামের রেকর্ড স্পর্শ করাটা কি আর সম্ভব ওর পক্ষে?
আমার মনে হয়, অগস্টে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে নিশ্চয়ই ও মরিয়া একটা চেষ্টা করবে রেকর্ডটা ছোঁয়ার কিন্তু সেরিনার পক্ষে সেটা করে দেখানো খুব কঠিন। কারণ, মা হওয়ার পরে সেরিনা কিন্তু আগের সেরিনা আর নেই। অবশ্যই ও যে ভাবে মেয়ে হওয়ার পরে কোর্টে ফিরে এসেছে, সেই লড়াইকে কুর্নিশ করতেই হবে। তবে মা হওয়ার পরে ওর অন্য দিকে দায়িত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে। সঙ্গে বয়সটাও তো দেখতে হবে! রজার ফেডেরারের মতো সেরিনাও সাঁইত্রিশে একই রকম খেলা ধরে রাখতে পারবে, সেটা আশা করা যায় না।
শনিবার সিমোনা হালেপ ৬-২, ৬-২ সেরিনাকে যে ভাবে হারিয়ে দিয়েছে সেটা তাই আমাকে অন্তত চমকে দেয়নি। টিভিতে দেখছিলাম, সিমোনা বলেছে, এটাই ওর জীবনের সেরা ম্যাচ। তবে আমার মনে হয়, সিমোনা যোগ্য হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আগের লেখাতেও বলেছিলাম, সেরিনার এ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা কম। তার প্রথম কারণ, কোর্টে এখন আর অতটা দ্রুত নড়াচড়া করতে পারছে না সেরিনা। ১০ বছরের জুনিয়র হালেপকে তুলনায় শনিবারের ফাইনালে অনেক ক্ষিপ্র দেখিয়েছে তাই। এমন কিছু পয়েন্ট হালেপ আজ তুলে নিয়েছে, যেটা শারীরিক সক্ষমতা চূড়ান্ত জায়গায় না থাকলে জেতা যায় না।
ঠিক এই কারণেই সেরিনার বিরুদ্ধে একটা কৌশল নিয়েছিল হালেপ। সেরিনাকে ডাউন দ্য লাইন শট খেলে যাওয়া। যাতে সেরিনাকে জবাবে শট মারার জন্য দৌড়তে হয়। আর আনফোর্সড এররের ফাঁদে েফলা যায় ওকে। এই পরিকল্পনায় একশো শতাংশ সফল হালেপ। তা ছাড়া, উইম্বলডনের আগে সেরিনা খুব একটা কোর্টে নামেনি। এটাও কিন্তু দেখতে হবে। যতই সেরিনা সাত বারের চ্যাম্পিয়ন হোক, ম্যাচ প্র্যাক্টিসের অভাব প্রতিযোগিতায় খেলতে নেমে পূরণ করা যায় না। সেই জন্যই হয়তো অ্যান্ডি মারের সঙ্গে মিক্সড ডাবলসে খেলতে রাজি হয়েছিল। যাতে যত বেশি সম্ভব কোর্টে থাকা যায়।
উইম্বলডনে ফাইনালে ওঠার পথেও হালেপের আগে সে রকম শক্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও পড়তে হয়নি সেরিনাকে। অনেকে বলবেন, সেমিফাইনালে ওর দেশেরই অ্যালিসন রিসক-কে দুরন্ত ভাবে হারিয়েছিল সেরিনা। কিন্তু রিসক আর হালেপ একই রকম প্রতিপক্ষ নয়। নিজেকে পাল্টে ফেলেছে হালেপও। আগে প্রচুর সার্ভিস ফস্কাত, র্যালি ফস্কাত। এ বার সেই ভুলের সংখ্যা কমেছে। মানসিকতাতেও পরিবর্তন এনেছে। না হলে সেরিনার মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ফাইনালে খেলার চাপ এত অনায়াসে সামলাতে পারত না।
আরও একটা ব্যাপার হালেপের পক্ষে গিয়েছে। সেটা হল কোর্টের সুবিধে। আমি আগেই বলেছিলাম, এ বার উইম্বলডনের কোর্ট অনেক ধীর গতির হয়ে গিয়েছে। যে কারণে, ক্লে কোর্টের খেলোয়াড়েরা সুবিধে পাচ্ছে। গত বারের ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন হালেপও সেই সুবিধেটাই পেয়েছে। তাই এ রকম একপেশে ম্যাচে সেরিনাকে হারাতে পেরেছে হালেপ।