৪-০ করার মুহূর্ত। মঙ্গলবার। ছবি: রয়টার্স
আঠারোটা টেস্ট ম্যাচে টিম ইন্ডিয়াকে হারাতে পারেনি কেউ। চেন্নাই টেস্ট ড্রয়ের মুখ থেকে নাটকীয় ভাবে ইনিংস এবং ৭৫ রানে জিতেছে ভারত। এ সবের পরে মনে করা যেতেই পারে যে, ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীর প্রাপ্তির ঝুলি ভবিষ্যতে এতটা পূর্ণ হয়তো আর হবে না।
বিরাট কোহালি অবশ্য একেবারেই তা মনে করেন না। ভারতের টেস্ট অধিনায়ক বরং মনে করেন, এটা সবে শুরু। তিনি এবং তাঁর টিম যা করতে চান, এটা তার ক্ষুদ্র অংশমাত্র। চোখ ধাঁধানো ভবিষ্যৎ ইমারতের ভিত।
‘‘অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ান ডে সিরিজ আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এই দুটো ব্যর্থতা বাদ দিলে ২০১৬ সালটা আমাদের জন্য খুব ভাল গিয়েছে। আমরা এশিয়া কাপ জিতেছি, দেশের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজটা জিতেছি, তার পরে সব ক’টা টেস্ট সিরিজ জিতেছি,’’ ম্যাচের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন বিরাট। সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘টিমটা এখনও ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতে এ রকম একটা বছরের অংশ হতে পারাটা আমাদের কাছে গর্বের।’’
পাঁচ টেস্টের সিরিজে ৪-০ জয় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবধানের সিরিজ জয়। এ দিন অবশ্য একটা সময় মনে হচ্ছিল টেস্টটা ড্র হয়ে যাবে। লাঞ্চে কোনও উইকেট না হারিয়ে ইংল্যান্ডের রান ছিল ৯৭। চা বিরতিতে রানটা দাঁড়ায় ১৬৭-৪। এর পর শেষ সেশনে ধসে যায় ইংল্যান্ড। জীবনের সেরা বোলিং করে গেলেন জাডেজা। যাঁর বাঁ-হাতি স্পিনের কোনও জবাব ছিল না ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের কাছে।
অ্যালিস্টার কুকদের হারানোর রাস্তায় আরও নানা রেকর্ড ভেঙেছে কোহালির ভারত, গড়েছে নতুন নজির। তবে ভারত অধিনায়ক মনে করছেন, এটা কিছুই নয়। এখনও অনেক কিছু করা বাকি তাঁর এবং তাঁর টিমের। ‘‘এটা সবে একটা ভিত গড়া হল, যেটা অনেক বছর ধরে চালিয়ে যেতে হবে। এটা সবে শুরু। আমরা যা যা করতে চাই, তার বিচারে তো এটা কিছুই নয়। তার কণামাত্রও নয়,’’ এ দিন বলেছেন কোহালি। সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘আমরা জানি আমাদের কী করতে হবে। আশা করছি ছেলেরা এ ভাবেই চেষ্টা করে যাবে। টিমকে সেই উচ্চতায় নিয়ে যাবে, যা তার প্রাপ্য।’’
এই টিমটাকে কি বিরাট’স টিম ইন্ডিয়া বলা যায়? অধিনায়কের ছোট্ট উত্তর, ‘‘আমি সেটা বলতে পারি না। আমি কী ভাবে সেটা বলব?’’ তবে টিমের পারফরম্যান্স প্রসঙ্গে উচ্ছ্বসিত বিরাট। চেন্নাই টেস্টে করুণ নায়ারের ট্রিপল সেঞ্চুরি বা দু’ইনিংসে রবীন্দ্র জাডেজার দশ উইকেট, মুম্বইয়ে মুরলী বিজয়ের সেঞ্চুরি, পাঁচ ম্যাচে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ২৮ উইকেট— সিরিজ জুড়ে প্রায় গোটা টিম পারফর্ম করেছে। যা নিয়ে কোহালির ব্যাখ্যা, ‘‘আমি বলব কমপ্লিট পারফরম্যান্স। প্রথম ম্যাচে চাপে পড়ে যাওয়া থেকে কামব্যাক করে পরের চারটে টেস্ট জেতা। চারটে টস হেরে তার মধ্যে তিনটে ম্যাচ জয়। ক্যাপ্টেন হিসেবে আমার মনে হচ্ছে এটা সম্পূর্ণ একটা সিরিজ। কোনও না কোনও সময় সবাই অবদান রেখেছে। তার মধ্যে লোয়ার অর্ডারের অবদান আমার মনে থাকবে।’’
চেন্নাইয়ের জয় কোহালির কাছে বাড়তি গুরুত্বের। কারণ তাঁরা ৩-০ জিতে এই টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন। আত্মতুষ্টিটা যে টিমের মধ্যে চলে আসেনি, সেটা বোঝানো দরকার ছিল। সেই বিচারে এই পারফরম্যান্স টিমের চরিত্রের প্রতিফলন, বলেছেন বিরাট। ‘‘ইংল্যান্ড যখন ৪৭৭ করেও ২৮১-র লিড দিয়ে দিল, জানতাম গোটাদুয়েক উইকেট পেলে তাড়াতাড়ি ধস নামবে। জাডেজা নিজের কাজটা করে দিল,’’ ম্যাচের পরে বলছিলেন বিরাট।
টস বা উইকেট যে তাঁদের পক্ষে ছিল না, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক। বলেছেন, ‘‘টস আর পিচ সমীকরণে ছিলই না। প্রথম ইনিংসে আমরা ওদের ৪০০ করতে দিয়েও ইনিংসে জিতেছি। এটা কিন্তু বারবার হয় না।’’
বিরাট বলছেন বটে। কিন্তু তাঁর টিম যে ক্রিকেটটা খেলছে, তাতে এমন নজির বারবার ঘটলে আশ্চর্যের হবে না!
ইংল্যান্ড
প্রথম ইনিংস: ৪৭৭
ভারত
প্রথম ইনিংস: ৭৫৯-৭ ডিঃ
ইংল্যান্ড
দ্বিতীয় ইনিংস (আগের দিন ১২-০)
কুক ক লোকেশ বো জাডেজা ৪৯
জেনিংস ক ও বো জাডেজা ৫৪
রুট এলবিডব্লিউ জাডেজা ৬
মইন ক অশ্বিন বো জাডেজা ৪৪
বেয়ারস্টো ক জাডেজা বো ইশান্ত ১
স্টোকস ক করুণ বো জাডেজা ২৩
বাটলার ন.আ. ৬
ডসন বো মিশ্র ০
রশিদ ক জাডেজা বো উমেশ ২
ব্রড ক পূজারা বো জাডেজা ১
বল ক করুণ বো জাডেজা ০
অতিরিক্ত ২১, মোট ২০৭।
পতন: ১০৩, ১১০, ১২৬, ১২৯, ১৯২, ১৯৩, ১৯৬, ২০০, ২০৭।
বোলিং: ইশান্ত ১০-২-১৭-১, অশ্বিন ২৫-৬-৫৬-০, জাডেজা ২৫-৫-৪৮-৭, উমেশ ১৪-১-৩৬-১, মিশ্র ১৪-৪-৩০-১।