লিগের শেষ ম্যাচে লাল-হলুদকে গোলের মালা পরাল ওডিশা। ছবি - টুইটার
ওডিশা এফসি: ৬
এসসি ইস্টবেঙ্গল: ৫
রবি ফাওলার বড় মুখ করে বলেছিলেন যে তাঁর দল শেষ ম্যাচে লাল-হলুদ জার্সির সম্মানরক্ষা করবে। কিন্তু কোথায় কী! বরং লিগ তালিকার শেষে থাকা ওডিশা এফসি-র কাছে উড়ে গেল এসসি ইস্টবেঙ্গল। খেলার ফলাফল ৫-৬! অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি। লাল-হলুদের জঘন্য রক্ষণ ও সুব্রত পালের একাধিক ভুলের জন্য শতবর্ষের ক্লাব এমন লজ্জার হার হজম করল। আইএসএলের ইতিহাসে এটাই প্রথম ম্যাচ যেখানে ১১ গোল দেখা গেল।
গত নর্থ -ইস্ট ম্যাচ থেকে দলে ৯টি বদল আনলেন ফাওলার! সেই ম্যাচ থেকে এই দলে জায়গা পেয়েছেন মাত্র ২ জন। গত ম্যাচে খেলা সার্থক গলুই ও অ্যারণ আমাদি এদিন ওডিশার বিরুদ্ধে মাঠে নামলেন। ২৪ মিনিটে পিলকিংটনের গোলে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। তবে কিছুক্ষণ পরেই ৩৩ মিনিটে সমতা ফেরান লালরেজুয়ালা। যদিও ৩৭ মিনিটে ফের ম্যাচে ফিরে আসে লাল-হলুদ। এবার আত্মঘাতী গোল করে ব্রাইটদের এগিয়ে দেন বিপক্ষের গোল রক্ষক রবি কুমার। ফলে প্রথমার্ধে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে মাঠ ছাড়ে লাল-হলুদ।
তবে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে লাল-হলুদ রক্ষণের দুর্বলতা ও সুব্রত পালের জঘন্য গোল কিপিং বারবার চোখে পড়ে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই একের পর এক গোল করতে থাকে ওডিশা। ডাগআউটে তখন অসহায় ভাবে নিজের দলের করুণ পরিণতি দেখছিলেন দেবজিৎ ঘোষ। ৪৯ মিনিটে লাল-হলুদের জঘন্য রক্ষণের ভুলে ফের সমতা ফেরাল ওডিশা। গোল করলেন পউল। স্কোর লাইন ২-২। ৫১ মিনিটে আবার গোল করল ওডিশা। তৃতীয় গোল করে এ বার দলকে এগিয়ে দিলেন জেরি।
লিগ তালিকার বর্তমান অবস্থান।
তবে ৬০ মিনিটে ম্যাচে ফিরে আসে ফাওলারের দল। এ বার অ্যারণ আমাদির গোলে সমতা ফেরাল লাল-হলুদ। মাটিতে ঘেসে যাওয়া শট মেরেছিলেন। ডান পোস্টে লেগে বল জালে ঢুকে গেল। স্কোর লাইন তখন ৩-৩। যদিও দমে যায়নি পাশের রাজ্যের দল। ৬৬ মিনিটে ফের সমতা ফেরাল ওডিশা এফসি। ম্যাচে দ্বিতীয় গোল করলেন পউল। স্কোর লাইন তখন ৪-৩। সেই গোলের উল্লাস মিটতে না মিটতেই ফের এগিয়ে গেল ওডিশা। ৬৭ মিনিটে ম্যাচের দ্বিতীয় গোল করে দলকে ৫-৩ ব্যবধানে এগিয়ে দেন জেরি। আর ৬৯ মিনিটে জয়সূচক গোলটি করলেন ব্রাজিলিয়ান দিয়েগো মরিসিও। সেই সময় ওডিশা ৬-৩ গোলে এগিয়ে।
তবে রক্ষণ ও সুব্রত পালের ভুলে একাধিক ভুলের পরেও লড়াই করে যাচ্ছিলেন অ্যারণ, পিলকিংটন, জেজেরা। ৭৪ মিনিটে রানা ঘরামির পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নেমে গোল করলেন 'মিজো স্নাইপার' জেজে। যদিও তখনওপ ৬-৪ ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছে লাল-হলুদ। এরপর ৯৪ মিনিটে গোল করে ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করেন অ্যারণ। লাল-হলুদের হয়ে দ্বিতীয় গোল করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত ওডিশার কাছে ৫-৬ ব্যবধানে হারতে হল।
এই ম্যাচে খেলতে নামার আগে লিভারপুল কিংবদন্তি লাল-হলুদ সমর্থকদের আই লিগ না জেতার জন্য কটাক্ষ করেছিলেন। তিনি হয়তো তখনও জানতেন না যে তাঁর ফুটবলাররা এমন একরাশ লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়বে। সর্বশক্তি দিয়েই ওডিশার বিরুদ্ধে ঝাঁপাবেন ফাওলার। সেই মত শুরু থেকে ব্রাইট, পিলকিংটনদের নামিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে লাভ হল না। সম্মানরক্ষার লড়াইতেও লিগ তালিকার শেষে থাকা দলের কাছে এমনভাবে হারতে হল।
জোড়া ডার্বি হার তো ছিলই। এর সঙ্গে যোগ হল এই লজ্জাজনক বিপর্যয়। লাল-হলুদের রক্ষণকে নিয়ে ছেলেখেলা করল ওডিশার স্ট্রাইকাররা। তাই তো আইএসএলের ইতিহাসে প্রথমবার ১১টি গোলের সাক্ষী থাকলেন দর্শকরা। যেখানে লাল-হলুদ হজম করল ৬ গোল!