n নায়ক: আইএসএল ট্রফি নিয়ে মুম্বই সিটি এফসির বিপিন সিংহ। টুইটার
ভারতীয় ফুটবলের নতুন তারকা তিনি। শনিবার রাতে সপ্তম আইএসএলের ফাইনালে শেষ মুহূর্তে করা তাঁর গোলেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে এটিকে-মোহনবাগানের। শুধু তাই নয়। আইএসএলে এই মরসুমে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে হ্যাটট্রিকের নজিরও তাঁর দখলে। অথচ সেই বিপিন সিংহের ফুটবলজীবন শুরু হয়েছিল লেফ্ট
ব্যাক হিসেবে!
মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে প্রায় তিরিশ কিলোমিটার দূরে ওয়াংগোই গ্রামে জন্ম বিপিনের। সরকারি কর্মচারী বাবা ইবোচাও সিংহ গ্রামেরই একটি ক্লাবে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বিপিনকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই মণিপুর পুলিশ দলে ডাক পান মুম্বই সিটি এফসি তারকা। কয়েক বছরের মধ্যেই সুযোগ পান শিলংয়ের লাজ়ং এফসিতে। জাতীয় দলের দরজাও খুলে যায় তাঁর সামনে। কিন্তু বিপিনের জীবনে কোনও আনন্দ ছিল না! ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ভক্ত স্বপ্ন দেখতেন, গোল করে দলকে জেতাচ্ছেন। রোনাল্ডোর ভঙ্গিতে উৎসব করছেন। কিন্তু স্বপ্নপূরণ করার সুযোগই ছিল না তাঁর সামনে। বাধ্য হয়ে রক্ষণেই খেলতেন। কী ভাবে লেফ্ট ব্যাক থেকে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হয়ে উঠলেন?
ওমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে ফ্রেন্ডলি ম্যাচের জন্য ভারতের সিনিয়র দলে প্রথম বার ডাক পেয়েছেন বিপিন। আজ, সোমবার দুবাই উড়ে যাবে জাতীয় দল। বিপিনকে রবিবার রাতেই দিল্লি পৌঁছতে হবে। তাই গ্রামে ফেরার সুযোগ নেই। শনিবার রাতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে বাড়িতে ফোন করেছিলেন। শুনেছেন, ওয়াংগোই গ্রামে একটি হল ভাড়া করে খেলা দেখেছেন সকলে। দিল্লি রওনার হওয়ার প্রস্তুতির ফাঁকেই গোয়া থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে তাঁর উত্থানের চমকপ্রদ কাহিনি শোনালেন চার দিন আগে ২৫ বছর পূর্ণ করা বিপিন, ‘‘প্রথম থেকেই আমাকে লেফ্ট ব্যাক পজিশনে খেলাতেন কোচেরা। অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় দলেও রক্ষণে খেলতাম। কিন্তু আমি চাইতাম গোল করতে। অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় দলের হয়ে খেলে মণিপুরে ফেরার পরেই সিদ্ধান্ত নিই, যে কোনও মূল্যে আমাকে পজিশন বদলাতে হবে। স্ট্রাইকার হওয়ার মতো উচ্চতা আমার যে-হেতু নেই, তাই আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সমস্যা হচ্ছে, ক্লাব বা জাতীয় দলে আমাকে এই সুযোগ কেউ দেবে না। যা করার নিজেকেই করতে হবে।’’
কী ভাবে? বিপিন বললেন, ‘‘গ্রামের মাঠে একা একাই অনুশীলন শুরু করি। কখনও বল নিয়ে উঠে পেনাল্টি বক্সে সেন্টার করতাম। কখনও আবার মাঠের বিভিন্ন জায়গা থেকে গোল লক্ষ্য করে শট মারতাম। তার পরে গ্রামের বন্ধুদের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে শুরু করলাম। ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস বাড়ল।’’ বিপিন বলে চললেন, ‘‘লাজ়ংয়ে ফিরে কোচকে অনুরোধ করলাম, আমাকে অন্তত একটা সুযোগ দিন আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে খেলার। প্রথম ম্যাচেই নিজেকে
প্রমাণ করেছিলাম।’’
রক্ষণের অন্যতম ভরসা থেকে বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের আতঙ্ক হয়ে ওঠা বিপিন বছর চারেক আগে লাজ়ং থেকেই এটিকে-তে সই করেছিলেন। ২০১৭-১৮ মরসুমে আইএসএলে ১২টি ম্যাচে দু’টি গোল করেন তিনি। পরের মরসুমে এটিকে না রাখায় বিপিন যোগ দেন মুম্বই সিটি এফসি-তে। ফাইনালে পুরনো দলের বিরুদ্ধে গোল করেই কি উপেক্ষার জবাব দিলেন? বিপিন বললেন, ‘‘অতীত নিয়ে ভাবতে চাই না। যখন যে দলের হয়ে মাঠে নামি, চেষ্টা করি নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার। আইএসএলে প্রথম বার মুম্বইয়ের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেপথ্যে আমারও যে অবদান রয়েছে, এটা ভেবেই আনন্দ হচ্ছে। আমাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব কোচ সের্খিয়ো লোবেরা-র কাছে।’’
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যোগ্যতা অর্জনের পরে আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন। ভারতের সিনিয়র দলে ডাক পাওয়ার আশাও পূর্ণ হয়েছে। এ বার বিপিনের লক্ষ্য জাতীয় দলের জার্সিতে নিজেকে প্রমাণ করা। বলছিলেন, ‘‘আমাকে প্রথম একাদশে জায়গা করে নিতেই হবে। সারা জীবন ধরে এই স্বপ্নটাই তো
দেখে চলেছি।’’
সপ্তম আইএসএলে ২১ ম্যাচে পাঁচটি গোল করা বিপিনের অবশ্য মন খারাপ করোনায় আক্রান্ত হয়ে অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী দল থেকে ছিটকে যাওয়ায়। বললেন, ‘‘সুনীলভাই আমাদের সকলের অনুপ্রেরণা। তাই জাতীয় দলে ওঁর সঙ্গে খেলার সুযোগ পাব ভেবেই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। আশা করছি, সুনীল ভাই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে দলে যোগ দেবেন।’’