উত্তেজনা: রেফারির সঙ্গে তর্কাতর্কি এটিকে ফুটবলারদের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
রণক্ষেত্র যুবভারতী!
এটিকে বনাম কেরল ব্লাস্টার্স ম্যাচে শিরোনামে কোনও ফুটবলার নন, দুই কোচ! এক জন এটিকে কোচ আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাস। আর এক জন কেরল ব্লাস্টার্সের সহকারী কোচ ইসফাক আহমেদ।
কোচি থেকে কলকাতা— ফের কেরল কাঁটায় বিদ্ধ এটিকে। তাতেই হতাশা আরও বেড়ে গিয়েছিল হাবাসের। অবশ্য রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় ম্যাচের শুরু থেকেই উত্তপ্ত হতে শুরু করে আবহ। তর্কাতর্কি চলতে থাকে কেরলের প্রধান কোচ এলকো সাতৌরি ও হাবাসের মধ্যে। ম্যাচের সংযুক্ত সময়ে তা চরমে পৌঁছয়। হঠাৎ দেখা গেল ক্ষিপ্ত হাবাস কেরল রিজার্ভ বেঞ্চের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন। তার পরেই তাঁর আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ইসফাক। এর পরেই লাল কার্ড দেখিয়ে এটিকে কোচকে মাঠের বাইরে বার করে দেন রেফারি। সূত্রের খবর, কড়া শাস্তির মুখে পড়তে চলেছেন হাবাস। এটিকে কোচের বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। প্রথম আইএসএলে গোয়ায় ম্যাচ খেলতে গিয়ে রবার্ট পেরেসের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসির প্রাক্তন কোচ রিকি হারবার্টের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়িয়েছিলেন।
ম্যাচের পরে এটিকের সহকারী কোচ মানুয়েল পেরেসের তির কেরল কোচ এলকোর দিকেই। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘হোলিচরণ নার্জারির গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরে হাবাসকে লক্ষ্য করে মাঠে থুথু ফেলেন এলকো। তাতেই মারমুখী হয়ে উঠেছিলেন হাবাস।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘ম্যাচের শুরু থেকেই এলকো বিভিন্ন ভাবে প্ররোচিত করছিলেন হাবাসকে।’’ এলকোর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘স্প্যানিশ ভাষায় আমাদের গালাগালি করেছেন হাবাস।’’ ইসফাক বলেন, ‘‘এলকোকে মারার উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলেন হাবাস। কোচকে বাঁচাতেই এগিয়ে গিয়েছিলাম। তখনই হাবাস আমাকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেন।’’
আইএসএলের উদ্বোধনী ম্যাচে দু’বারের চ্যাম্পিয়ন এটিকে-কে হারিয়েই অভিযান শুরু করেছিল কেরল। রবিবার যুবভারতীতে ফের রয় কৃষ্ণদের হারিয়েই খেতাবি দৌড়ে ভেসে থাকল কেরল। ১২ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে উঠে এল ছ’নম্বরে। ১২ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে তিনে এটিকে।
কেরলের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে এটিকে সমর্থকদের উদ্বেগের প্রধান কারণ ছিল ডেভিড উইলিয়ামসের চোট। কিন্তু এটিকে কোচ জোর গলায় বলেছিলেন, ‘‘ফুটবল এগারো জনের খেলা। কোনও এক জনকে নিয়ে আমি ভাবি না।’’ ডেভিড উইলিয়ামস পাশে না থাকলে যে রয় কৃষ্ণ ছন্দ হারিয়ে ফেলেন, তা রবিবার আরও বেশি করে বোঝা গেল।
রবিবাসরীয় যুবভারতীতে ৩-৫-২ ছকে দল সাজিয়েছিলেন এটিকে কোচ। ফরোয়ার্ডে রয় কৃষ্ণের সঙ্গে বলবন্ত সিংহ। কিন্তু দু’জনকে দেখে মনে হল, রবিবারই প্রথম একসঙ্গে তাঁরা মাঠে নেমেছিলেন। প্রথমার্ধে মাত্র একবারই গোল করার মতো সুযোগ পেয়েছিল এটিকে। তা-ও ৩৫ মিনিটে। কৃষ্ণের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার ১৩ মিনিটে কেরল পেনাল্টি বক্সের মধ্যে রয় কৃষ্ণ বল নামিয়ে দিয়েছিলেন বলবন্তকে। কিন্তু অবিশ্বাস্য ভাবে ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দেন তিনি। এর পরে আর বলবন্তকে মাঠে রাখার ঝুঁকি নেননি হাবাস। একসঙ্গে দু’টি পরিবর্তন করেন তিনি। বলবন্তের জায়গায় নামেন জবি জাস্টিন। অগাস্টিন গার্সিয়ার পরিবর্তে জয়েশ রানে। তাতেও ছবি বদলাল না, ৭০ মিনিটে অসাধারণ শটে গোল করে এটিকে শিবিরে অন্ধকার নামিেয় আনলেন হোলিচরণ নার্জারি।
এ দিকে, বিতর্কের মধ্যেই যুবভারতীর গ্যালারিতে দেখা গেল দুই ভিন্ন মেজাজের পোস্টার। এটিকের সঙ্গে মোহনবাগানের গাঁটছড়া বাঁধা নিয়ে আপত্তি জানালেন ভক্তেরাই। পোস্টারে লেখা ছিল, ‘‘সংযুক্তিকরণ চাই না।’’ ইস্টবেঙ্গলের বোরখা পেরেসের ছোট ছেলের অস্ত্রোপচার আজ। তার সুস্থতা কামনা করেও দেখা গেল পোস্টার।
এটিকে: অরিন্দম ভট্টাচার্য, প্রীতম কোটাল, অগাস্টিন গার্সিয়া (জয়েশ রানে), সুমিত রাঠি, ভিক্তর আদেভা, প্রবীর দাস, আর্মান্দো পেনা, ফ্রান্সিসকো হাভিয়ার হার্নান্দেস, সুসাইরাজ, বলবন্ত সিংহ (জবি জাস্টিন) ও রয় কৃষ্ণ।
কেরল ব্লাস্টার্স: রেহনেস টি পি, মহম্মদ রকিপ, খেসেল কার্নেইরো, আব্দুল হাক্কু, মারিয়ো ব্লাসকো, মুহম্মদ মুস্তাফা, সত্যসেন সিংহ, হোরিচরণ নার্জারি (প্রশান্ত কে), ভ্লাকতো দ্রোভারভ, ওগবেচে, রাফায়েল মেসি।