মত: সুইং-নিয়ে উদ্বেগে পাঠান।
অস্ট্রেলিয়ায় অভিষেক সফরে নজর কেড়েছিল তাঁর রিভার্স সুইং। ব্যাট ও পায়ের ফাঁক দিয়ে বোল্ড করে দিয়েছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে। ২০০৬-এ করাচিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টে হ্যাটট্রিক করে সাড়া ফেলেন ক্রিকেটবিশ্বে। ভারতীয় ক্রিকেটে সুইংয়ের অন্যতম শিল্পী ইরফান পাঠানের আশঙ্কা, রিভার্স সুইং হারিয়ে যেতে শুরু করল না তো?
সংক্রমণ এড়াতে আইসিসি-র পরিবর্তিত নিয়ম অনুযায়ী চলছে ক্রিকেট। ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট সিরিজ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। সিরিজ শুরু হওয়ার আগে অনেকের কৌতূহল ছিল রিভার্স সুইং নিয়ে। কারণ, রিভার্স করানোর জন্য বলের এক দিক থুতুর ব্যবহারে চকচকে ও ভারী করা হত। সেই প্রথায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আইসিসি। কাজ চালাতে হচ্ছে ঘাম দিয়ে। প্রাক্তন ভারতীয় পেসার ইরফান পাঠান টিভিতে সাউদাম্পটন টেস্ট দেখেছেন। তাঁর উপলব্ধি, ‘‘রিভার্স সুইং তো করছেই না। প্রচলিত সুইংও কম দেখা যাচ্ছে।’’
কিংবদন্তি মাইকেল হোল্ডিং আগেই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘থুতু ব্যবহার বন্ধ হওয়ায় কি হারিয়ে গেল সুইং?’’ ভারতীয় পেসার ইরফান একেবারে নিশ্চিত, নিয়ম পরিবর্তনের জন্যই হয়তো হারিয়ে যেতে শুরু করেছে এই কৌশল। আনন্দবাজারকে ইরফান বলেন, ‘‘ইংল্যান্ডে সুইং করাতে সমস্যা হয় না। ডিউকস বল বেশি সুইং করে। কারণ, ডিউকসের সিম (বলের সেলাই) এসজি অথবা কোকাবুরার চেয়ে উঁচু। হাওয়া কাটতে সাহায্য করে।’’ যোগ করেন, ‘‘সাউদাম্পটন টেস্টের দ্বিতীয় দিন ইংল্যান্ডের প্রথম চল্লিশ ওভারে বল কিছুটা নড়াচড়া করছিল। বল পুরনো হতেই বন্ধ হয়ে গেল সুইং। অথচ পুরনো বলই রিভার্স সুইংয়ের জন্য আদর্শ।’’
ইংল্যান্ডের পরিবেশে কেন রিভার্স সুইং দেখা গেল না? ইরফানের ব্যাখ্যা, ‘‘থুতু দিয়ে বল পালিশ করার প্রথা বন্ধ হওয়ার জন্যই হয়তো এই পরিবর্তন। রিভার্স সুইং করানোর জন্য বলের এক দিক চকচকে রাখার সঙ্গেই ভারী করতে হয়। যে দিক ভারী, সে দিকে সুইং করে পুরনো বল। থুতুর সাহায্যে সহজেই রিভার্সের জন্য তৈরি করা যায় বল। কারণ, ঘামের চেয়ে থুতুর ওজন বেশি। ঘাম তুলনামূলক হাল্কা। এটাই পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে।’’
ঘামের ব্যবহার করে সবাই বল পালিশ করার সুযোগও পাচ্ছে না। ইরফান বলছিলেন, ‘‘প্রত্যেকের সমান পরিমাণে ঘাম হয় না। বিশেষ করে ইংল্যান্ডে ঠান্ডা হাওয়া বয়, তাই ঘাম হওয়ার সম্ভাবনাও কম। শেষ ওভার বল করে আসা বোলারকেই বল তৈরি করার দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। আগের নিয়মে কিন্তু প্রত্যেকেই সেই দায়িত্ব নিত। প্রত্যেকেই চেষ্টা করত, থুতু ব্যবহার করে বল চকচকে রাখার। এখন যা দেখা যাচ্ছে না।’’
প্রাক্তন পেসার মনে করেন, ইংল্যান্ডেই সুইং বন্ধ হলে উপমহাদেশ অথবা অস্ট্রেলিয়ায় আরও সমস্যা হবে। তাঁর মতে, ‘‘অস্ট্রেলিয়ায় কোকাবুরা বল ব্যবহার হয়। যার সিম দ্রুত বসে যায়। পুরনো বলে রিভার্স সুইংই ভরসা। ভারতের পরিবেশে পেসারদের রিভার্সই অস্ত্র। এই পরিবর্তিত নিয়মে আমরা কি উপমহাদেশে রিভার্স সুইং দেখতে পাব? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছি। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়, সুইং করাতে সমস্যা হবেই।’’
১৯৮৩ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক রজার বিনি যদিও ইরফানের সঙ্গে একমত নন। তিনি মনে করেন, সুইং করানোর জন্য পরিবেশ ও আবহাওয়া সব চেয়ে জরুরি। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘সাউদাম্পটন টেস্টের প্রথম দু’দিন কিন্তু মেঘলা আবহাওয়া ছিল। পরিস্থিতির সদ্ব্যবহার করে হোল্ডার ও গ্যাব্রিয়েল ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ে ধস নামায়। তৃতীয় দিন উইকেট অনেকটাই পাটা হয়ে গিয়েছে। মেঘলা আবহাওয়াও আর নেই। তাই হয়তো সুইং কম করেছে।’’
প্রাক্তন তারকা একেবারেই মানতে পারছেন না, ঘাম ব্যবহার করে বল পালিশ করলে সুইং বন্ধ হয়ে যাবে। বিনির উপলব্ধি, ‘‘বলের এক দিক চকচকে রাখা নিয়ে কথা। ঘাম ব্যবহার করে ক্রমশ পালিশ করলেই সুইংয়ের জন্য তৈরি হয়ে যাবে সেই বল।’’