ক্যাপ্টেন মর্গ্যানের দেশের সামনে ধরাশায়ী বিশ্বজয়ীরা, ইংল্যান্ড অলআউট ৮৫

অ্যাশেজের সাত দিন আগে ইংল্যান্ড শিবিরে উদ্বেগ তৈরি করার মূল কাণ্ডারির নাম টিম মুরতাঘ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৯ ০৫:১৭
Share:

চমক: বিশ্বকাপ জয়ের সেই লর্ডসে বুধবার নতুন নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ আয়ারল্যান্ডের টিম মুরতাঘের। নিলেন পাঁচ উইকেট। তাঁর সুইংয়ের কাছেই আত্মসমর্পণ বিশ্বজয়ী ইংল্যান্ডের। ছবি: গেটি ইমেজেস

বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দশ দিনের মধ্যেই বড় ধাক্কা ইংল্যান্ড শিবিরে। বুধবার লর্ডসে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে চার দিনের টেস্টের প্রথম দু’ঘণ্টার মধ্যেই ৮৫ রানে অলআউট ইংল্যান্ড। জবাবে ২০৭ রানে অলআউট আয়ারল্যান্ড।

Advertisement

অ্যাশেজের প্রস্তুতি হিসেবে চার দিনের এই টেস্ট খেলছে ইংল্যান্ড। টেস্ট খেলিয়ে দেশ হিসেবে আয়ারল্যান্ড স্বীকৃত হলেও তাদের বড় প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখতে শুরু করেনি ক্রিকেটবিশ্ব। কিন্তু লর্ডসের এই টেস্ট বদলে দিতে পারে তাদের ভবিষ্যৎ।

অ্যাশেজের সাত দিন আগে ইংল্যান্ড শিবিরে উদ্বেগ তৈরি করার মূল কাণ্ডারির নাম টিম মুরতাঘ। কাউন্টিতে মিডলসেক্স-এর হয়ে এর আগে বহু বার লর্ডসে খেলেছেন। কিন্তু নজর কাড়ার মতো কিছু করতে পারেননি। কে জানত, টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে লর্ডসে পা রাখার দিনই ড্রেসিংরুমের অনর’স বোর্ডে নাম উঠবে তাঁর। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলের বিরুদ্ধে কাঁটা হয়ে দাঁড়াবেন লন্ডনে বড় হয়ে ওঠা পেসার!

Advertisement

এ দিন নয় ওভার বল করে ১৩ রানে পাঁচ উইকেট পেয়েছেন এই আয়ারল্যান্ডের মিডিয়াম পেসার। ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জেসন রয় (৫) ও ররি বার্নস (৬)-কে প্রায় একই ভঙ্গিতে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সকালে নীল আকাশ দেখে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক জো রুট। তিনি হয়তো বুঝতে পারেননি, উইকেটে স্যাঁতসেঁতে ভাব রয়েছে। যেখানে সুবিধা পেতে পারেন পেসারেরা। সেটাই প্রমাণিত।

বিশ্বকাপে আট ম্যাচে ৪৪৩ রান করা রয়কে দেখে বোঝা যাচ্ছিল না, কয়েক দিন আগে তিনিই ছিলেন বিশ্বক্রিকেটের ত্রাস। মিচেল স্টার্ক, যশপ্রীত বুমরাদের শাসন করে গিয়েছেন বিশ্বকাপ জুড়ে। এ দিন মুরতাঘের অফস্টাম্পের উপরে হাল্কা আউটসুইং দেখেই ড্রাইভ করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন রয়। ব্যাট স্পর্শ করে বল চলে যায় ফার্স্ট স্লিপ অঞ্চলে। একই ভঙ্গিতে ফিরে যান বার্নস। তারকা ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্টো (০)-র উইকেটটি সব চেয়ে আকর্ষণীয়। ঠিক অফস্টাম্পের উপরে আউটসুইং ভেবে খেলতে যান ইংল্যান্ড উইকেটকিপার। কিন্তু বল উইকেটে পড়ে বেয়ারস্টোর ভেতরের দিকে কাট করে আছড়ে পড়ে স্টাম্পে।

বেয়ারস্টোকে ফেরানোর দু’বল পরেই মুরতাঘ একই ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দেন ক্রিস ওকসকে। অফস্টাম্পের উপর থেকে মুরতাঘের অফকাটার আছড়ে পড়ে ওকসের প্যাডে। মইন আলিও প্রায় একই রকম ডেলিভারিতে ফিরে যান। বাঁ-হাতি মইনের অফস্টাম্পের উপর থেকে বাইরের দিকে কাট করে বল। সেই ফাঁদে পা দিয়েই কভার ড্রাইভ করতে এগিয়ে যান মইন। ব্যাট ছুঁয়ে বল সেই উইকেটকিপার গ্যারি উইলসনের হাতে। স্বপ্নপূরণ হয় ৩৭ বছর বয়সি মিডিয়াম পেসারের।

ইংল্যান্ড ইনিংস শেষে মুরতাঘ বলেন, ‘‘সত্যি বলতে শেষ দু’ঘণ্টায় কী হল তা এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। প্রথমত লর্ডসে টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে খেলার সুযোগ পাওয়াই স্বপ্নের মতো ছিল। কিন্তু সফল বোলারদের তালিকায় নাম উঠবে তা ভাবতে পারিনি। গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো অনুভূতি হচ্ছে। আমার সঙ্গে বাকিরাও অসাধারণ বোলিং করেছে। এ ভাবে প্রথম সেশন শেষ হলে সবারই ভাল লাগে।’’

মুরতাঘের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিপক্ষকে চাপে রাখলেন অভিজ্ঞ পেসার বয়েড র‌্যাঙ্কিন ও মার্ক অ্যাডেয়ার। তিন উইকেট নেন মার্ক। দুই উইকেট র‌্যাঙ্কিনের।

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার কয়েক দিন পরে ইংল্যান্ড অলরাউন্ডার স্যাম কারেন বলেছিলেন, ‘‘এখন যে কোনও দলই আমাদের বিরুদ্ধে খেলতে কিছুটা ভয় পাবে।’’ বুধবার ইংল্যান্ডের পারফরম্যান্স দেখে তাঁর সেই উক্তি কোনও ভাবেই মেলানো যাচ্ছে না।

স্কোরকার্ড
ইংল্যান্ড ৮৫ ও ০-০
আয়ারল্যান্ড ২০৭

ইংল্যান্ড (প্রথম ইনিংস)
বার্নস ক উইলসন বো মুরতাঘ ৬ • ২৫
রয় ক স্টার্লিং বো মুরতাঘ ৫ • ১১
ডেনলি এলবিডব্লিউ বো অ্যাডেয়ার ২৩ • ২৮
রুট এলবিডব্লিউ বো অ্যাডেয়ার ২ • ৭
বেয়ারস্টো বো মুরতাঘ ০ • ৬
মইন ক উইলসন বো মুরতাঘ ০ • ৭
ওকস এলবিডব্লিউ বো মুরতাঘ ০ • ২
কারেন ক ম্যাকোলাম বো র‌্যাঙ্কিন ১৮ • ১৬
ব্রড ক উইলসন বো র‌্যাঙ্কিন ৩ • ১৬
স্টোন বো অ্যাডেয়ার ১৯ • ১৮
লিচ ন. আ. ১ • ৮
অতিরিক্ত ৮
মোট ৮৫(২৩.৪)
পতন: ১-৮ (রয়, ২.৪), ২-৩৬ (ডেনলি, ৯.৫), ৩-৩৬ (বার্নস, ১০.৪), ৪-৪২ (রুট, ১১.৬), ৫-৪২ (বেয়ারস্টো, ১২.৪), ৬-৪২ (ওকস, ১২.৬), ৭-৪৩ (মইন, ১৪.২), ৮-৫৮ (ব্রড, ১৮.৪), ৯-৬৭ (কারেন, ২০.১), ১০-৮৫ (স্টোন, ২৩.৪)।
বোলিং: টিম মুরতাঘ ৯-২-১৩-৫, মার্ক অ্যাডেয়ার ৭.৪-১-৩২-৩, স্টুয়ার্ট থমসন ৪-১-৩০-০, বয়েড র‌্যাঙ্কিন ৩-১-৫-২।

আয়ারল্যান্ড (প্রথম ইনিংস)
পোর্টারফিল্ড ক লিচ বো কারেন ১৪ • ৪০
ম্যাকোলাম বো কারেন ১৯ • ৫৪
বালবার্নি বো স্টোন ৫৫ • ৬৯
স্টার্লিং এলবিডব্লিউ বো ব্রড ৩৬ • ৪৩
ও’ব্রায়েন ন. আ. ২৮ • ৭৩
উইলসন ক রুট বো স্টোন ০ • ৪
থমসন বো ব্রড ০ • ৫
অ্যাডেয়ার বো কারেন ৩ • ৯
ম্যাকব্রাইন বো ব্রড ১১ • ৩৬
মুরতাঘ ক বার্নস বো স্টোন ১৬ • ১০
র‌্যাঙ্কিন বো মইন ৭ • ৭
অতিরিক্ত ১৮ মোট ২০৭ (৫৮.২)
পতন: ১-৩২ (পোর্টারফিল্ড, ১২.১), ২-৪৫ (ম্যাকোলাম, ১৮.৪), ৩-১৩২ (স্টার্লিং, ৩৩.৩), ৪-১৩৮ (বালবার্নি, ৩৬.১), ৫-১৩৮ (উইলসন, ৩৬.৫), ৬-১৪১ (থমসন, ৩৯.১), ৭-১৪৯ (অ্যাডেয়ার, ৪৩.১), ৮-১৭৪ (ম্যাকব্রাইন, ৫২.৪), ৯-১৯৫ (মুরতাঘ, ৫৫.৩), ১০-২০৭ (র‌্যাঙ্কিন, ৫৮.২)।
বোলিং: স্টুয়ার্ট ব্রড ১৯-৫-৬০-৩, ক্রিস ওকস ১০-২-৩৪-০, ওলি স্টোন ১২-৩-২৯-৩, স্যাম কারেন ১০-৩-২৮-৩, জ্যাক লিচ ৩-০-২৬-০, মইন আলি ৪.২-১-১৪-১।

ইংল্যান্ড (দ্বিতীয় ইনিংস)
লিচ ন. আ. ০ • ৬
বার্নস ন. আ. ০ • ০
অতিরিক্ত ১৮ মোট ২০৭ (৫৮.২)
বোলিং: টিম মুরতাঘ ১-১-০-০।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement