মায়াঙ্ক যাদব। ছবি: আইপিএল।
লখনউ সুপার জায়ান্টস-পঞ্জাব কিংস ম্যাচে আলোচনায় উঠে এসেছেন দিল্লির তরুণ জোরে বোলার মায়াঙ্ক যাদব। ২১ বছরের ময়ঙ্ক ২৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে লখনউয়ের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন ঠিকই। তবে আলোচনায় উঠে এসেছেন তাঁর একটি বলের গতির জন্য।
এ বারের আইপিএলে দ্রুততম বল করার কৃতিত্ব এখন মায়াঙ্কের দখলে। শনিবারের ম্যাচে পঞ্জাবের ব্যাটারদের গতিতে বিব্রত করেছেন তিনি। তাঁর একটি বলের গতি ছিল ঘণ্টায় ১৫৫.৮ কিলোমিটার। যা ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের নজর কেড়ে নিয়েছে। পঞ্জাবের ইনিংসের ১২তম ওভারের প্রথম বলটি খেলার জন্য শিখর ধাওয়ান ব্যাট তোলার সময়ও পাননি কার্যত। মায়াঙ্কের সব থেকে মন্থর বলটির গতি ছিল ১৩৯ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
কে এই ময়ঙ্ক? ২০২২ সালের নিলামে ২০ লাখ টাকায় মায়াঙ্ককে দলে নিয়েছিল লখনউ। সে বার ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি তাঁর। ২০২৩ সালে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের জন্য খেলতে পারেননি। শনিবার ক্রিকেটজীবনের প্রথম আইপিএল ম্যাচ খেললেন তিনি। অর্থাৎ অভিষেক ম্যাচেই নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন দিল্লির তরুণ। এখনও পর্যন্ত একটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন মায়াঙ্ক। দিল্লির হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর মোট উইকেটের সংখ্যা ৫১। যা বেশ সাধারণ। তা হলে শনিবার পঞ্জাবের বিরুদ্ধে এমন পারফরম্যান্সের রহস্য কী? মায়াঙ্ক বলেছেন, ‘‘আইপিএলে অভিষেক ম্যাচ হলেও আমি কোনও রকম চাপ নিতে চাইনি। উইকেটে বল রাখার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি, যতটা বেশি সম্ভব গতিতে বল করার। প্রথমে ভেবেছিলাম, গতি কমিয়ে-বাড়িয়ে ব্যাটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করব। পিচ জোরে বোলিংয়ের সহায়ক ছিল। তাই অধিনায়ক নিকোলাস পুরান বলেন, বলের গতি কমানোর প্রয়োজন নেই। সেই মতোই বল করার চেষ্টা করেছি।’’
এত বড় মঞ্চে প্রথম ম্যাচ খেলার কোনও চাপ ছিল না? মায়াঙ্ক বলেছেন, ‘‘অনেকের কাছেই শুনেছি, প্রথম ম্যাচে চাপ থাকে। প্রথম বলটা ঠিকঠাক হওয়ার পর তেমন চাপ কিছু অনুভব করিনি। প্রথম উইকেট (জনি বেয়ারস্টো) পাওয়ার অনুভূতিটা দারুণ। গত বছরের চোট আমাকে একটু পিছিয়ে দিয়েছে। না হলে হয়তো আরও কম বয়সে আইপিএলে অভিষেক হতে পারত। নিজের একটা লক্ষ্য ঠিক করে নিয়েছিলাম। সেই মতোই চেষ্টা করছি।’’
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞেরা মায়াঙ্কের বলের গতিতে বিস্মিত হলেও অবাক নন পুরান। শনিবার লখনউকে নেতৃত্ব দেওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ব্যাটার বলেছেন, ‘‘নেটেও আস্তে বল করতে পারে না মায়াঙ্ক। ও বোধহয় জানে না কী করে বলের গতি কমাতে হয়! ওর বল নেটে খেলেছি। প্রথম বার খেলার আগে কাইল মেয়ার্স আমাকে সতর্ক করে দিয়েছিল। আমি খুশি শেষ পর্যন্ত আইপিএলে অভিষেক হল মায়াঙ্কের। আশা করি আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে মায়াঙ্ক ক্রিকেট আলোচনার কেন্দ্র চলে আসবে।’’ পুরানের আশা, আগামী দিনে লখনউ ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি এবং ভারতীয় ক্রিকেটের সম্পদ হয়ে উঠবেন মায়াঙ্ক। যদিও অভিষেক ম্যাচে নজরকাড়া মায়াঙ্ক বলেছেন, ‘‘প্রথম ম্যাচে এমন কিছু সত্যিই আশা করিনি।’’
প্রতিপক্ষ দলের বোলারের প্রশংসা করেছেন পঞ্জাব অধিনায়ক ধাওয়ানও। বাঁহাতি ওপেনার বলেছেন, ‘‘মায়াঙ্ক দারুণ বল করেছে। ওর বলের গতি আমাদের চমকে দিয়েছে। আমি বেশ উপভোগ করেছি। ধারাবাহিক ভাবে বলের এমন গতি বজায় রাখা সহজ নয়।’’ লখনউয়ের বোলিং কোচ মর্নি মর্কেলও উচ্ছ্বাস গোপন করেননি। তিনি বলেছেন, ‘‘মায়াঙ্ক শুধু ভাল বলই করেনি। গুরুত্বপূর্ণ উইকেটগুলোও তুলে নিয়েছে। গত মরসুমটা ওর ভাল যায়নি। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচেই চোট পেয়েছিল। আমি ওকে একটা কথাই বলেছি, ভাল ক্রিকেট খেলার জন্য প্রয়োজন প্রাথমিক বিষয়গুলো ঠিক ভাবে করা। বলের লাইন এবং লেংথের ব্যাপারে সতর্ক থাকার কথা বলেছি। মায়াঙ্ক সেটাই করার চেষ্টা করে। ম্যাচেও বাড়তি কিছু করার চেষ্টা করেনি। ওর বলের গতি বাড়তি পাওনা।’’
গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ।
লখনউয়ের তরুণ বোলারের পারফরম্যান্সে বিস্মিত ইংল্যান্ডের প্রাক্তন জোরে বোলার স্টুয়ার্ট ব্রডও। আইপিএলের অন্যতম ধারাভাষ্যকার বলেছেন, ‘‘মায়াঙ্কের বলের গতি সহজাত। বাড়তি কিছু চেষ্টা করে না। কিন্তু সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বলের লাইন এবং লেংথ। এত কম বয়সে এটা সাধারণত দেখা যায় না।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘তরুণ বোলারেরা অনেক সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। উইকেট পেলে উত্তেজিত হয়ে বাড়তি কিছু করার চেষ্টা করে। মায়াঙ্কের মধ্যে তেমন কিছু দেখিনি। বেশ পরিণত আচরণ করেছে। ওর বোলিং ভীষণ উপভোগ করেছি।’’ ব্রডের মতে, নিজেকে ধরে রাখতে পারলে দ্রুত ভারতীয় দলে জায়গা করে নেবে মায়াঙ্ক। শনিবারই সহ-ধারাভাষ্যকার স্টিভ স্মিথকে সতর্ক করে দিয়েছেন ব্রড। তাঁর মতে, ভারতীয় দলের সুযোগ পেলে বছরের শেষে ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ়েও স্মিথদের সমস্যা ফেলবেন মায়াঙ্ক। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার পার্থের মতো দ্রুত গতির পিচে মায়াঙ্ককে সামলানো কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে পারে।