IPL 2024

আইপিএলের মাঝে ১০ নেতার মার্কশিট, কে বেশি পেলেন, কাকে কম নম্বর দিল আনন্দবাজার অনলাইন

ক্রিকেটে অধিনায়কের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অধিনায়কের একটি সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারে ম্যাচের রং। কোণঠাসা দলকে ফিরিয়ে আনতে পারে লড়াইয়ে। আবার ভুল সিদ্ধান্তে সহজ ম্যাচ হতে পারে হাতছাড়া।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২৭
Share:

আইপিএল ট্রফির সঙ্গে ১০ দলের অধিনায়ক। —ফাইল চিত্র।

কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং রাজস্থান রয়্যালস মঙ্গলবার আইপিএলে ৩১তম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল। ১০টি ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির কমপক্ষে ছ’টি করে ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে। রাজস্থান এখনও পর্যন্ত হেরেছে একটি ম্যাচ। আবার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু জিতেছে মাত্র একটি ম্যাচ। ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের দিকে নজর রাখছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। তেমনই নজর রয়েছে ১০টি দলের অধিনায়কের দিকেও। অধিনায়ক হিসাবে কেমন পারফরম্যান্স করছেন শ্রেয়স আয়ার, সঞ্জু স্যামসন, হার্দিক পাণ্ড্যেরা? বিশ্লেষণ করে ১০-এর মধ্যে নম্বর দিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

সঞ্জু স্যামসন (৬)

সাতটি ম্যাচ খেলে ছ’টি জিতেছে রাজস্থান। ১২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে তারা। দলের অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন। ব্যাট হাতে ধারাবাহিক ভাবে রান করছেন। ২৭৬ রান করে কমলা টুপির দৌড়ে রয়েছেন চতুর্থ স্থানে। উইকেটরক্ষক হিসাবেও দলকে ভরসা দিচ্ছেন। ক্রিকেটার হিসাবে নজর কাড়লেও তাঁর ক্রিকেট মস্তিষ্ক নিয়ে প্রশ্ন আছে। একাধিক ম্যাচে দেখা গিয়েছে, চাপের সময় পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন জস বাটলার। বোলার পরিবর্তন, ফিল্ডিং সাজানো, বোলারদের পরামর্শ দিচ্ছেন ইংল্যান্ডের সাদা বলের অধিনায়ক। সঞ্জু থাকছেন উইকেটরক্ষকের জায়গাতেই। এমনিও বাটলার, রবিচন্দ্রন অশ্বিনদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সঞ্জু। চাপের সময়টুকু বাদ দিলে সঞ্জু বেশ সাবলীল। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চাপের মুখে দলকে দিশা দেখানোই অধিনায়কের মূল দায়িত্ব। এই ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে সঞ্জু। শুধু নিজে পারফর্ম করে উদাহরণ তৈরি করাই অধিনায়কের কাজ হতে পারে না। রাজস্থান অধিনায়কের চার নম্বর কাটা গেল। পাবেন ১০-এর মধ্যে ছয়।

Advertisement

শ্রেয়স আয়ার (৫)

দল ভাল খেললেও ফর্মে নেই কলকাতা নাইট রাইডার্স অধিনায়ক। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের উপযোগী ব্যাটিং করতে পারছেন না শ্রেয়স। আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা যাচ্ছে। যা ফুটে উঠছে তাঁর নেতৃত্বের সময়ও। মাঠে সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। যদিও ডেথ ওভারে শ্রেয়সের বোলিং পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। মিচেল স্টার্ককে কী ভাবে ব্যবহার করলে সেরা ফল পাওয়া যেতে পারে, তা এখনও বুঝে উঠতে পারেননি। ব্যাটিং অর্ডারের চার নম্বরে নিয়মিত নামছেন ফর্মে না থাকা শ্রেয়স। এমন জায়গায় ফিল্ডিং করেন, ডিআরএস নেওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁকে সম্পূর্ণ নির্ভর করতে হচ্ছে সতীর্থদের উপর। পরিস্থিতি সামলাতে স্ট্রাটেজিক টাইম আউটের সময় মাঠে ঢুকতে হচ্ছে মেন্টর গৌতম গম্ভীরকে। অধিনায়ক শ্রেয়স ১০-এর মধ্যে পাচ্ছেন পাঁচ।

রুতুরাজ গায়কোয়াড় (৭)

আইপিএলের শেষ চারে যাওয়ার লড়াইয়ে ভাল ভাবে রয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস। রুতুরাজ এ বার প্রথম নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলকে। আইপিএল শুরুর এক দিন আগে সরকারি ভাবে দায়িত্ব পেয়েছেন। ব্যাটার হিসাবে ফর্মে আছেন। অধিনায়ক হিসাবে দলকে সাবলীল ভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছেন। চাপের সময় অবশ্য মহেন্দ্র সিংহ ধোনি পরামর্শ নিচ্ছেন। ধোনির মতো ক্রিকেটার মাঠে থাকলে যে কেউই তাঁর পরামর্শ নেবেন। এটাই স্বাভাবিক। রুতুরাজও ব্যতিক্রম নন। বোলিং পরিবর্তন বা ফিল্ডিং সাজানোর ক্ষেত্রে নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ভুল হলে ধোনি পরামর্শ দিচ্ছেন সিনিয়র হিসাবে। চেন্নাইয়ের মতো সফল দলের নেতৃত্বের চাপ প্রথম ছ’টি ম্যাচে ভাল ভাবেই সামলেছেন রুতুরাজ। অধিনায়ক হিসাবে তিনি ১০-এর মধ্যে পাবেন সাত।

প্যাট কামিন্স (৭.৫)

ক্রিকেটার হিসাবে অভিজ্ঞ কামিন্স অধিনায়ক হিসাবেও দক্ষ। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে নেতৃত্ব দেন। আইপিএলেও সহজাত নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ৯ উইকেট নিয়ে বেগনি টুপির দৌড়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। সানরাইজার্স হায়দাবাদের তেমন স্পিনার নেই। ভারতের পিচে কামিন্সকে ভরসা করতে হচ্ছে মূলত জোরে বোলারদের উপর। তাতেও তিনি অধিনায়ক হিসাবে সফল। বোলিং পরিবর্তন এবং ফিল্ডিং পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পরিণত ক্রিকেট মস্তিষ্কের ছাপ দেখা যাচ্ছে। সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ট্র্যাভিস হেডের মতো ব্যাটারকে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে খেলানো অধিনায়ক কামিন্সের দক্ষতার পরিচয়। ডেথ ওভারে বোলিং পরিবর্তন নিয়ে আরও একটু ভাবা দরকার তাঁর। হায়দরাবাদের অধিনায়ক ১০-এর মধ্যে পাবেন সাড়ে সাত।

লোকেশ রাহুল (৫)

লখনউ সুপার জায়ান্টসকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার রাহুল। জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। অধিনায়ক রাহুলের সব থেকে বড় সমস্যা, সতীর্থদের তেমন উজ্জীবিত করতে পারেন না। নিজে ভাল খেললেও অন্যদের থেকে সেরা ক্রিকেট বার করে আনতে পারেন না। আর একটা সমস্যা, তাঁর হাতে অন্য দলগুলির তুলনায় অস্ত্র কম। মাঠে শান্ত থাকেন। চাপের মুখেও মেজাজ হারান না। সাধারণ নেতৃত্ব দেন। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং পদ্ধতি মেনে চলতে পছন্দ করেন। হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ বের করার ক্ষেত্রে ততটা পারদর্শী নন অধিনায়ক হিসাবে। ১০-এর মধ্যে লখনউ অধিনায়ক পাবেন পাঁচ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

শুভমন গিল (৬)

প্রথম বার আইপিএলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শুভমন। তাঁর নেতৃত্বে গুজরাত টাইটান্স ৮৯ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছে। গুজরাতকে গত দু’বছরের মতো অপ্রতিরোধ্য না দেখালেও শুভমনের নেতৃত্ব কিন্তু নজর কাড়ছে। ঠান্ডা মাথায় দলকে পরিচালনা করেন। প্রয়োজন হলে আগ্রাসীও হতে পারেন। সিদ্ধান্ত পছন্দ না হওয়ায় আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়াতেও দেখা গিয়েছে শুভমনকে। সতীর্থদের পাশে থাকছেন। তরুণ হলেও দলের সমর্থন রয়েছে তাঁর পিছনে। অধিনায়ক হিসাবে এখনও বড় পরীক্ষার সামনে পড়তে না হলেও ২২ গজের লড়াইয়ে গুজরাত অধিনায়ক সাবলীল। ব্যাটার হিসাবেও দলকে ভরসা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবু যে দল মাত্র ৮৯ রানে অল আউট হয়ে যায়, তার অধিনায়ককে ১০-এর মধ্যে ছয়ের বেশি দেওয়া উচিত নয়।

শিখর ধাওয়ান (৭)

পঞ্জাব কিংসের অধিনায়ক ধাওয়ানকে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে মাঠে। নিজে সব সময় হাসিখুশি থাকতে পছন্দ করেন। সতীর্থদেরও হালকা রাখেন। বোলিং পরিবর্তন বা ফিল্ডিং সাজানোর ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতা যথেষ্ট। তুলনায় কম শক্তির দল নিয়েও ম্যাচের শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করার মানসিকতা রয়েছে ধাওয়ানের। চাপের মুখে দীর্ঘ আলোচনা পছন্দ করেন না। কী চাইছেন, তা কম কথায় বুঝিয়ে দিতে পারেন সতীর্থদের। কে আছে, কে নেই— এ সব নিয়ে বেশি ভাবেন না পঞ্জাব অধিনায়ক। চোটের জন্য কয়েকটি ম্যাচ খেলতে পারবেন না। তবে ক্রিকেটজীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা পঞ্জাব অধিনায়ক মাঠে প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করার চেষ্টা করছেন। অধিনায়ক ধাওয়ান পাবেন ১০-এর মধ্যে সাত।

হার্দিক পাণ্ড্য (৩)

নিজের দলেই জনপ্রিয় নন হার্দিক। প্রথম ম্যাচে রোহিত শর্মার সঙ্গে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স অধিনায়কের ব্যবহার দৃষ্টিকটু দেখিয়েছে। নিজে ফর্মে নেই। ফিটনেস নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বোলিং পরিবর্তন, ফিল্ডিং সাজানোর ক্ষেত্রে বেশ দুর্বল। কাকে কী ভাবে ব্যবহার করলে সেরা ফল পাওয়া যেতে পারে, তা এখনও ঠিক ভাবে বুঝতে পারেননি। গত দু’মরসুমে গুজরাতের অধিনায়ক হিসাবে দেখা হার্দিককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মুম্বই অধিনায়কের মধ্যে। মুম্বইয়ের মতো দলের নেতৃত্বের চাপ সামলাতে পারছেন না, বোঝা যাচ্ছে। অধিনায়ক হিসাবে হার্দিক পাবেন ১০-এর মধ্যে তিন।

ঋষভ পন্থ (৫)

বুধবার গুজরাত টাইটান্সকে মাত্র ৮৯ রানে শেষ করে দিয়ে ১১ ওভার বাকি থাকতে জিতলেও আইপিএলে এ বারও দিল্লি ক্যাপিটালস বেশ সাদামাঠা। চোট সারিয়ে দীর্ঘ দিন পর ক্রিকেটে ফেরা অধিনায়ককেও দলের মতোই দেখাচ্ছে। খেলার অনুমতি পেলেও আগের মতো ফিটনেস এখনও ফিরে পাননি। ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা নেই। তবে উইকেটরক্ষক হিসাবে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা যাচ্ছে পন্থের মধ্যে। তার প্রভাব পড়ছে নেতৃত্বেও। বোলিং পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আরও দক্ষতা দেখাতে না পারলে দলের ফল ভাল না-ও হতে পারে। ডাগ আউটে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং রিকি পন্টিংয়ের মতো দু’জন প্রাক্তন অধিনায়ককে পান পন্থ। তবু পন্থের নেতৃত্বে প্রত্যাশিত মুন্সিয়ানা দেখা যাচ্ছে না। অতিরিক্ত সময় নিচ্ছেন দু’টি ওভারের মাঝে। যে কারণে দু’বার জরিমানা হয়েছে পন্থের। অধিনায়ক হিসাবে পন্থ পাবেন ১০-এর মধ্যে পাঁচ।

ফ্যাফ ডুপ্লেসি (৪)

এখনও পর্যন্ত অধিনায়ক হিসাবে আইপিএলে ব্যর্থ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অধিনায়ককে। একটা মাত্র ম্যাচ জিতেছে তাঁর দল। ভাল ব্যাটার হলেও দক্ষ অধিনায়ক নন ডুপ্লেসি। চাপের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে তাঁর। দলের বোলিং দুর্বল। এই তথ্য মেনে নিলেও বেঙ্গালুরু অধিনায়কের নেতৃত্ব যথেষ্ট পরিণত নয়। এক এক সময় তাঁকে বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে। ধোনির নেতৃত্বে খেলা ডুপ্লেসিকে অনেক আশা নিয়ে দলে নিয়েছিলেন বেঙ্গালুরু কর্তৃপক্ষ। সেই প্রত্যাশা পূরণে তিনি ব্যর্থ এখনও পর্যন্ত। পিচের চরিত্রও ঠিক মতো বুঝতে পারছেন না অনেক সময়। দলের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে। উন্নতি করতে হবে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রেও। অধিনায়ক হিসাবে ডুপ্লেসি পাবেন ১০-এর মধ্যে চার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement