এ যেন ক্রিকেটের গলি থেকে রাজপথে উত্তরণের কাহিনি!
তালিবান ও অন্য মৌলবাদী জঙ্গি উপদ্রুত জালালাবাদ থেকে উঠে এসে বল হাতে দশম আইপিএল মাতাচ্ছেন আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খান। এতটাই যে টুর্নামেন্টের পার্পল ক্যাপও তাঁর মাথায় শোভা পাচ্ছে এই মুহূর্তে।
পাক-আফগান সীমান্ত প্রদেশ নঙ্গরহর-এর পাশতুন ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম।। শাহিদ আফ্রিদির ভক্ত রশিদ বছর সাত আগে মহল্লার গলিতে ভাইয়ের সঙ্গে টেনিস বলে ক্রিকেট খেলছিলেন। টিভিতে তখন চলছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের ম্যাচ। তা দেখেই রশিদ ঠিক করে নেন তাঁকেও একদিন দেশের হয়ে খেলতে হবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। রশিদের নিজের কথায়, ‘‘মাঠ, পরিকাঠামো ঠিকঠাক পাইনি। কিন্তু পরিশ্রমে খামতি রাখিনি। তাই এই জায়গায় আসতে পেরেছি।’’
ফেব্রুয়ারিতে আইপিএল নিলামে তাঁকে চার কোটি টাকায় তুলে নিয়েছিলেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কোচ টম মুডি। তখনই ওঠে প্রশ্নটা, ‘‘কে এই রশিদ খান?’’ মুডির তখন উত্তর ছিল, ‘‘চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখে ছেলেটা বল করতে পারে। ব্যাটসম্যানকে চাপে রাখে।’’
আইপিএলে খেলতে নেমে বল হাতে তা করেও দেখাচ্ছেন রশিদ। প্রথম ম্যাচে রয়্যাল চালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে দুই উইকেটের পর রবিবার গুজরাত লায়ন্সের বিরুদ্ধে রশিদের শিকার তিন। যার মধ্যে রয়েছেন ব্রেন্ডন ম্যাকালাম, সুরেশ রায়না এবং অ্যারন ফিঞ্চ। বাইশ গজে রশিদের লেগস্পিনের ঘূর্ণি সামলাতে গিয়ে তিন জনেই এলবিডব্লিউ। তার চেয়েও চমকপ্রদ গুজরাত লায়ন্সের বিরুদ্ধে রশিদের বোলিং বিশ্লেষণ। চার ওভার বল করে মাত্র ১৯ রানে তিন উইকেট। যার মধ্যে এগারোটাই ‘ডট বল’! ধবল কুলকার্নিকে মোক্ষম সময়ে রান আউটও করলেন তিনি।
গুজরাতকে সাত উইকেটে ১৩৫ রানের মধ্যে আটকে রাখার নায়ক প্যাভিলিয়নে ফেরার পথে সম্প্রচারকারী চ্যানেলে বলেও গেলেন, ‘‘আইপিএল-এ পার্পল ক্যাপ পাওয়াটা জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। আশা করছি টুর্নামেন্টের শেষেও টুপিটা নিজের কাছে রেখে দিতে পারব।’’ এখানেই না থেমে রশিদ আরও বলছেন, ‘‘জানি, আমার বোলিং খেলতে ব্যাটসম্যানদের সমস্যা হচ্ছে। এই পিচে উইকেট টু উইকেট বল করে গেলে ব্যাটসম্যানদের সমস্যা হবেই। আমি সব সময়েই চেষ্টা করি ‘ডট বল’ করে ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখতে।’’
গুগলি, লেগব্রেকের সঙ্গে ক্রিজটাও চমৎকার ব্যবহার করেন। সম্প্রতি আয়ার্ল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি টোয়েন্টি ম্যাচে দুই ওভারে পাঁচ রানে তিন উইকেট নিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন।
সানরাইজার্সের বোলিং পরামর্শদাতা মুরলিধরনের টিপস নিজের ঝুলিতে যতটা পারেন ঢুকিয়ে নিতে চান। একই সঙ্গে ব্যাটিংটাও ঝকঝকে করতে ভিভিএস লক্ষ্মণ এবং টম মুডির থেকে দেদার পরামর্শ নিচ্ছেন। আপ্লুত রশিদ তাই বলছেন, ‘‘আইপিএলে মহাতারকাদের পাশে পেয়ে ভাগ্যবান।’’