গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে দুরন্ত শতরান করেছেন সূর্যকুমার যাদব। ছবি: আইপিএল
টি-টোয়েন্টি মানেই চার-ছক্কার খেলা। যে খেলায় বেশির ভাগ সময়ই বোলারদের বিশেষ কিছু করার থাকে না। ব্যাটাররা একের পর এক কীর্তি গড়েন। কিন্তু সব কিছুকে বোধ হয় ছাপিয়ে গিয়েছেন সূর্যকুমার যাদব। অতিমানবিক ইনিংস খেলছেন তিনি। যে সব শট অনায়াসে বাউন্ডারির বাইরে ফেলছেন সেই সব শট মারার কথা ভাবতেই পারেন না অনেকে। তাই সূর্যের কাছে হেরেও তাঁর খেলায় মুগ্ধ প্রতিপক্ষ।
এ বারের আইপিএলে শুরুটা ভাল হয়নি সূর্যের। প্রথম ৫ ম্যাচে রান ছিল না। পছন্দের শট খেলতে গিয়ে আউট হচ্ছিলেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে প্রথম ছন্দে ফিরলেন। সেই ম্যাচে অধিনায়কত্বের পাশাপাশি রান করেছিলেন সূর্য। সেই শুরু। তার পর থেকে আর থামানো যায়নি তাঁর ব্যাট। পরের ৭ ম্যাচের মধ্যে চারটি অর্ধশতরান ও একটি শতরান করেছেন তিনি। এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কেমন ছন্দে রয়েছেন তিনি।
সূর্যের শট দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না সচিন তেন্ডুলকর। মুম্বই ইনিংসের ১৯তম ওভারে মহম্মদ শামির বলে থার্ড ম্যানের উপর দিয়ে ছক্কা মারেন তিনি। বলটি ফুল লেংথে ছিল। সেখান থেকে স্কুপ ও স্ল্যাশের মিশ্রণে একটি শট খেলেন তিনি। ডানহাতি ব্যাটারের সেই শট দেখে মুম্বই ডাগআউটে হতবাক হয়ে বসে থাকতে দেখা যায় সচিনকে। তিনি বার বার বোঝার চেষ্টা করছিলেন কী ভাবে সূর্য সেই শট মারলেন। আইপিএলে এর আগে ২০১১ সালে মুম্বইয়ের হয়ে শেষ শতরান করেছিলেন সচিন। তার পরে গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে সেই কীর্তি করেছেন সূর্য।
মাঠের এমন কোনও কোনা ছিল না, যেখানে সূর্য শট খেলেননি। ফিল্ডার দেখে খেলছিলেন তিনি। কব্জির মোচড়, উইকেটের মধ্যে নড়াচড়া করে ফাঁকা জায়গা দেখে শট মারছিলেন তিনি। গুজরাতের বোলারদের মধ্যে সব থেকে ভাল বল করেছেন রশিদ খান। ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। সেই রশিদও বুঝতে পারছিলেন না সূর্যের বিরুদ্ধে কোথায় বল করবেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সূর্যের ব্যাটিং বিশ্বাস করতে পারছি না। ওকে বল করা খুব কঠিন। সূর্য এমন কিছু শট খেলা যা ভাবা যায় না।’’
সূর্যের ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ বিরাট কোহলিও। তিনি ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে সূর্যের একটি ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘‘ভাই, তোমাকে সম্মান করি।’’ মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে সূর্যের প্রাক্তন সতীর্থ তথা বর্তমানে রাজস্থান রয়্যালসের বোলিং কোচ লাসিথ মালিঙ্গাও সূর্যের প্রশংসা করেছেন। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার যুবরাজ সিংহ সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘সূর্য অন্য জগতে ব্যাট করে। যেখানে ইচ্ছা সেখানে মারে। ভাবতে পারছি না।’’
সূর্যের কাছেই তাঁদের হারতে হয়েছে, এ কথা মানেন গুজরাতের অধিনায়ক হার্দিক পাণ্ড্য। ম্যাচ হারলেও সূর্যের প্রশংসা শোনা গিয়েছে তাঁর গলাতেও। ওয়াংখেড়েতে হার্দিক বুঝতেই পারছিলেন না সূর্যের বিরুদ্ধে কোথায় ফিল্ডার রাখবেন। হার্দিক বলেছেন, ‘‘টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বের সেরা ব্যাটার সূর্য। ওর বিরুদ্ধে ফিল্ডিং সাজানো খুব কঠিন। যেখানে ফিল্ডার থাকে না সেখানে শট খেলে ও। ফলে প্রতিপক্ষ অধিনায়কও চাপে থাকে।’’
আইপিএলে কমলা টুপির লড়াইয়ে প্রথম তিনে ঢুকে পড়েছেন সূর্য। ১২ ম্যাচে ৪৭৯ রান তাঁর। ৪৩.৫৫ গড় ও ১৯০.৮৩ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন তিনি। সূর্যের আগে রয়েছেন ফ্যাফ ডুপ্লেসি ও যশস্বী জয়সওয়াল। তবে যে ছন্দে তিনি রয়েছেন তাতে মরসুম শেষে কমলা টুপির তালিকায় সবার উপরে পৌঁছে যেতে পারেন সূর্য।