আবার হার নীতীশের কলকাতার। এ বার মুম্বইয়ের কাছে হারল তারা। — ফাইল চিত্র
ব্যাটারদের ব্যর্থতা, দলগঠনে পরিকল্পনার অভাব, জোরে বোলারদের নিয়ন্ত্রণহীন বোলিং। সব মিলিয়ে আরও এক বার আরব সাগরে জয়ের স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল কলকাতার। আরও এক বার শাহরুখ খানের শহরে হারতে হল কলকাতাকে। বেঙ্কটেশ আয়ারের শতরান দিনের শেষে দাম পেল না। রবিবাসরীয় ওয়াংখেড়েতে কলকাতাকে ৫ উইকেটে হারাল মুম্বই। টানা দ্বিতীয় জয় পেল তারা। এ দিকে, কলকাতা টানা দু’টি ম্যাচে হেরে গেল।
মুম্বইয়ের ইনিংসের শুরুটা দেখেই বোঝা গিয়েছিল দিনটা কেমন হতে চলেছে। প্রথম ওভারে উমেশ যাদব ২ রান দিলেন বটে। কিন্তু দ্বিতীয় ওভার থেকে স্বমূর্তি ধারণ করলেন ঈশান কিশন এবং রোহিত শর্মা। শার্দূল ঠাকুরের ওভার থেকে এল ১৬। তাঁকে দেখে তৃতীয় ওভারে উমেশও নিয়ন্ত্রণহীন বোলিং শুরু করলেন। তাঁর ওভার থেকে ১৭ রান এল।
ওয়াংখেড়ে জুড়ে তখন তাণ্ডব চালাচ্ছেন ঈশান। মাঠের বিভিন্ন দিকে তাঁর মারা শট উড়ে যাচ্ছে। পাল্লা দিয়ে রান করছিলেন রোহিতও। পাওয়ার প্লে-তেই মুম্বইয়ের স্কোরবোর্ডে ৭২ রান উঠে যায়। ম্যাচের ভবিষ্যৎ ওখানেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। অর্ধশতরান করে ঈশান ফিরতেও রান তোলার গতি কমেনি। সূর্যকুমার যাদব যেন কলকাতা ম্যাচকেই বেছে নিয়েছিলেন রানে ফেরার জন্য। পুরনো দলের বিরুদ্ধে আরও এক বার জ্বলে উঠতে দেখা গেল তাঁকে। অর্ধশতরানের আগে আউট হলেও তত ক্ষণে জয়ের ভিত তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি।
তার আগে অবশ্য ওয়াংখেড়ে জুড়ে ছিলেন শুধুই বেঙ্কটেশ এবং বেঙ্কটেশ। ইডব্লিউএ দিবস উপলক্ষে নানা পরিকল্পনা করেছিল মুম্বই। গোটা গ্যালারির রং নীল। পাশেই নীল সমুদ্র। গ্যালারি এবং সমুদ্রে একইসঙ্গে ঢেউ তুলে দিলেন কলকাতার ব্যাটার। ব্যাট হাতে এমনিতেই তিনি ধারাবাহিক। কিন্তু রবিবার নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন বেঙ্কটেশ। মুম্বইয়ের কোনও বোলারই তাঁর সামনে টিকতে পারেননি। অফসাইডে হোক লেগসাইডে, সব দিকেই সমান স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে শট মারলেন বেঙ্কটেশ।
কলকাতার ওপেনিং জুটি নিয়ে সমস্যা কবে মিটবে কেউ জানেন না। এ দিনও রহমানুল্লা গুরবাজ এবং নারায়ণ জগদীশন ওপেন করলেন। চলতি মরসুমে টানা তৃতীয় বার। কিন্তু সাফল্য এল না। জগদীশন যে ওপেন করার মতো যোগ্য ক্রিকেটারই নন, এটা হয়তো কেকেআরের বোঝার সময় এসেছে। এ দিন পাঁচটি বল খেলে খাতাই খুলতে পারলেন না। একই কথা বলা যেতে পারে গুরবাজের ক্ষেত্রেও। রিজার্ভ বেঞ্চে লিটন দাসের মতো ক্রিকেটার বসে রয়েছেন। তা সত্ত্বেও খারাপ ছন্দে থাকা গুরবাজকে প্রতিটি ম্যাচে খেলিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একটি অর্ধশতরান ছাড়া পাঁচটি ম্যাচে কেকেআরের হয়ে কিছুই করতে পারেননি তিনি।
বেঙ্কটেশ না থাকলে এ দিন কেকেআরের রান ভদ্রস্থ জায়গায় পৌঁছত কিনা বলা মুশকিল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান আন্দ্রে রাসেলের ২১। একার হাতে তিনি এগিয়ে নিয়ে গেলেন কেকেআরের ইনিংসকে। কলকাতার ইনিংসে ১০টা ছক্কার মধ্যে ৯টাই তাঁর। মুম্বই বোলারদের একার হাতে শাসন করলেন তিনি।
শুরুটা ভাল হয়েছিল। কিন্তু মাঝের দিকে ওভারে হঠাৎই কলকাতার রানের গতি অনেকটা কমে গেল। শতরানের কাছাকাছি এসে বেঙ্কটেশ আর ঝুঁকি নিয়ে শট খেলতে চাননি। খুচরো রান করার দিকে নজর দিয়েছিলেন। উল্টো দিকে থাকা রিঙ্কু সিংহকেও আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে দেখা গেল না। রিঙ্কু এ দিন হতাশই করলেন। স্বভাববিরোধী ক্রিকেট খেললেন তিনি। তাঁর ব্যাট থেকে চার-ছয়ের প্রত্যাশাই করেন কেকেআরের সমর্থকরা। সেখানে রিঙ্কু ১৮টি বল খেলে মাত্র ২টি চার মেরেছেন।
পরের দিকে রাসেলের মার সত্ত্বেও দুশো পেরোতে পারল না কলকাতা। ওয়াংখেড়ের মতো ছোট মাঠে এই স্কোর মোটেই ভরসা দেওয়ার মতো ছিল না। তা হয়ওনি।