CSK

CSK: বাবা পাঠিয়েছিলেন পড়তে, মুকেশ ফেরেন সিএসকে-র চুক্তি হাতে নিয়ে

ক্লাব ক্রিকেটের একটি ম্যাচে ঋতুরাজ গায়কোয়াড় ও মহারাষ্ট্রের তৎকালীন অধিনায়ক অঙ্কিত বাওনের উইকেট নেন মুকেশ

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২২ ০৮:২৮
Share:

উদয়: বল হাতে চেন্নাইয়ের নতুন আবিষ্কার মুকেশ। আইপিএল

ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় আগ্রহ ছিল তাঁর। রাজস্থানের ভিলওয়ারা জেলায় সে রকম ভাল স্কুল ছিল না। তাই জয়পুরের একটি আবাসিক স্কুলে পাঠানো হয় তাঁকে। সেখানেই টেনিস বলে প্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু। অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পরে পুণের একটি স্কুলে ভর্তি হয়ে যান। বাবার স্বপ্ন ছিল, ছেলে বড় হয়ে কোনও সরকারি চাকরি করবে। কিন্তু ভবিষ্যৎ কাকে কোথায় নিয়ে যায়, কে বলতে পারেন? মুকেশ চৌধরিও ভাবতে পারেননি তাঁর জীবনের গল্পটা এত সুন্দর ভাবে লেখা হবে। তিনি হয়ে উঠবেন চেন্নাই সুপার কিংস দলের মূল পেসার।

Advertisement

পুণেয় পড়তে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেটের স্বাদ পান বাঁ-হাতি পেসার। কলেজের একটি ম্যাচে তাঁর বোলিং দেখে টোয়েন্টি টু ইয়ার্ডস ক্রিকেট ক্যাম্পে নিয়ে যান তাঁর এক বন্ধু। সেখানের মেন্টর ছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার সুরেন্দ্র ভাবে। মুকেশের বোলিং দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর গতি খুব একটা নজর কাড়েনি। কিন্তু দু’দিকেই সহজে সুইং করাতে পারতেন তিনি। সেই ক্যাম্পেই মরসুম শেষ হয়ে যাওয়ার পরে অনুশীলন করতেন রাহুল ত্রিপাঠী। মুকেশের বোলিং খেলার পরে সুরেন্দ্র স্যরের কাছে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, ছেলেটি কোন জায়গা থেকে এসেছেন? আনন্দবাজারকে শনিবার সুরেন্দ্র ভাবে বলছিলেন, ‘‘পুণের ক্লাব ক্রিকেটে ওকে ভাল দল পাইয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল ত্রিপাঠীই। ডেকান জিমখানা ক্লাবে নিয়ে যায় ২০১৫ সালে। দু’বছরের মধ্যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে মুকেশ।’’

ক্লাব ক্রিকেটের একটি ম্যাচে ঋতুরাজ গায়কোয়াড় ও মহারাষ্ট্রের তৎকালীন অধিনায়ক অঙ্কিত বাওনের উইকেট নেন মুকেশ। সেই ম্যাচে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচকেরা। ২০১৭ সালের রঞ্জি ট্রফি দলে নির্দ্বিধায় নিয়ে নেওয়া হয় তাঁকে। বাড়িতে কেউ জানতেন না যে, মহারাষ্ট্রের হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলবেন তিনি। প্রত্যেকে জানতেন ছেলে কলেজে পড়ছে। কিন্তু তিনি যে নতুন জীবনের দিকে প্রথম ধাপ এগিয়েছেন, তার আন্দাজ ছিল না কারও কাছে। সুরেন্দ্র ভাবের কথায়, ‘‘নিয়মিত অনুশীলনে এলেও পড়াশোনায় ফাঁকি দিত না কখনও। মুকেশের সঙ্গে ওর দুই দাদাও আসত অনুশীলনে। তারাও বাঁ-হাতি পেসার। কিন্তু মুকেশের মতো প্রতিভা কারও মধ্যে দেখা যায়নি।’’

Advertisement

রাজ্য দলে প্রথম দিন অনুশীলনে যাওয়ার পরে তৎকালীন অধিনায়ক অঙ্কিত তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন গতি বাড়ানোর। সে দিন থেকে শুরু হয় মুকেশের নতুন পরীক্ষা। জিমে আগে সে ভাবে সময় কাটাতেন না। কিন্তু নিয়মিত রাজ্য দলে খেলার জন্য গতি বাড়াতেই হত তাঁকে। অঙ্কিত বলছিলেন, ‘‘ওর মতো পরিশ্রমী ক্রিকেটার খুব কম দেখেছি। এক সময় দেখতাম প্রচুর পরিশ্রম করলেও ওর গতি বাড়ছে না। জানতে পারি, একা একটি ফ্ল্যাটে থাকে। ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়াও করে না। প্রতিবেশী এক দিদি তা জানতে পারেন। তিনিই মুকেশের দেখাশোনার দায়িত্ব নেন।’’

২০২০ সালে সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদের নেট বোলার হিসেবে শুরু হয় তাঁর নতুন যাত্রা। প্রথম বছরে সে ভাবে নজর কাড়তে পারেননি। ২০২১ সালে তাঁকে নেট বোলার হিসেবে ডাকে চেন্নাই সুপার কিংস। কিন্তু তাঁর যাওয়ার কোনও ইচ্ছাই ছিল না। অঙ্কিত বলছিলেন, ‘‘আমরা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যখন ও বলল নেট বোলার হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে যাবে না। সুরেন্দ্র স্যর ওকে বোঝান, ভাল বোলিং করলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নজরে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’

বিদেশে নেট বোলার হিসেবে যাওয়ার খবর বাড়িতে পৌঁছনো মাত্র মুকেশের বাবা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ভাবতেন ছেলে হয়তো সময় কাটানোর জন্য ক্রিকেট খেলেন। কিন্তু মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শিবিরে বল করতে যাবেন তাঁর ছেলে, সে সম্পর্কে কোনও আন্দাজই ছিল না। মুকেশের বাবা গোপাল চৌধরির কথায়, ‘‘ভাবতেই পারিনি ওকে বিদেশে খেলতে যেতে হবে। বাড়িতে ফিরে বলেছিল সিএসকে-তে পরের বার খেলতে পারে। সেটাই হল। মুকেশ এখন চেন্নাই সুপার কিংসের তারকা পেসার। পাঠিয়েছিলাম পড়তে, ফিরল ক্রিকেটার হয়ে।’’

আইপিএলে এখনও পর্যন্ত ১১ ম্যাচে ১৬ উইকেট রয়েছে মুকেশের। জাতীয় দলের দরজা তাঁর জন্য খোলে কি না, তা সময়ই বলবে। সুরেন্দ্র ভাবে যদিও বলে দিলেন, ‘‘সেই মুহূর্তের জন্যও বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement