টান টান ম্যাচ জিতে মুখে হাসি মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক রোহিত শর্মার। —ফাইল চিত্র
আরও এক বার রিঙ্কু সিংহকে মনে করালেন টিম ডেভিড। গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে শেষ পাঁচ বলে পাঁচ ছক্কা মেরে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে জিতিয়েছিলেন রিঙ্কু। আর আইপিএলের ১০০০তম ম্যাচে তিন ছক্কা মেরে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে জেতালেন ডেভিড। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৭ রান। জেসন হোল্ডারের প্রথম তিন বলেই খেলা শেষ করে দিলেন ডেভিড। এই প্রথম ওয়াংখেড়েতে ২০০-র বেশি রান তাড়া করে জিতল কোনও দল। শুরুটা যদি সূর্যকুমার যাদব করে থাকেন তা হলে শেষটা করলেন ডেভিড। রোহিত শর্মার মুখে হাসি ফোটালেন তিনি।
জলে গেল যশস্বী জয়সওয়ালের দুরন্ত শতরান। প্রথমে ব্যাট করে যশস্বীর ব্যাটে ভর করে ২১২ রান করেছিল রাজস্থান। দেখে মনে হচ্ছিল, এই ম্যাচ জিতে পয়েন্ট তালিকায় সবার উপরে জায়গা করে নেবে রাজস্থান। কিন্তু সেটা হল না। টান টান ম্যাচ শেষ মুহূর্তে জিতে পয়েন্ট তালিকায় কেকেআরকে টপকে সাত নম্বরে উঠে এল মুম্বই।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন রাজস্থানের অধিনায়ক সঞ্জু। যশস্বী প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন। কিন্তু অপর প্রান্তে থাকা জস বাটলার ছন্দে ছিলেন না। তার ফলে রান তোলার পুরো দায়িত্ব গিয়ে পড়ে যশস্বীর কাঁধে। তিনি অবশ্য নিজের দায়িত্ব ভাল ভাবে পালন করছিলেন। তাঁর ব্যাটে ভর করে এগোচ্ছিল রাজস্থানের ইনিংস।
পাওয়ার প্লে-তে উইকেট না পড়লেও অষ্টম ওভারে বাটলারকে আউট করেন পীযূষ চাওলা। ১৮ রান করেন গত মরসুমের কমলা টুপির মালিক। তার মধ্যেই মাত্র ৩১ বলে নিজের অর্ধশতরান করেন যশস্বী।
অন্য প্রান্তে নিয়মিত উইকেট পড়ছিল। আরও একটি ম্যাচে ব্যর্থ সঞ্জু। দেবদত্ত পড়িক্কল, জেসন হোল্ডার, শিমরন হেটমায়ার— কেউ রান পাননি। ফলে একা লড়াই করতে হচ্ছিল যশস্বীকে।
দেখে মনে হচ্ছিল, বাকি সব ব্যাটার এক পিচে খেলছেন আর যশস্বী অন্য পিচে। ধীরে ধীরে নিজের শতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন বাঁ হাতি ওপেনার। রাইলি মেরিডিথকে পর পর তিন বলে একটি ছক্কা ও দু’টি চার মেরে মাত্র ৫৩ বলে নিজের শতরান করলেন যশস্বী। আইপিএলে এটিই তাঁর প্রথম শতরান। তার পরেও ব্যাট চলতে তাকে যশস্বীর। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কোনও বোলারকে রেয়াত করেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ৬২ বলে ১২৪ রান করে আউট হন তিনি। ২১২ রানে শেষ হয় রাজস্থানের ইনিংস।
রাজস্থানের রান ২০০ পার করাতে বড় ভূমিকা নিলেন মুম্বইয়ের বোলাররাও। অতিরিক্ত হিসাবে ২৫ রান দিলেন তাঁরা। বোলারদের উপর মাঝেমধ্যেই বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন রোহিত। বোঝা যাচ্ছিল, বোলিং পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট নন তিনি।
মুম্বইয়ের রান তাড়া করার শুরুটা ভাল হয়নি। মাত্র ৩ রান করে সন্দীপ শর্মার বলে বোল্ড হন রোহিত। তিন নম্বরে নামা গ্রিনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন অপর ওপেনার ঈশান কিশন। দু’জনে পাওয়ার প্লে-র সুবিধা কাজে লাগান। দ্রুত রান তুলতে থাকেন তাঁরা।
রাজস্থানকে খেলায় ফেরান রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ২৮ রানের মাথায় ঈশান ও ৪৪ রানের মাথায় গ্রিনকে আউট করেন তিনি। দুই ব্যাটার আউট হওয়ার পরে মনে হচ্ছিল ম্যাচ হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে মুম্বইয়ের। কিন্তু তখনই নিজের জাত চেনালেন সূর্যকুমার।
ছক্কা মেরে নিজের ইনিংস শুরু করেন সূর্য। তার পরে তাঁকে আটকানো যায়নি। তরুণ কুলদীপ সেনের এক ওভারে ২০ রান নিলেন তিনি। পরিচিত ছন্দে উইকেটের পিছনে কব্জির মোচড়ে সহজেই চার-ছক্কা মারছিলেন তিনি। মাঠের চার দিকে শট খেলছিলেন। তাঁকে সঙ্গ দেন তিলক বর্মা। মাত্র ২৪ বলে অর্ধশতরান করেন সূর্য।
শেষ ৬ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৭২ রান। সূর্যের ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল মুম্বই। কিন্তু ৫৫ রানের মাথায় পিছন দিকে দৌড়ে দুরন্ত ক্যাচে সূর্যকে সাজঘরে ফেরান সন্দীপ শর্মা। এ বারের আইপিএলের সেরা ক্যাচ ধরলেন তিনি।
সূর্য ফিরলেও মুম্বইয়ের রানের গতি কমেনি। ডেভিড প্রথম বল থেকেই বড় শট খেলা শুরু করেন। গায়ের জোর কাজে লাগিয়ে চার দিকে বড় শট মারছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তিন বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতিয়ে দিলেন তিনি। মাত্র ১৪ বলে ৪৫ রান করে অপরাজিত থাকলেন ডেভিড।